ভারতে ইলিশ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বাংলাদেশ। আর তাতেই চিন্তার ভাঁজ রাজ্যবাসীর কপালে। সকলের মনে একটাই প্রশ্ন, পুজোর মরশুমে ইলিশ মিলবে তো? আদৌ পাতে পড়বে তো ইলিশ ভাপা, ইলিশের ঝাল, ইলিশের পাতুরী। দুর্গাপুজোর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছে পদ্মার ইলিশ। কোথাও অষ্টমীর ভোগে মাকে ইলিশ দেওয়া হয়, আবার কোথাও পান্তা ভাত আর ইলিশ মাছ ভাজা খাওয়ার পর বিসর্জন শুরু হয়। হুগলির কোন্নগরের ঘোষাল বাড়িতে ইলিশ খেয়ে বিসর্জনে যান বাড়ির মহিলারা।
জলপাইগুড়ি রাজবাড়িতে আবার অষ্টমীর ভোগে ইলিশ থাকতেই হবে। অবশ্য শুধু দুর্গাপুজোই নয়, কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় ইলিশ ভোগ দেন অনেকে। কলকাতার বিখ্যাত পুঁটে কালী মন্দিরেও দেবীর ভোগে ইলিশ মাছ থাকে। সেই দুর্গাপুজোর আগেই ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধের কথা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার। আর তাতেই চিন্তার ভাঁজ মাছ ব্যবসায়ীদের কপালে। এবার এই ইলিশ ইস্যুতে মুখ খুললেন রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী।
দৈনিক স্টেটসম্যানকে মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ ইলিশ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর ফলে পদ্মার ইলিশ হয়তো মিলবে না। তবে রাজ্যবাসীর চিন্তার কোনও কারণ নেই। বাংলার নানা প্রান্তেই পর্যাপ্ত ইলিশ চাষ হচ্ছে। রাজ্যবাসীর চাহিদা মেটানোর পক্ষে তা যথেষ্ঠ। পদ্মার ইলিশের স্বাদ হয়তো মিলবে না, কিন্তু রাজ্যবাসী ইলিশ থেকে বঞ্চিত হবে না।
খোকা ইলিশ ধরার ব্যাপারেও নতুন নিষেধাজ্ঞা জারির কথা ভাবছে রাজ্য সরকার। এমনটাই জানালেন রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, এখন দু’মাস বয়স পর্যন্ত ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেটা বাড়িয়ে তিন মাস করার কথা ভাবা হচ্ছে। এর ফলে ইলিশের সাইজ আরও বড় হবে। দামও বাড়বে আগের তুলনায়। ফলে মৎস্যজীবীরা উপকৃত হবেন।
প্রসঙ্গত, দুর্গাপুজোর আগেই ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধের কথা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার। আর তাতেই চিন্তার ভাঁজ পুজোর মাছ ব্যবসায়ীদের কপালে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ইলিশ পেতে খুব একটা সমস্যা হয়নি বঙ্গবাসীর। কিন্তু তিনি গদিচ্যুত হতেই গোল বেঁধেছে। মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ফরিদা আখতার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, অক্টোবরে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হবে না। আর তাঁর এই ‘ফতোয়া’ ঘিরে চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন এপার বাংলার ব্যবসায়ীরা।
এই ফতোয়ার বিরুদ্ধে চিঠিও দিয়েছেন মাছ ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ সরকারের বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনকে চিঠি পাঠিয়েছে ভারতের ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন। চিঠিতে লেখা হয়েছে, দুর্গাপুজোর জন্য ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। কারণ পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং ত্রিপুরায় বাংলাদেশের ইলিশের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
এক্ষেত্রে একটা কথা বলে রাখা ভালো, মাছ নিয়ে সর্বক্ষণ কাজকর্ম চালালেও ৩০ বছর ধরে মুখে মাছ তোলেন না রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী তথা পাঁশকুড়া পূর্বের বিধায়ক বিপ্লব রায়চৌধুরী। ব্যক্তিগত কারণেই মাছ খান না তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, বাবার মৃত্যুর পর মা ঠিক করেছিলেন আর মাছ খাবেন না। সেই থেকে তিনিও মাছ খান না। মূলত শাক-সবজি ও সেদ্ধ খাবারই প্রিয় মন্ত্রীর।