এপ্রিলেই পুরসভার নির্বাচন বাংলায়

প্রতীকী ছবি (File Photo: IANS)

এপ্রিলেই পুরসভার নির্বাচন করতে চায় রাজ্য সরকার। ১২ এপ্রিল কলকাতা ও হাওড়া আর বাকি পুরসভাগুলিতে ২৮ বা ২৭ এপ্রিল নির্বাচন করতে চায় সরকার। যদিও এর মধ্যে থাকছে না বারাকপুর, সল্টলেক ও আসানসােল পুরসভা।

মােট ১০২ টি পুরসভায় ভােট হবে এপ্রিলে। এখন বারাকপুর কপোরেশন হয়ে যাবে। সে কারণে বারকপুরের মােট আটটি পুরসভার ভােট হচ্ছে না। কারণ এই আটটি পুরসভা টিটাগড়, কাঁচরাপাড়া, নৈহাটি, উত্তর বারাকপুর, বারাকপুর, ভাটপাড়া, গারুলিয়া, হালিশহর পুরসভা নিয়ে হচ্ছে বারাকপুর কর্পোরেশন। দু’দফাতেই ভােট শেষ করতে চাইছে কমিশন, যদিও রাজ্য তিন দফায় ভােট শেষ করতে চাইছে বলে সূত্রের খবর। সে ক্ষেত্রে এই শেষ দফার নির্বাচন হতে পারে মে মাসে।

ইতিমধ্যেই ৯৩ টি পুরসভার আসন সংরক্ষণের চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। আরও ১৭ টি পুরসভাতেও নির্বাচন হওয়ার কথা। রাজ্য নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে তারা পুরনির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। ইভিএমে ভােট করাতে নির্বাচন কমিশন তৈরি বলে জানা গেছে। সে ক্ষেত্রে ইভিএমের সঙ্গে ভিভিপ্যাটের ব্যবহার করা হতে পারে। যদি তা হয় তাহলে এবারই প্রথম পুরনির্বাচনে ভিভিপ্যাট সহ নির্বাচন হবে। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যালটে নির্বাচন করার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত কি হবে তা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলেই কমিশন সূত্রে খবর।


২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে শেষবার ব্যালটে ভােট হয়েছিল। ব্যালট লুঠের পাশাপাশি গণনা কেন্দ্রে ঢুকে ছাপ্পা মারার অভিযােগও উঠেছিল। তাই সে কথা মাথায় রেখে আসন্ন পুর নির্বাচনে ইভিএমেই ভােট পক্রিয়া সারতে চাইছে কমিশন। যদিও এনিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি কমিশন। কমিশনের এক কর্তা বলেন, পুরনির্বচন নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

অপরদিকে, এদিনই তিন জেলার জেলাশাসকদের নির্বাচন কশিমনে ডেকে পাঠালেন কমিশনার সৌরভ দাস। দুপুর একটায় নির্বাচন কমিশন ডাকা হয় উত্তর ২৪ পরগনা, কলকাতা ও হাওড়ার জেলাশাসককে। এখন কলকাতার জেলাশাসক নেই। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাশাসক কলকাতা পুরসভার দায়িত্বে রয়েছেন। এপ্রিল মাসে নির্বাচনে হলে হাতে মাত্র দেড় মাস। ভােটের আগে প্রস্তুতি নিয়ে আলােচনার জন্যই ডেকে পাঠানে হয়েছে জেলাশাসকদের।

প্রথমে এই তিন জেলার জেলাশাসককে ডেকে পাঠানাে হয়েছে। ধাপেধাপে সব জেলার জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন নির্বাচন কমিশনার। এদিকে পুরভােটকে সামনে রেখে রাজনৈতিক তৎপরতা ক্রমশ বাড়ছে। তৃণমূল কংগ্রেস ইতিমধ্যে একটি হাইপাওয়ার কমিটি তৈরি করেছে পুর নির্বাচনকে সামনে রেখে। বিজেপিও প্রস্তুত কলকাতার পুরভােটে মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে বিজেপি কাউকে প্রোজেক্ট করবে না বলে জানা গেছে।

টিম বিজেপি ঐক্যবদ্ধ ভাবে মাঠে নামবে ছােট লালবাড়ির নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা পাওয়ার জন্য। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে কারা কারা কলকাতা পুরভােটে প্রার্থী হবে তা নিয়েও শাসক দলের অন্দরে জল্পনা কোনও অংশে কম নয়। ইতিমধ্যে সংরক্ষিত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, এবার আর নিজের ওয়ার্ড প্রার্থী হতে পাচ্ছেন না তৃণমুলের বেশ কয়েকজন কাউন্সিলার। তাদের পুনর্বাসন কিভাবে এখন সেটাই দেখার।

বাম কংগ্রেসের মধ্যে আসন সমঝােতা নিয়েও আলােচনা শুরু হয়েছে। জোট করেই ভােটে লড়তে আগ্রহী দুই দল এমনটাই খবর। হাওড়াতে তৃণমূল কংগ্রেস কাকে মেয়র পদপ্রার্থী করে ভােটে ঝাঁপায় তা নিয়েও শাসকদলের অন্দরে কৌতুল ক্রমশ বাড়ছে। কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, আগামীতে এই নেতাকেই সামনে রেখে তৃণমূল কংগ্রেস পুরভােটে ঝাঁপায় কিনা সেটাও দেখার।

সবমিলিয়ে বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই মিনি বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক পারা ক্রমশ বাড়ছে। রাজ্যের তিনটি পুরসভা বর্তমানে বিরােধীদের দখলে। শিলিগুড়ি, তাহেরপুর, জয়নগর এই তিন পুরসভায় বিরােধী তা তাদের আধিপত্য ধরে রাখতে পারে কিনা তা নিয়েও জল্পনা রয়েছে। ২০১৯ লােকসভা নির্বাচনে বিজেপির চমকপ্রদ উত্থান হয়েছে এ রাজ্যে। ১৮ টি লােকসভা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা পেয়েছে বিজেপি। কিন্তু তাদের সেই জয় অনেকটাই থিতিয়ে গিয়েছে।

সম্প্রতি তিনটি বিধানসভা উপনির্বাচনের ফলাফলে খড়গপুর, কালিয়াগঞ্জ, বিজেপির শােচনীয় হাল হয়েছে। করিমপুরে তৃণমুল নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। ফলে বঙ্গে বিজেপির হাওয়া আগের থেকে অনেকটা স্তিমিত। মুকুল রায়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুরভেটের। তাঁর রণকৌশলকে সামনে রেখে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘােষ পুরভােটে আদৌ তৃণমুলের দুর্গে থাবা বসাতে পারে কিনা সেটাই দেখার। ইতিহাস বলছে পুরভােট ও পঞ্চায়েতে যারা ভালাে ফল করবে তাদের রাজ্যের ক্ষমতায় আসে। ফলে এই মিনি বিধানসভা নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম।