• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

ভবতােষ সুতার ও সুমনের যুগলবন্দিতে ‘জন্ম’র জয়গান নাকতলা উদয়নে

জন্ম মানেই মাতৃগর্ভ থেকে পৃথিবীর প্রথম আলাে দেখা নয়। জন্মের অর্থ আরও গভীর, আরও ব্যাপক।

দুর্গা প্রতিমা (Photo: iStock)

জন্ম মানেই মাতৃগর্ভ থেকে পৃথিবীর প্রথম আলাে দেখা নয়। জন্মের অর্থ আরও গভীর, আরও ব্যাপক। স্বাধীন স্বত্তা, স্বাধীন মেধার বিকাশেও নবজন্ম লাভ করে মানুষ বলে ব্যাখ্যা দিলেন রাজ্যের প্রাক্তন সাংসদ তথা সঙ্গীত শিল্পী কবির সুমন। বিশিষ্ট শিল্পী ভবতােষ সুতারের সঙ্গে এই ‘জন্ম’র জয়গান গান রচনায় এখন বেশ ব্যস্ত তিনি। তার মধ্যেই ফোনে দৈনিক স্টেটসম্যানের কাছে নিজের ভাবনা ব্যক্ত করলেন জাতীয় পুরষ্কার বিজয়ী সংগীত শিল্পী কবির সুমন।

নাকতলা উদয়নে মাতৃবন্দনায় এবারের থিম সেই ‘জন্ম’ রহস্য। দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরতে যুগলবন্দিতে থাকছেন দুই শিল্পী ভবতােষ সুতার ও কবির সুমন। মূল ভাবনা ভবতােষেরই বলে জানান প্রবীন শিল্পী কবির সুমন। তবে ফোনের বিপরীতে থাকা মানুষটির গলার স্বরে আজও সমান তারুণ্য। কাজের মধ্যে দিয়েই তিনি চির নতুন। একের পর এক নিজের সৃষ্ট রাগ রচনার মধ্যে সময় বার করে এবারে নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের থিম সং লিখে ফেলেছেন তিনি। গীতিকার, সুরকার ও গায়ক তিনিই। এমনকী যন্ত্রানুসঙ্গও তাঁর। ধানী রাগে মন্ডপের আবহ সঙ্গীত থেকে মূল গানটি সুরারােপিত। নিজেকে ‘পেশাদার শিল্পী’ বলতেই স্বাচ্ছন্দ্য বােধ করেন কবির সুমন।

প্রতিযােগিতার বাজারে মন্ডপে মন্ডপে বেশ কিছু বছর ধরেই থিম সং’র প্রধান্য চোখে পড়ছে। এমনকী খােদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একটি বিশিষ্ট পুজো উদ্যোক্তাদের জন্য গান লেখেন। সেখানে কতটা চ্যালেঞ্জিং? কবির সুমন বলেন, আমি কারাের সাথেই চ্যালেঞ্জ নিতে এই কাজ করছি না। ভবতােষ সুতার বড় শিল্পী। আমি তাঁর সাথে কাজ করার সুযােগ পেয়েছি। আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন পেশাদার রাজনীতিক। উনি নিজের ভালােলাগা থেকে গান লেখেন। আর আমি হলাম পেশাদার সংগীত শিল্পী। ওঁনার কথাতেই আমি ভােটে দাঁড়িয়েছিলাম ঠিকই। তবে এখানে কারাের সাথেই কোনও প্রতিযােগিতার প্রশ্ন চলেনা।

অন্যদিকে নিজের ভাবনা নিয়ে শিল্পী ভবতােষ সুতার বলেন, জন্ম ও মৃত্যু আমাদের হাতে নেই। জন্মেছি যেমন মৃত্যুও অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু তার মধ্যেই প্রতিদিন নতুন নতুন করে জন্মানাের সুযােগ পাই আমরা। নিজেদের চেতনার মধ্যে দিয়ে, ভাবনার মধ্যে দিয়ে বােধের জন্ম নেয়। নতুন স্বত্তা, নতুন উপলব্ধির ‘জন্ম’ হয়। জীবন তাই ভঙ্গুর মাটির কলস। হয় সে শূণ্য আসুরিক হতাশায়, নয় সে পূর্ণ গুপ্তধনের প্রত্যাশায়। সময়ের চোরাবালিতে নশ্বর দেহ বিলীন হয়ে যায় ঠিকই কিন্তু মহাবিশ্বের অমৃতকলসে বােধ সংরক্ষিত থেকেই যায়। জন্ম ও মৃত্যুর মাঝখানে থাকা সেই প্রতিনিয়ত নবজন্মর জয়গাথা এবারের নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের থিম বলে উল্লেখ করেন স্রষ্ঠা।

আর হাতে গােনা কয়েকটি দিন। মণ্ডপ থেকে প্রতিমা সজ্জায় শেষ মুহুর্তের তুলির টান দিতে ব্যস্ত শিল্পী। দশ হাজার মাটির কলসি এবার নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের মন্ডপ সজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে। সমস্ত ব্যস্ততার মধ্যেই নিজের কাজ থেকে শুরু করে কবির সুমনকে নিয়ে খােলামেলা ভাব ব্যক্ত করতে দ্বিধা করলেন না অন্যতম বিশিষ্ট শিল্পী ভবতােষ সুতার। যার এক কথায় নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের পুজোতে থিম সং রচনায় রাজি হয়ে গিয়েছেন জাতীয় পুরষ্কার বিজয়ী শিল্পী কবির সুমন। জানালেন খােদ ভবতােষ সুতার। স্বভাবসিদ্ধ ভাবেই এক শিল্পীর কাজ নিয়ে মুখর আরেক শিল্পী।

নাকতলা উদয়ন মানেই রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ডঃ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পুজো সে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কথা হল নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক তথা কাউন্সিলার বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তর সঙ্গেও। পুজো নিয়ে উৎসাহ থেকে উদ্দীপনা তুঙ্গে। তিনি বলেন, মানুষের জন্য প্রত্যেক বার নতুন কাজ করি। এবারেও আমরা সবাই মিলে সেই কাজ করছি। নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের পুজো দেখার জন্য মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে। আমাদের মাতৃপ্রতিমার অভিনবত্বের জন্যই ইকোপার্কে দুটি মূর্তি সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের নির্দেশ দেন খােদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারেও আমরা চমকে দেবাে উৎসবপ্রিয় দর্শনার্থীদের। প্রতিমা থেকে মন্ডপ সজ্জা, আলাের খেলায় এবারও আমরা সকলকে তাক লাগিয়ে দেবাে। যেখানে দুই বিশিষ্ট শিল্পী কবির সুমন ও ভবতােষ সুতার একসাথে কাজে নেমেছেন। সেখানে নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা। পুজোর মেজাজে গােটা নাকতলা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষায়।

তবে শুধু প্রতিমা ও মন্ডপের থিম থেকে থিম সংয়ে অভিনবত্বের পাশাপাশি কলকাতা পুলিশের নগরপাল অনুজ শর্মার কথা মাথায় রেখেও পুজো প্রস্তুতিতে মগ্ন নাকতলা উদয়নের উদ্যোক্তারা। বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে। তাই জলনিকাশি ব্যবস্থার বিষয়টি বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দিকে দেখা হচ্ছে। গােটা মাঠে বহুদিন থেকেই পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল নিকাশির ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানা গেল। কাজেই বৃষ্টির জল জমার আশঙ্কা নেই। পরিবেশ বান্ধব পুজোর বিষয়টিও বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন সকল সদস্য। সব মিলিয়ে পুজোর আয়ােজন নিখুঁত করে সাজিয়ে তুলছে নাকতলা উদয়ন।