সংশােধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে কেন্দ্র রাজ্য সংঘাতের ঢেউ এসে পড়ল প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজেও। কোনও কারণ না দেখিয়েই প্রজাতন্ত্র দিবসের রাজ্যের পাঠানাে ট্যাবলােকে বাতিল করে দিল প্রতিরক্ষা দফতরের সংশ্লিষ্ট বাছাই কমিটি। এই ঘটনাকে কেন্দ্রের ‘নগ্ন প্রতিহিংসা’ হিসেবেই দেখছেন পঞ্চায়েত ও গ্রামােন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখােপাধ্যায়। তৃণমুলের পরিষদীয় মন্ত্রী তাপস রায়ের বক্তব্য এইভাবে কেন্দ্রের জনবিরােধী নীতির বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলনকে থামানাে যাবে না। মানুষ অচিরেই বাংলাকে বিজেপির এইভাবে অপমান করার যােগ্য জবাব দেবে।
প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে প্রতিবারের মতাে এবারও রাজ্য তাদের ট্যাবলাের বিষয়বস্তু সম্পর্কে তথ্য জমা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে। নিয়মানুযায়ী রাজ্যের পাঠানাে প্রস্তাব খতিয়ে দেখে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বাছাই কমিটি। সেই কমিটিতে সাধারণত থাকেন শিল্প, সংস্কৃতি, চিত্র, ভাস্কর্য, ডিজাইন ও দৃশ্যকলা, সঙ্গীত, আর্কিটেকচার, কোরিওগ্রাফি ইত্যাদি বিভাগের অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ। বিভিন্ন রাজ্য, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের পাঠানাে প্রস্তাবের মধ্যে থেকে ট্যাবলাে মনােনয়নের দায়িত্ব ওই কমিটির। রাজ্যগুলির পাঠানাে ট্যাবলাের বিষয়বস্তু, ডিজাইন, ভিস্যুয়াল এফেক্ট ইত্যাদি বিচার করে তারা ট্যাবলাে বাছাই করেন।
সুত্রের খবর, এবছর রাজ্যের পাঠানাে ট্যাবলাের বিষয়বস্তু ছিল– কন্যাশ্রী, সবুজশ্রী এবং জলধরাে জলভরাে প্রকল্প। যে কোনও রাজ্যের বিষয়বস্তুর সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য এবং তার উপস্থাপনার ধরন জানতে রাজ্যগুলিকে ডেকে পাঠিয়ে বৈঠক করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বাছাই কমিটি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওই কমিটি বিভিন্ন রাজ্যকে নিয়ে দু’বার বৈঠক করলেও সেখানে পশ্চিমবঙ্গের ডাক পড়েনি। যা থেকে মনে হচ্ছে এবছর প্রজাতন্ত্র দিবসের ট্যাবলােতে এই রাজ্যের অন্তর্ভুক্তি হল না।
কেন্দ্রের মনােনীত ৫৬ টি প্রস্তাবের মধ্যে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে মােট ২২ টি প্রস্তাব প্রজাতন্ত্র দিবসের ট্যাবলাের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ছাড়পত্র পেয়েছে। এর মধ্যে ১৬ টি রাজ্য এবং ৬ টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রয়েছে। যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ট্যাবলাের ঠাই নেই। রাজ্যের ট্যাবলাে এইভাবে বাদ পড়ায় ক্ষুব্ধ রাজ্য সরকার। প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে রাজ্যের ট্যাবলাে পাঠতে বরাবরই উৎসাহী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এবার পশ্চিমবঙ্গের ট্যাবলাের কোনও জায়গা থাকবে না, সেটা মানতে পারছে না তৃণমূলের মন্ত্রীরা।
শাসক সরকারের শীর্ষস্তরের মন্ত্রী সুব্রত মুখােপাধ্যায় বলেন, এটা নগ্ন প্রতিহিংসা। বিষয়টা শুধু বিমাতৃসুলভ আচরণ কিংবা রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের শিশুসুলভ আচরণ বলেও মনে করছেন তিনি। তৃণমূল সকারের আমলেই পুরুলিয়ার ছউ নাচের ট্যাবলাে
প্রজাতন্ত্র দিবসে সেরার স্থান অধিকার করেছিল। এমন একটা রাজ্যের ট্যাবলােকে প্রজাতন্ত্র দিবসে কেন স্থান দেওয়া হল না, প্রশ্ন তুলেছেন সুব্রতবাবু। তাঁর মতে এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামাে নষ্ট হবে। তৃণমূলকে কেন্দ্রীয় সরকার রাজনৈতিকভাবে সহ্য করতে পারছেনা বলেই তাদের এই সিদ্ধান্ত।
তৃণমূলের অপর পরিষদীয় মন্ত্রী তাপস রায়ও এই বিষয়ে একমত সুব্রত মুখােপাধ্যায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাজ্যের ট্যাবলােকে বাদ দেওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। সংশােধিত নাগরিকত্ব আইন, জাতীয় নাগরিক পঞ্জীকরণ ইত্যাদি জনবিরােধী নীতির বিরুদ্ধে তৃণমূল সরকার প্রতিবাদ করায় ট্যাবলাে নিয়ে রাজ্যের পাঠানাে প্রস্তাব বাতিল করল কেন্দ্রীয় সরকার। সস্তার রাজনীতি করছে দিল্লি। তবে এইভাবে রাজ্যকে ঠেকানাে যাবে না বলে মন্তব্য করেন তাপসবাবু।
তবে রাজ্য সরকারের মন্ত্রীদের এই ধারণায় তীব্র আপত্তি জানান বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘােষ। তাঁর মতে নিয়ম মেনে পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রস্তাব পাঠায়নি। অন্য রাজ্য যে নিয়ম মেনে চলছে, তা পশ্চিমবঙ্গ করেনি। আর এখন সবকিছুতেই রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছে তারা। আসলে এনআরসি এবং সিএএ নিয়ে এই রাজ্য যখন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কার্যত জেহাদ ঘােষণা করেছে, সেই সময় রাজ্যের ট্যাবলােকে বাতিল করার ঘটনাকে প্রতিহিংসা হিসেবেই দেখছে তৃণমূল নেতৃত্ব।