দল নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় হুমায়ুন কবিরকে শোকজ তৃণমূলে

হুমায়ুন কবীর। ফাইল চিত্র।

দল নিয়ে প্রকাশ্যে বিতর্কিত মন্তব্য করায় ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবিরকে শোকজ করল তৃণমূল কংগ্রেস। বুধবার বিধানসভায় এসে শোকজের বিষয়টি জানতে পারেন তিনি। তৃণমূল সূত্রে খবর, তিন দিনের মধ্যে তাঁকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। বুধবার বিধানসভায় এসে হুমায়ুন বলেন, ‘শুনেছি আমাকে শোকজ় করা হয়েছে। আমি হাতে কোনও চিঠি পাইনি। তবে আমার কথায় যদি দলের অস্বস্তি হয়, আমি তার জবাব দেব।’
সোমবার কালীঘাটে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক ছিল। এই বৈঠকে দলের নেতৃত্ব প্রবীণ নেতাদের হাতেই রেখেছেন মমতা। গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ফিরহাদ হাকিম, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়দের। এই নিয়ে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন হুমায়ুন কবির। পাশাপাশি বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন। এছাড়াও তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিশেষ গুরত্ব না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক। অভিষেককে কোণঠাসা করার চেষ্টা হচ্ছে বলেও এদিন সরব হন তিনি। তাঁর কথায়, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যে কয়েকজন ঘিরে রয়েছেন, যে ক’জন নিজেদের পরিকল্পনার মধ্যে রেখেছেন, তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কতটা ভালো চান, পশ্চিমবঙ্গের দীর্ঘমেয়াদি শাসক হিসেবে দেখতে চান, তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, যাঁরা দলটাকে গুলিয়ে দিতে চাইছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নিজের জায়গা ঠিক রাখতে চাইছেন, কানে মন্ত্রণা দিচ্ছেন, ২০২৬ সালে তাঁরা জবাব পাবেন। আমি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নেতা মানি। তৃণমূল যদি আগামীতে আমাকে টিকিট না দেয়, বেঁচে থাকলে অপকর্মের জবাব দেব।’ তিনি আরও বলেন, ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কি কোনও যোগ্যতা নেই? কেন কেউ অভিষেককে কোণঠাসা করবে? কোণঠাসা করার চেষ্টা করবে, আর সেটা কি আমরা মেনে নেব?’
অভিষেককে নেতা মানার মাসুল দিতে হল হুমায়ুনকে। পাশাপাশি ফিরহাদ ও কল্যাণকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করারও জন্যেও দলের রোষের মুখে পড়লেন তিনি।

সোমবার তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, দলের নেতারা যেখানে খুশি যেতে পারেন। কিন্তু দল নিয়ে যা খুশি তাই বলতে পারবেন না। মমতার এই নির্দেশ না মানলে প্রথমে সেই নেতাকে শোকজ করা হবে। পর পর তিন বার কোনও নেতা যদি একই ঘটনা ঘটান, তা হলে ওই নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। তৃণমূল নেত্রীর এই নির্দেশের পর এই প্রথম কোনও নেতাকে শোকজ করা হল।

শোকজের পর হুমায়ুন এদিন স্পষ্ট করে দেন, অভিষেককে নিয়ে তিনি যা বলেছেন তাতে কোনও ভুল নেই। তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতির ময়দানে কাউকে ভয় করি না। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে কথা বললে সেটা শৃঙ্খলাভঙ্গ হয় কি করে? আমার ব্যক্তিগত স্বার্থে কেউ আঘাত করলে আমার মৃত বাবার সঙ্গেও কম্প্রোমাইজ করিনি, সেখানে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বা ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে করার তো প্রশ্নই নেই। হক কথা বলার জন্য দল শোকজ করলে করবে! এর আগে তো ২০১৫ সালে আমাকে বিনা নোটিশে ৬ বছরের জন্য শোকজ করে দেওয়া হয়েছিল। এবারে তবু নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাতে গর্ব অনুভব করছি। বেঁচে থাকলে রাজনীতির ময়দান ছেড়ে কখনও যাব না।’