ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে বিজেপি : মমতা

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo: IANS)

বিজেপির ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান নিয়ে রীতিমতাে রাজ্য রাজনীতি তুলকালাম। ইতিমধ্যে এই ঘটনায় সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও পুলিশের দাবি এর সঙ্গে জয় শ্রীরাম বলার কোনও সম্পর্ক নেই।

নৈহাটির ধর্ণা মঞ্চ থেকে পাল্টা ‘জয়হিন্দ’ স্লোগান তােলার ডাক দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমাে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জয়হিন্দ বাহিনী আগেই গড়ে তুলেছিলেন এবার সেই সংগঠনের ভিত শক্তপােক্ত করাই নয় এর সম্প্রসারণ ঘটানাের জন্য কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সভাপতি করেছেন।

ব্রাত্য বসু, ইন্দ্রনীল সেনের মতাে মন্ত্রীরা এই সংগঠনের গুরু দায়িত্বে রয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর এর সঙ্গে গণেশ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও যুক্ত করেছেন। জয় শ্রীরামকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে যে চাপানউতােরের পরিবেশ তৈরি হয়েছে এমনই এক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে রবিবার ফেসবুকে পােস্ট করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।


তাঁর অভিযােগ বিজেপি ভুল ভাবে জয় শ্রীরামকে ব্যবহার করছে। সেটা ঠিক নয়। ধর্মের সঙ্গে রাজনীতিকে এক করে দিচ্ছে বিজেপি। ভেদাভেদ তৈরির চেষ্টা চলছে। বাংলা সংস্কৃতি একথা বলে না। মানুষ এর বিরােধিত করবে। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেছেন বাংলা রাজা রামমােহন রায় থেকে শুরু করে বিদ্যাসাগর বহু সমাজ সংস্কারকের অন্যতম ভূমি। বাংলা মানে একতা অগ্রগতি ও ইতিবাচক মনােভাব নিয়ে এগিয়ে চলা। কিন্তু বিজেপি এখন সেই বাংলার বদনাম করার চেষ্টা করছে।

কোনও রাজনৈতিক দল তাদের মিছিলে কি স্লোগান ব্যবহার করল তা নিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমাের কোনও সমস্যা নেই বলে সাফ জানিয়েছেন। মমতার কথায়, প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের নিজস্ব স্লোগান রয়েছে। প্রত্যেকে আমরা প্রত্যেকের শ্লোগানকে শ্রদ্ধা করি। বামেদের স্লোগান যেমন ইনক্লাব জিন্দাবাদ, সেরকম অন্য দলেরও শ্লোগান রয়েছে। জয় শ্রীরাম, জয় রাম জি কি, রাম নাম সত্য হ্যায়, এই ধরনের স্লোগানের ধর্মীয় ও সামাজিক একটি প্রেক্ষাপট রয়েছে। আমরা এই ধরনের অবাবেগকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু বিজেপি এই ধরনের ধর্মীয় স্লোগানকে ভুল ভাবে ব্যবহার করছে। বিজেপি রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে মিলিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে একটা বিদ্বেষের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। বলপূর্বক জয় শ্রীরাম স্লোগান চাপিয়ে দেওয়া বাংলার মানুষ ভালােভাবে নেবে না। এর বিরুদ্ধে তৃণমূল তীব্র প্রতিরােধ গড়ে তুলবে।

এদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেসবুক পােস্টের বিষয়ে মুখ খুলেছেন দিলীপ ঘােষও। তিনি বলেছেন, ‘জয় শ্রীরামকে বালির বাঁধ দিয়ে আটকানাে যাবে না। তৃণমূলের কর্মীদের মনােবল ভেঙে গিয়েছে। জয় শ্রীরামের পরিবর্তে জয়হিন্দকে খাড়া করানাের বৃথা চেষ্টা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জয় শ্রীরামকে যারা আটকাতে গিয়েছে তাদের কি অবস্থা হয়েছে গােটা ভারতবর্ষে তা কারও অজানা নয়। মুলায়ম সিংয়ের কি হয়েছে তা তৃণমূল সুপ্রিম ভালােভাবেই জানেন। এ রাজ্যেও জয় শ্রীরামকে আটকানাে যাবে না।

জয় শ্রীরাম নিয়ে এই বিতর্কের মধ্যে বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতা মুকুল রায়ও মুখ খুলেছেন। এদিন কাঁচরাপাড়ায় সাংবাদিকদের মুখােমুখি হয়ে মুকুল বলেন, ধ্বনি নিয়ে এত সমস্যা কেন? কেউ যদি আমাকে দেখে ‘মা মাটি মানুষ’ বলে আমি রেগে যাব কেন? বাংলার সংস্কৃতি বদলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। দেশের প্রধানমন্ত্রীকে কান ধরে উঠবােস, থাপ্পড় মারার মতাে কথা বলা হচ্ছে। আসলে ভারসাম্য হারালে এমনটা হয়।

মুকুল রায় এই শ্লেষের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন রাজ্য মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ব্রাত্য বসু। এদিন বেলেঘাটায় বিধায়ক পরেশ পালের ধর্না মঞ্চে হাজির হয়ে ব্রাত্য বলেন, জয় শ্রীরাম, আল্লাহ আকবর, জয় বাংলা, জয় হিন্দ এই কথাগুলি কি বিজেপির নেতারা উচ্চারণ করবেন। শুধু জয় শ্রীরাম বলে কেন থেমে থাকছেন? আগে সম্প্রদায়, তারপর রাজ্য, তারপর দেশ সবকে নিয়ে একসাথে চলতে হবে। এই যে ধাপ তা বিজেপির বন্ধুরা মানবেন কি?

বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা সাক্ষী মহারাজ জয় শ্রীরাম নিয়ে নিশানা বানিয়েছেন সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি তৃণমূল সুপ্রিমােকে হিরণ্যকশিপুর বংশধর বলে উল্লেখ করেছেন। মন্ত্রী ব্রাত্য বসুও এর সােজা সাপটা জবাব দিয়েছেন। ব্রাত্য বসু বলেছেন, হিরণ্যকশিপুর বংশধর প্রহ্লাদ। তাঁর মতাে ভক্ত খুব কমই রয়েছেন। তিনি অসাম্প্রদায়িক। ফলে সাক্ষী মহারাজ না জেনেই তৃণমূল সুপ্রিমােকে সার্টিফিকেট দিয়ে দিয়েছেন। রাজ্যের পুর ও নগরােন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও জয় শ্রীরাম ধ্বনি যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে তা কাম্য নয় বলে জানিয়েছেন।

বিগত পাঁচ মাস ধরে লােকসভা নির্বাচনের কারণে উন্নয়ন থমকে এমনই এক পরিস্থিতিতে মানুষের অন্যান্য সামাজিক ইস্যু ব্যাকফুটে চলে যাচ্ছে। সেই জায়গায় জয় শ্রীরামের মতাে ধ্বনি নিয়ে যে ধরনের মাতামাতি শুরু হয়েছে রাজ্য জুড়ে শেষ পর্যন্ত এই শব্দ বন্ধ বাংলার ভাগ্যাকাশে কোনদিকে প্রবাহিত করে এখন সেটাই দেখার।