ট্যাব কাণ্ডে তদন্ত যতই এগোচ্ছে, ততই নতুন নতুন তথ্য সামনে আসছে। এবার মালদহ থেকে গ্রেপ্তার করা হল একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের মালিক। বৃহস্পতিবার রাতে বৈষ্ণবনগরের চকসেহেরদী গ্রাম থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পূর্ব বর্ধমান জেলার পুলিশ। এই নিয়ে ট্যাব প্রতারণা কাণ্ডে মালদহ থেকে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। এ পর্যন্ত রাজ্যের ১৫টি জেলা থেকে ট্যাব কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশ্যে এসেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতের নাম সুব্রত বসাক। তাঁর বাড়ি থেকে ল্যাপটপ এবং বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। ট্যাব কাণ্ডের তদন্তে নেমে মঙ্গলবার বড় সাফল্য পায় পুলিশ। মালদহের বৈষ্ণবনগর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় পাঁচ সাইবার ক্যাফে মালিককে। ধৃতেরা হলেন রকি শেখ, পিন্টু শেখ, শ্রবণ সরকার এবং জামাল শেখ। সাইবার ক্যাফেতে বসেই প্রতারণার জাল বুনেছিল ধৃতরা।
ধৃতদের মধ্যে শ্রবণের সঙ্গে তৃণমূলের যোগসূত্র খুঁজে পায় পুলিশ। কালিয়াচক তিন নম্বর ব্লকের তৃণমূল এসসি সেলের ব্লক সভাপতি জিতেন্দ্রনাথ সরকারের ছেলে শ্রবণ। তাঁর দোকান থেকে ল্যাপটপ, হার্ডডিক্স এবং পেনড্রাইভ বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। বৈষ্ণবনগরেরই বাসিন্দা হাসেম আলিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর থেকে টাকা হাতানোর অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন – আশারুল হোসেন, সাদ্দিক হোসেন ও মোবারক হোসেন।
একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার জন্য এককালীন ১০ হাজার টাকা দেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পের অধীনে এই টাকা দেওয়া হয়। বেশ কয়েক বছর ধরে এই প্রকল্প চলছে। কিন্তু এবারই প্রথম ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ সামনে আসে। সমস্ত নথি জমা দিলেও জেলায় জেলায় সরকারের পাঠানো টাকা থেকে বঞ্চিত হন বহু পড়ুয়া। এরপরই ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ।
‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে পড়ুয়াদের আবেদন করা থেকে শুরু করে তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা আসা পর্যন্ত যে যে প্রক্রিয়া রয়েছে। এই প্রক্রিয়াগুলিতেই জালিয়াতি করে প্রতারকরা। চোপড়া থেকেই এই চক্র চালানো হচ্ছে বলে প্রাথমিক অনুমান কলকাতা পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের। পাশাপাশি, যে সমস্ত অ্যাকাউন্ট ভাড়া নেওয়া হতো, তার বেশিরভাগেরই মালিক বয়স্ক। যাদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের ব্যাঙ্কে লেনদেন নিজে করেন না বলেই জানা গিয়েছে।
‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াদের দশ হাজার টাকা করে দেয় রাজ্য সরকার। মূলত অনলাইনে পড়াশোনার সুবিধার্থে ট্যাব কেনার উদ্দেশ্যে এই টাকা দেওয়া হয় পড়ুয়াদের। কিন্তু সেই টাকা অ্যাকাউন্টে জমা পড়া নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ ওঠে। প্রথম অভিযোগ ওঠে পূর্ব বর্ধমান জেলায়। গত কয়েক দিন ধরেই রাজ্যজুড়ে শোরগোল শুরু হয়ে যায়। কোথাও কোথাও আবার অভিযোগ, এক জনের টাকা চলে গিয়েছে অন্য আরেকজনের অ্যাকাউন্টে।
এ ছাড়াও, ‘হ্যাক’ করে ট্যাবের টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে হাতানোর অভিযোগ উঠেছে। পরবর্তীকালে সেই অভিযোগ ওঠে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে। একই সঙ্গে তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, প্রতি অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হতো তিনশো থেকে পাঁচ হাজার টাকা কমিশনের ভিত্তিতে।