১০০ দিনের কাজে রাজ্যজুড়ে ইডি অভিযানের পিছনে বিজেপি যোগ

কলকাতা, ৬ ফেব্রুয়ারি: শুভেন্দুর দিল্লি সফরের পরেই আজ রাজ্যে ছয় জায়গায় ইডি অভিযান। তোলপাড় রাজ্য। এই নিয়ে ফের সোচ্চার হল তৃণমূল। ইডি-কে রাজনৈতিক দল নিয়ন্ত্রণ করে বলে নিশানা করল রাজ্যের শাসক দল। মমতার বাতিল হওয়া দিল্লি সফরের গুঞ্জনের মধ্যেই গতকালই আগে ভাগে দিল্লিতে যান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দেখা করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে। বিশেষভাবে দেখা করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সঙ্গে। সেই সাক্ষাৎপর্ব মেটার পরেই হুঙ্কার ছাড়েন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। বলেন,’আগামী দিনে বাংলা দেখবে।’

কিন্তু সেই দেখার জন্য বেশি দিন অপেক্ষা করতে হল না। রাতের অন্ধকার কাটতে না কাটতেই শুরু হয়ে যায় রাজ্যজুড়ে ইডি অভিযান। শুরু হয় ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির তদন্তে ইডির অলআউট তল্লাশি। এরপরই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল সুর চড়াতে শুরু করে। দলের নেতা-নেত্রীরা বলেন, কেন্দ্র সরকারের নির্দেশে নয়, বিজেপির নির্দেশে চলে ইডি। রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঞ্জা এই নিয়ে সরব হয়েছেন। তিনি বলেন, ইডি তদন্তের নামে এক জায়গায় যেতে গিয়ে ভুল করে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে। গতকাল বিরোধী দলনেতার মন্তব্য এবং আজ ইডির তদন্তের মধ্যে যোগসূত্রের ইঙ্গিত দেন তিনি।

প্রসঙ্গত গতকাল শুভেন্দু দিল্লি থেকে ফেরার পরেই আজ একসঙ্গে রাজ্যের চার জেলার ছয় জায়গায় এই তল্লাশি অভিযান চলে। কলকাতা, হুগলি, ঝাড়গ্রাম ও মুর্শিদাবাদ জেলার সল্টলেক, চন্দননগর, বহরমপুর, ঝাড়গ্রামের একাধিক পঞ্চায়েত প্রতিনিধি ও নেতার বাড়িতে দিনভর তল্লাশি অভিযান চলে। কোথাও কোথাও তল্লাশি অভিযান সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত হয়ে যায়। ১০০ দিনের কাজে ভুয়ো জবকার্ড ব্যবহার করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগের প্রমাণ খুঁজতে এই তল্লাশি অভিযান চালায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। মূলত পঞ্চায়েত কর্মী ও প্রশাসনিক কর্তাদের আবাসনে হানা দেয় ইডি।


বহরমপুরে দুই পঞ্চায়েত কর্মীর বাড়িতে হানা দেয় ইডি। ঝাড়গ্রামে সকাল ৮টা নাগাদ বাছুরডোবায় সরকারি আবাসনে পৌঁছয় ইডি-র ৬ সদস্যের টিম। আবাসনের ব্লক বি-র দোতলায় ডব্লুবিসিএস অফিসার ও সংখ্যালঘু সেলের আধিকারিক শুভ্রাংশু মণ্ডলের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। আবাসন ঘিরে রাখে কেন্দ্রীয় বাহিনী। ঝাড়গ্রাম থানার আইসি বিপ্লব কর্মকারকে সরকারি আধিকারিকের ফ্ল্যাটে ঢুকতে বাধা দেয় ইডি।

এদিন চন্দননগরে নির্মাণ সহায়ক কর্মী সন্দীপ সাধুখাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। বর্তমানে তিনি খানাকুলের জগৎপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক পদে কর্মরত। নিপাট সাদামাটা জীবন-যাপনে অভ্যস্ত সন্দীপের বাড়িতে তল্লাশি অভিযানের ভিডিও টিভির পর্দায় দেখে হতবাক হয়ে যান এলাকাবাসীরা। ধনিয়াখালির বেলমুড়ি পঞ্চায়েতের প্রাক্তন নির্মাণ সহায়ক সন্দীপ সাধুখাঁ এলাকায় খুব শান্ত প্রকৃতির মানুষ বলেই পরিচিত। তাঁর এই যে বিশাল বাড়ি, তাঁর পৈত্রিক সম্পত্তি বলেই দাবি করেন প্রতিবেশীরা। কোনওদিন কোনওরকম অনিয়ম চোখে পড়েনি জানান এলাকাবাসীরা।

এদিন বহরমপুরের বিষ্ণুপুর কালীবাড়ি চত্বরে রথীন দে-র বাড়িতে হানা দেয় ইডি। তিনি নওদার পঞ্চায়েত কর্মী হিসেবে কর্মরত। অভিযোগ, তিনি ১০০ দিনের কাজের দুর্নীতিতে যুক্ত রয়েছেন। ১০০ দিনের দুর্নীতির কাণ্ডে আগেই ইডি হানা চলেছে বিভিন্ন জায়গায়। রথীন দে তিনি নওদার পঞ্চায়েতের সচিব পদে কর্মরত ছিলেন।

আগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে নওদা ও বেলডাঙার বিডিও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। দোষী প্রমাণিত হতেই তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। আগে জেল খেটেছেন। বর্তমানে তিনি চাকরি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন।

এদিন হুগলির ধনেখালির বিডিও সঞ্চয়ন পানের দুটো ফ্ল্যাটেও তল্লাশি চালায় ইডি। এখানেও ১০০ দিনের প্রকল্পের দুর্নীতির অভিযোগে এই তল্লাশি অভিযান চলে। সঞ্জয় পানের বিরুদ্ধে ১০০ দিনের প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে একাধিক ক্ষেত্রে। এছাড়া মুর্শিদাবাদ, চুঁচুড়া, ঝাড়গ্রাম, সল্টলেকের দুটি ফ্ল্যাট সহ ৬টি জায়গায় ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের তল্লাশি অভিযান চালানো হয়।