কেন্দ্রের একাধিক জল ও বিদ্যুৎ প্রকল্পে বঞ্চিত বাংলা, অভিষেকের প্রশ্নের জবাবে স্বীকার কেন্দ্রের

প্রতীকী চিত্র

কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে ফের সরব হলেন তৃণমূলের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্নের জবাবে মোদী সরকার কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে কেন্দ্রের বিভিন্ন উনন্নয়নমূলক প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলা। জল ও বিদ্যুৎ সহ একাধিক প্রকল্পে বাংলা বঞ্চিত হচ্ছে। এই বিষয় নিয়ে বলতে গিয়েই অন্যান্য প্রকল্পগুলির কথা উঠে আসে। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক জানিয়েছে, রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় প্রায় ৪৬.২০ শতাংশ বাড়িতে এখনও পানীয় জলের কল নেই।

আরও জানা গিয়েছে, কেন্দ্রের বিদ্যুৎ প্রকল্প দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রাম জ্যোতি যোজনায় বঞ্চিত হচ্ছে বাংলা। এই প্রকল্পে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে মাত্র ২২টি গ্রামে ২৪ ঘণ্টার বৈদ্যুতিকরণের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া সৌভাগ্য প্রকল্পেও ব্যাপকভাবে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলা। এই প্রকল্পে রাজ্যের গ্রামাঞ্চলগুলিতে ৭ লক্ষ ৩২ হাজার ২৯০টি বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছিয়েছে। কিন্তু আরডিএসএস প্রকল্পে বাংলার জন্য কোনও অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রের অফ গ্রিড সৌরশক্তি প্রকল্পে ডবল ইঞ্জিন সরকার শাসিত মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ত্রিপুরা-সহ সাতটি রাজ্যে পরিষেবা চালু থাকলেও বাংলাকে বঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে। এই প্রকল্পে বাংলার কোনও নামগন্ধ নেই।

এদিন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে নির্দিষ্ট তিনটি প্রশ্ন করেন। প্রথমত রাজ্যওয়ারি গ্রামীণ কতগুলি বাড়িতে এখনও ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ নেই। দ্বিতীয়ত রাজ্যওয়ারি গ্রামীণ কতগুলি বাড়িতে এখনও পানীয় জলের কল নেই। তৃতীয়ত এই সমস্যাগুলির সমাধানে কেন্দ্র কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছে? কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর দেওয়া সেই প্রশ্নের জবাবে উঠে আসে বাংলার প্রতি একাধিক বিষয়ে চরম বৈষম্যের প্রসঙ্গ।


প্রসঙ্গত প্রথম মোদি সরকারের আমলে কেন্দ্রের তরফে রাজ্যগুলির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কোন কোন গ্রামে এখনও বিদ্যুৎ নেই। কেন্দ্রের সেই প্রশ্নের জবাবে রাজ্যগুলির বিস্তারিত তথ্য পাঠায়। সেই তথ্য অনুযায়ী, বাকি থাকা ১৮,৩৭৪টি গ্রামে ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিলের মধ্যে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়। সেই প্রকল্পে বাংলার ২২টি গ্রাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যদিও সেই গ্রামগুলির সব বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছেছিল কিনা, কেন্দ্রের দেওয়া তথ্যে তা স্পষ্ট নয়।

অন্যদিকে সৌভাগ্য প্রকল্পে ইচ্ছুক ২.৮৬ কোটি বাড়িতে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়। যার মধ্যে রয়েছে বাংলার ৭.৩২ লক্ষ গ্রাম। যদিও এই প্রকল্প দু’টি ২০২২ সালের ৩১ মার্চ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আবার ২০২১ সালের জুলাই মাসে আরডিএসএ নামক নতুন প্রকল্প আনে কেন্দ্র। এখনও পর্যন্ত সাড়ে ন’ লক্ষ বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে বরাদ্দ হয়েছে ৪,২৮১ কোটি টাকা। এই প্রকল্পে বাংলার একটিও বাড়ি নেই। পাশাপাশি, যে প্রকল্পে পৌনে ১০ হাজারের বেশি বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছতে বরাদ্দ হয়েছে ৪৯ কোটি টাকা, সেই তালিকাতেও বাংলার নাম নেই।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ‘হর ঘর জল’ প্রকল্পেও বাংলাকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্র সরকারের তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে রয়েছে মোট ১ কোটি ৭৫ লক্ষ ৪০ হাজার বাড়ি। যার মধ্যে ৯৪ লক্ষ ৩৬ হাজার বাড়িতে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পানীয় জলের কল পৌঁছিয়েছে। বাকি ৮১ লক্ষ চার হাজার বাড়িতে এখনও কাজ হয়নি। যা শতাংশের হিসাবে ৪৬.২০%। অথচ এইসব প্রকল্পগুলিতে নাম না থাকার জন্য রাজ্য সরকারের ওপর সমস্ত দায়ভার চাপানো হয়েছে। কেন্দ্রের তরফে দাবি করা হয়েছে, এইসব প্রকল্পে রাজ্যগুলির পাঠানো তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই উন্নয়নের কাজ করা হয়েছে।