রাজভবন-বিধানসভা বিবাদের উত্তাপ দিল্লির স্পিকার সম্মেলনে পৌঁছে দেবেন বিমান

রাজ্য বনাম রাজ্যপাল সংঘাতে ইতি পড়া তো দূর, বরং সময়ের সঙ্গে তা প্রখর হয়েছে। এবার রাজভবন-বিধানসভার এই খন্ডযুদ্ধের উত্তাপ পৌঁছবে দিল্লি-দরবারেও। কিন্তু কিভাবে? উল্লেখ্য, সোমবার এবং মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে দু’দিনের ‘অল ইন্ডিয়া স্পিকার কনফারেন্স’ অনুষ্ঠিত হবে। লোকসভার পক্ষ থেকে আয়োজিত এই আলোচনাচক্রে দেশের সব রাজ্যের বিধানসভার অধ্যক্ষরা উপস্থিত থাকবেন। আইন প্রণয়ন সংস্থাগুলির ভূমিকা ও উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ- ইত্যাদি হলো এই আলোচনাচক্রের মূল বিষয়। সূত্রের খবর, এই আলোচনাচক্রে অংশ নিতে পারেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়, পরিষদীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু প্রমুখ। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, উপাধ্যক্ষ আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রধান সচিব সুকুমার রায় সহ বিধানসভার পাঁচজন প্রতিনিধি ইতিমধ্যেই দিল্লি পাড়ি দিয়েছেন। এই সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার তরফে রাজভবন তথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের ভূমিকা নিয়ে সুর চড়াতে পারেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দোপাধ্যায়।

মন্ত্রিসভায় রদবদল সংক্রান্ত ফাইলে অনুমোদন দেওয়া হোক কিংবা নবনির্বাচিত বিধায়কদের শপথগ্রহণ পর্ব অথবা বিধানসভার বিলগুলি নিয়ে সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ, সবক্ষেত্রেই কার্যত উল্টো স্রোতে হেঁটেছেন রাজ্যপাল। যার জেরে রাজ্যের বহু প্রশাসনিক কাজে বিলম্ব হয়েছে বলে অভিযোগ রাজ্য সরকারের। এবার এই সকল বিষয়গুলিই আলোচনাচক্রে তুলে ধরতে পারেন বিমান। পাশাপাশি যেভাবে রাজ্যপাল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার কাজে হস্তক্ষেপ করছেন, সেই বিষয়েও সরব হবেন তিনি। অধ্যক্ষের স্পষ্ট অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পাশ হওয়া একগুচ্ছ বিল আটকে রেখেছেন রাজ্যপাল। সোম-মঙ্গলের আলোচনায় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে এই সকল অভিযোগ ছুঁড়ে দিয়ে বিধানসভা এবং রাজভবনের অভ্যন্তরীন সম্পর্কের তিক্ততাকে তুলে ধরতে পারেন বিমান।

প্রসঙ্গত, অতীতেও এইরূপ ঘটনার সাক্ষী থেকেছে ‘অল ইন্ডিয়া স্পিকার কনফারেন্স’। জগদীপ ধনখড় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল থাকাকালীন সময়ে স্পিকার সম্মেলনে যোগ দিয়ে তৎকালীন রাজ্যপাল ধনখড়ের সমালোচনাতেও সরব হয়েছিলেন বিমান।


ঠিক কী কী বিষয়ে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন বিমান? বিধানসভার সচিবালয় সূত্রে খবর, বিধায়কদের বেতন বাড়ানোর জন্য গত বছর অক্টোবর মাসে একদিনের অধিবেশন ডেকেছিলেন স্পিকার। কিন্তু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বেতন সংক্রান্ত বিলে রাজ্যপাল সাক্ষর না করায় বিধানসভার অধিবেশন ডেকেও সেই বিল পাশ করাতে পারেনি সরকার পক্ষ। এমন একটি বিষয় নিয়ে রাজ্যপালের ভূমিকা যে সন্তোষজনক ছিল না, সেই বিষয়টিও স্পিকার সম্মেলনে তুলে ধরতে পারেন বিমান। আবার বিধায়কদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান নিয়েও যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, তারও উল্লেখ করা হতে পারে।

পাশাপাশি সিবিআই এবং ইডির ‘অপ্রয়োজনীয়’ তৎপরতার বিরুদ্ধেও ক্ষোভপ্রকাশ করতে পারেন বিমান। বহুক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্যদের সম্মানহানি হচ্ছে ইডি-সিবিআইয়ের কর্মকাণ্ডে, সে কথাও তুলে ধরা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি রাজ্যপাল বোস মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামাজিক ভাবে বয়কট করেছেন। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, রাজ্যপাল রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হলেও প্রশাসনিক প্রধান মুখ্যমন্ত্রীই। তাই রাজ্যপালের তরফে এমন মন্তব্য করা অনুচিত, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক থেকে শুরু করে প্রশাসনিক মহল। তবে এই বিষয়টি স্পিকার সম্মেলনে উল্লেখ করা হবে কি না, সে বিষয়ে বহুমত রয়েছে। তবে স্পিকার সম্মেলনের পর রাজভবন বনাম বিধানসভার তিক্ততা যে আরও বাড়বে, এমনটাই আন্দাজ করছে বিভিন্ন মহল।