নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: জেলে মহিলা বন্দিদের অবস্থা নিয়ে আগেও অভিযোগ উঠেছে আদালতে । অভিযোগ উঠেছিল, -‘জেলের মধ্যেই অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়ছেন মহিলারা’। এবার সামনে এল আরও এক অভিযোগ। হাইকোর্টে করা জনস্বার্থ মামলায় দাবি করা হয়েছে, -‘মহিলা বন্দিরা নাকি স্নানই করতে পারেন না’। আইনজীবী তাপস ভঞ্জের করা জনস্বার্থ মামলায় এই অভিযোগ শুনে উদ্বেগ প্রকাশ করল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ। অভিযোগ,’খোলা জায়গায় স্নান করতে হয় মহিলা বন্দিদের’। কেবলমাত্র মুখ ও হাত ধোয়ার অনুমতি আছে বলেও দাবি করা হয়েছে মামলায়।
আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘ এই নিয়মে সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত মহিলা বন্দিরা। রাজ্যকে নিশ্চিত করতে হবে, বন্দিরা যেন সব অধিকার পায়, স্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে পারে ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে পারে’। সংবিধান মেনে ন্যুনতম সব সুযোগ সুবিধা দিতে হবে বলে উল্লেখ করেছে হাইকোর্ট। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের বেঞ্চে চলছে সেই জনস্বার্থ মামলার শুনানি।শালীনতা বজায় রেখে তৈরি করতে হবে স্নানাগার। জেলা আদালত গুলিকে এই নির্দেশ পৌঁছে দিতে হবে দ্রুত।এর পাশাপাশি সাক্ষীদের আদালতে পেশ করতে যে কোনওরকম অসুবিধে হলে সময় সাপেক্ষ না করে ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে সাক্ষীদের আদালতে পেশের নির্দেশ দেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ।
রাজ্যের সমস্ত সংশোধনাগারে বন্দিদের জন্য একাধিক অসুবিধে রয়েছে। এই মর্মে কলকাতা হাইকোর্ট একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল। সেই মামলা মহিলা বন্দিদের সংশোধনাগারেই গর্ভধারণের খবরও উঠে এসেছিল। সেই থেকেই এই মামলার জন্য তৈরি হয়েছিল বিশেষ বেঞ্চ। জেলবন্দি মহিলা থেকে শুরু করে পুরুষদের অসুবিধার কথা তুলে ধরা জনস্বার্থ মামলায় বিশেষ নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের। বৃহস্পতিবার ডিভিশন বেঞ্চে আদালত বান্ধব তাপস ভঞ্জ জানান, -‘বেশিরভাগ জেলে মহিলা বন্দিদের জন্য নেই স্নানাগার। খোলা বাথরুম হওয়ায় ময়নাগঞ্জিরা শুধুমাত্র হাত পা ধোয়ার সুযোগ পান। বড়জোর বিশেষ ময়লা জামা কাপড় কাচার সুযোগ পান। সেক্ষেত্রে পুরোপুরি স্নানের সুযোগ তাদের হয় না’।
আদালত বান্ধবের এই রিপোর্ট পাওয়ার পর উদ্বিগ্ন কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন। সমস্ত সংশোধনাগারে মহিলা বন্দিদের জন্য বিশেষ স্নানাগার তৈরি করতে হবে। যেখানে সংখ্যা কম সেখানে সংখ্যা বাড়াতে হবে।পাশাপাশি এদিন রিপোর্টের মাধ্যমে আরও জানা যায় যে, সাক্ষীদের আদালতে আনতে দেরি হচ্ছে বলে বন্দিরা দীর্ঘদিন বিনা বিচারে বন্দি অবস্থায় রয়ে যাচ্ছেন। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে বন্দীদেরও নানান কারণে আদালতে পেশ করা সম্ভব হচ্ছে না। সেই কারণেই এদিন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেও সাক্ষীদের আদালতের হাজির করানো যাবে। এই নির্দেশ প্রত্যেকটি জেলা আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।