জগদ্দলে গুলি চলার ঘটনায় পুলিশি তলব এড়ালেন বিজেপি নেতা অর্জুন সিং। বৃহস্পতিবার সকালে অর্জুনকে তলব করে জগদ্দল থানার পুলিশ। বিজেপি নেতা অবশ্য তাতে সাড়া দেননি। বেলা গড়ালে ফের অর্জুনকে নোটিস দেয় পুলিশ। যদিও তিনি পুলিশের কাছে যাননি। বুধবার রাতে অর্জুনের বাড়ির সামনে গুলি-বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। জখম হন এক যুবক। জোড়াফুল শিবিরের দাবি, ওই যুবক তাদের দলের কর্মী। তৃণমূলের বক্তব্য, অর্জুন নিজে গুলি চালিয়েছেন। অন্যদিকে অর্জুনের বক্তব্য, তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালান তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী।
বিজেপি নেতা অর্জুন সিং বলেন, ‘এলাকায় অনেক সিসিটিভি ফুটেজ আছে। সেগুলি খতিয়ে দেখুক পুলিশ। তাহলেই বোঝা যাবে কে গুলি চালিয়েছেন। আমার এত খারাপ অবস্থা হয়নি যে আমাকে নিজের হাতে গুলি চালাতে হবে।’ জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম বলেন, ‘অর্জুন সিংহের লোকজন মেঘনা মিলের ভিতর এক শ্রমিককে মারধর করেন। এর পরেই উত্তেজনা বাড়ে। উনি নিজেই গুলি চালিয়েছেন।’
অর্জুনকে গ্রেপ্তারের দাবিতে সরব হয়েছেন সোমনাথ শ্যাম। তৃণমূল বিধায়ক বলেন, ‘ব্যারাকপুরের বাসিন্দারা আর এই গুন্ডাগিরি সহ্য করবে না। অর্জুন সারাক্ষণ মিথ্যা বলেন। এবার আর বাঁচতে পারবেন না। ওঁকে গ্রেপ্তার করা হোক।’
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে জগদ্দলে ফের অশান্তি ছড়ায়। আটচালা বাগান রোড এলাকায় এক জুটমিল কর্মীর বাড়িতে বোমা পড়ে। অল্পের জন্য রক্ষা পান ওই কর্মী। বোমার জেরে বাড়িটির টালির চালের একাংশ ভেঙে গিয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় বিরাট পুলিশ বাহিনী। এলাকায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন থাকার পরও কী ভাবে এমন বোমাবাজি, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
প্রসঙ্গত, বুধবার মেঘনা মিলের শ্রমিকদের মধ্যে অশান্তি হচ্ছিল। খবর পেয়ে সেখানে যান ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের ছেলে, নমিত সিং। এরপরই বচসা বড় আকার নেয়। গুলি চলে বলে অভিযোগ। আচমকা দু’রাউন্ড গুলির শব্দ পান দাবি করেছেন অর্জুন সিং। গুলির আঘাতে জখম হন এক যুবক। আহত যুবককে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। গুলি চলার কিছুক্ষণ পর ওই এলাকায় আবার বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। এই গুলি-বোমাবাজির ঘটনার সূত্রেই অর্জুনকে ডেকে পাঠিয়েছিল পুলিশ।
এই প্রসঙ্গে অর্জুন সিং বলেন, ‘গুলি-বোমাবাজির ঘটনার পর রাতেই মেল করে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করি। পরে জানতে পারি, রাতে আমার বিরুদ্ধেও একটা এফআইআর হয়েছে। পুলিশ আমার অভিযোগ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তার ভিত্তিতেই আমায় ডেকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু আমি যাইনি।’
প্রসঙ্গত, ভাটপাড়া-জগদ্দল অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে দাপট ছিল অর্জুন সিংয়ের। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, এলাকা দখলে রাখতে প্রায়শই বোমাবাজি করত অর্জুনের দলবল। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে অর্জুনের ছেলে পবন সিং ভাটপাড়া থেকে বিজেপির টিকিটে জিতে বিধায়ক হন। তারপর দাপট আরও বাড়ে অর্জুনের। তবে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ব্যারাকপুর আসনে তৃণমূলের পার্থ ভৌমিকের কাছে হেরে যান অর্জুন সিং। এর ফলে ভাটপাড়া অঞ্চলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন তিনি। তৃণমূলের অভিযোগ, ক্ষমতা হারানোর পর থেকেই এলাকায় অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করছেন অর্জুন সিং। অবিলম্বে বিজেপি নেতাকে গ্রেপ্তার করার দাবি তুলেছে জোড়াফুল শিবির।