আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে রাজ্যের একাধিক প্রান্তে রামনবমীতে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করেছে গেরুয়া শিবির। একাধিক নেতার হাতে অস্ত্র আস্ফালন লক্ষ্য করা গিয়েছে। এজন্য কলকাতা হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার অভিযোগ উঠেছে একাধিক বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে। এবিষয়ে বিজেপি নেতা রথীন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধেই আদালত নির্দেশ অবমাননার অভিযোগ উঠেছে। কারণ তাঁর নেতৃত্বে একটি মিছিলে অস্ত্র সহ মিছিল করার অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে বারাসতের মিছিলে ছিলেন সুকান্ত মজুমদার ও মিঠুন চক্রবর্তী। সেখানেও একই চিত্র। অস্ত্র হাতে জমায়েত করতে দেখা যায় বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের।
প্রসঙ্গত রবিবার সকাল থেকে রামনবমী পালনে মেতে উঠেছে বঙ্গ বিজেপি। বিভিন্ন জায়গায় রামনবমীর শোভাযাত্রায় যোগ দিয়েছেন রাজ্য বিজেপির হেভিওয়েট নেতৃত্বরা। মিছিলে কারো হাতে লাঠি আবার কারো হাতে তরোয়ালও দেখা গিয়েছে। সেই সঙ্গে এদিন হয়েছে নন্দীগ্রামের রামমন্দিরের শিলান্যাসও। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই মাঠে নেমে পড়েন অভিনেতা তথা বিজেপি নেতৃত্ব মিঠুন চক্রবর্তী। বারাসতে রামনবমীর শোভাযাত্রায় ‘অভিনেতার ভঙ্গি’তেই যোগ দেন তিনি। তাঁর সঙ্গী হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। বারাসতে রামনবমীর শোভাযাত্রা ঘিরে যতটা না উন্মাদনা ছিল, তার চেয়ে বেশি ছিল মিঠুন এবং সুকান্ত মজুমদারকে দেখার জন্য। দুপুর থেকেই রাস্তার দুই ধারে জমা হতে থাকেন সাধারণ মানুষজন। ভিড় বাড়তে থাকে বিকেল হতেই। এদিন একটি হুড খোলা গাড়িতে চেপে ‘হিরোর মতো’ এন্ট্রি নেন তাঁরা। বিজেপির রাজ্য সভাপতির হাতে দেখা যায় বিরাট গদা। হুড খোলা গাড়িতে করে সেই গদা ঘুরিয়েই শোভাযাত্রায় ঘোরেন তিনি। হাত বাড়িয়ে দেন উচ্ছ্বসিত জনতার দিকেও। এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল, এরপরই বদলে যায় পরিস্থিতি। অস্ত্র হাতে সমর্থকদের জমায়েতের অভিযোগ উঠতেই সরগরম হয়ে ওঠে এলাকা।
বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমের খবরে প্রকাশ, এদিন বিজেপির একটি মিছিলে ছিলেন হাওড়া সদর লোকসভার বিজেপি প্রার্থী রথীন চক্রবর্তী এবং হাওড়া সদরের বিজেপি সভাপতি রামপ্রসাদ ভট্টাচার্য। এ দিন সকালে মধ্য হাওড়া থেকে বেরনো বিজেপি সদর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীর ওই মিছিলটি নেতাজি সুভাষ রোড দিয়ে যাচ্ছিল। তখন সভাপতি রামপ্রসাদ ভট্টাচার্যের হাতে তরোয়াল দেখা যায়। তবে বিষয়টি নিয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রামপ্রসাদ বাবু। তাঁর কথায়, ‘রাম আমাদের গর্ব এবং অহঙ্কার। তাই রাম নবমীর দিন আমরা পথে নেমেছি। তবে এটি অস্ত্র মিছিল নয়, এটা প্রতীকী।’ রথীন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘প্রাচীন ঐতিহ্য অনুযায়ী রামনবমীতে অস্ত্র পুজো দিতে হয়। তাই হয়তো কেউ সঙ্গে নিতে পারেন। অস্ত্র প্রদর্শন করার অভিযোগ ঠিক নয়।’
শুধু তাই নয়, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের একাধিক নিউজ ক্লিপে দেখা গেছে, বিভিন্ন জায়গায় মিছিলে অংশগ্রহণকারী বিজেপির নেতা ও কর্মীরা তাঁরা অস্ত্র যুদ্ধ প্রদর্শন করছেন।
রামনবমী ঘিরে প্রস্তুত ছিল পুলিশ-প্রশাসন। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থেকে ড্রোন নজরদারি, পুলিশি নিরাপত্তায় খামতি ছিল না একটুও। সে কারণেই কোনো হিংসাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি বাংলার কোনো প্রান্তেই। সর্বোপরি বারাসতেও সৃষ্টি হয়নি উত্তেজনা। এ দিন উত্তর হাওড়ার মহাবীর চক থেকে বজরংবলী মন্দির পর্যন্ত বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বা অঞ্জনী পুত্র সেনার পাশাপাশি তৃণমূলের তরফেও রামনবমীর শোভাযাত্রা বেরয়। ওই মিছিলে যোগ দেন তৃণমূল সদরের প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, বালির বিধায়ক রানা চট্টোপাধ্যায়, অরূপ রায়-সহ তৃণমূল নেতৃত্ব। এ দিন বিজেপির মিছিলে অস্ত্র নিয়ে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে তৃণমূলের বক্তব্য, হাওড়ায় গোলমাল পাকানোর জন্য ওরা অস্ত্র নিয়ে মিছিল করছে।
উল্লেখ্য, রাজ্য জুড়ে রামনবমী পালনের অনুমতি দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। পূর্বের বিরূপ অভিজ্ঞতার জন্য সেই সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়েছিল কিছু শর্তও। সেই তালিকায় ছিল অস্ত্র হাতে রামনবমীর মিছিলে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা। বারাসতের এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী সমর্থকদের একাংশ হাইকোর্টের নির্দেশকে কার্যত বুড়ো আঙ্গুল দেখাল এদিন। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কীভাবে পুলিশের চোখ এড়িয়ে অস্ত্র হাতে মিছিলে পৌঁছল সমর্থকদের একাংশ, এখন সেই নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। এদিন তরোয়াল হাতে নাচতে পর্যন্ত দেখা যায় সমর্থকদের একাংশকে।
পাশাপাশি মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই ‘নকল’ ত্রিশূল এবং তলোয়ার হাতেও যোগদান করেছিলেন বলে জানা গিয়েছে। যদিও এ বিষয়ে গেরুয়া শিবিরের তরফ থেকে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।