তৃণমূল প্রার্থীর সঙ্গে হাসিমুখে বিজেপির বারলা, শীঘ্রই দলবদল?

সোমবার দেখা গিয়েছিল তৃণমূলের এক রাজ্য সম্পাদক ও জেলা মুখপাত্রের সঙ্গে। আর বুধবার আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন সাংসদ তথা বিজেপি নেতা জন বারলার সঙ্গে দেখা গেল তৃণমূল প্রার্থী জয়প্রকাশ টোপ্পোকে। বানারহাট ব্লকের বিন্নাগুড়িতে তৃণমূল প্রার্থীর সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতে দেখা যায় বারলাকে। জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি তথা তৃণমূল নেত্রী সীমা চৌধুরীর ছিলেন সেখানে।

এখানেই শেষ নয়। বুধবার রাতে তৃণমূল পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য প্রভা কুজুর লাকরার বাড়িতে যান বারলা। সূত্রের খবর, সেখানে এক বৈঠকেও যোগ দেন প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ। তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি মহুয়া গোপ অবশ্য এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। অন্যদিকে প্রাক্তন বিজেপি সাংসদের দাবি, এখনও পর্যন্ত দল পরিবর্তনের কথা ভাবেননি। আপাতত বিষয়টিকে সৌজন্য সাক্ষাৎ বলছে দু’পক্ষ।

দল পরিবর্তনের জল্পনা নিয়ে মুখ খুলেছেন বারলা। তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত দল পরিবর্তনের কথা ভাবিনি। কিছুটা সাসপেন্স রেখে বারলার মন্তব্য, আমি এখন না এখানে, না ওখানে। বিজেপির জেলা নেতৃত্বকে অবশ্য আক্রমণ করতে ছাড়েননি তিনি। বারলার কথায়, এরকম নেতৃত্বের সঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়। নেতৃত্ব এরকম থাকলে ডুয়ার্সে খারাপ ফল করার সম্ভাবনা বিজেপির। ওয়ান ম্যান আর্মি হিসেবে জেলাকে চালাচ্ছে।


এর আগে সোমবার বিকেলে বারলার বানারহাটের লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানের বাড়িতে উপস্থিত হন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক দীপেন প্রামাণিক ও তৃণমূলের জেলার মুখপাত্র দুলাল দেবনাথ। বেশ কয়েক ঘণ্টা বৈঠক চলে। বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে এসে দুলাল দেবনাথ বলেন, উনি আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন সাংসদ। বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা। উপনির্বাচনের আগে ওনার সঙ্গে দেখা করার বিষয়টি নিতান্তই সৌজন্য সাক্ষাৎ।

সেদিনের বৈঠক শেষে জন বারলা আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ মনোজ টিগগার বিরুদ্ধের ক্ষোভ উগড়ে দেন। তিনি বলেন, এখানে ওয়ান ম্যান আর্মি চলছে। কিন্তু তাতেও কি দল টিকিয়ে রাখা গেল? আমার ভাই বিজেপি কার্যকর্তা হওয়া সত্ত্বেও মাদারিহাট থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। একাই জেলা চালালে কীভাবে চলবে। কোনও নেতারা নামতে পারছেন না। এভাবে তো চলবে না। ওরা যদি নিজের চেষ্টায় আমাকে ছাড়া জিততে পারে, তাহলে তো খুবই ভালো।

জল বারলা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসবেন কি না, জানতে চাওয়া হলে তৃণমূলের আলিপুরদুয়ারের মুখপাত্র বলেন, সময় কথা বলবে। আর এ বিষয়ে যা বলার দলের রাজ্য নেতৃত্বে বলবে।

রাজ্যের যে ৬ কেন্দ্রে ১৩ নভেম্বর উপনির্বাচন রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম মাদারিহাট। মাদারিহাট বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে জলপাইগুড়ি জেলার বানারহাট ব্লকের দুটো গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। সেগুলি হল – বিন্নাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত ও সাঁকোয়াঝোরা গ্রাম পঞ্চায়েত। জন বারলার এই দুটি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রভাব রয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বারলা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে গেলে এই দুটি পঞ্চায়েতে ভালো ফল করবে রাজ্যের শাসকদল।

২০ অক্টোবর জন বারলার বোন মেরিনা কুজুর যোগ দেন তৃণমূলে। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে সুলকাপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে তিনি জয়ী হয়েছিলেন। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে অবশ্য তাঁকে টিকিট দেয়নি বিজেপি। মেরিনার হাতে তৃণমূলের দলীয় পতাকা তুলে দেন দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। মেরিনা কুজুর বিজেপির তফশিলি উপজাতি বা এসটি মোর্চার জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি পদে ছিলেন।