এবারের ‘কলকাতা বইমেলা’য় নেই বাংলাদেশ, সরব গিল্ড সভাপতি

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

বই চেতনার উন্মেষ ঘটায়। আর বেশি করে সেই বই পড়ায় মানুষকে উৎসাহিত করতেই ‘বইমেলা’র আয়োজন করা হয়। ‘কলকাতা বইমেলা’ সেই উদ্যোগেরই একটি শ্রেষ্ঠ ফসল। এই বইমেলাকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর অন্যান্য রাষ্ট্রের মতো দুই পারের বাঙালির আবেগের এক অদ্ভূত মেল্ বন্ধন ঘটে। তাঁরা আলাদা রাষ্ট্রের বাসিন্দা হলেও মনে প্রাণে নতুন করে আশার সঞ্চার ঘটে। সমস্ত রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় বাধা সরিয়ে বইমেলাতে তাঁদের এক আত্মিক মিলন ঘটে।

কিন্তু গত কয়েকমাস ধরে বাংলাদেশের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দুই বন্ধু রাষ্ট্র ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়। বিশেষ করে সেখানে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর মৌলবাদী শক্তির আক্রমণে ভারতীয়দের বিশেষভাবে বিদ্ধ করে। হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে আসার পর নবগঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা একের পর এক ভারত-বিরোধী মন্তব্য করে সেই সম্পর্কটাকে আরও তিক্ততায় ভরিয়ে দেন। যার প্রভাব পড়ে এপার বাংলা তথা ভারতীয়দের মনে। যার রেশ আছড়ে পড়ে এবারের ‘কলকাতা বইমেলা’তেও। যার জেরে এবারের বইমেলাতে বাংলাদেশের প্রকাশকরা স্টল দেওয়ার সুযোগ পাননি। এবারের মেলায় আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, স্পেন, পেরু, ইরান-সহ একাধিক দেশ অংশগ্রহণ করলেও বাংলাদেশ থাকছে না। প্রশ্ন উঠছে, কেন এই সিদ্ধান্ত? বাংলাদেশের এই অস্থির পরিস্থিতির জন্য বই লেখক, পাঠক এবং প্রকাশকদের কেন কাঠগড়ায় তোলা হবে? তাঁরা কী দোষ করলেন? এভাবে যদি বাঙালির আবেগকে দ্বিধাবিভক্ত করা হয়, তাহলে মানুষ হিংসা ও দ্বন্দ্বের মধ্যে শান্তির পথে এগোবেন কীভাবে?

আর এই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে পাবলিশার্স অ্যান্ড গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সকালে দিল্লির ম্যাক্সমুলার ভবনে তিনি একটি সাংবাদিক বৈঠকে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। এবারের বইমেলার থিম কান্ট্রি জার্মানি। ৪৮ বছরের মেলার ইতিহাসে প্রথমবার। আর সেই উপলক্ষ্যেই আয়োজিত হয়েছিল এই সাংবাদিক বৈঠক। সেখানে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘১৯৯৬ সাল থেকে বাংলাদেশ কলকাতা বইমেলাতে আসছিল। এবারে যে ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি চলছে, সেই বিষয়ে আমাদের মন্তব্য করা উচিত নয়। কিন্তু আমরা সবাই জানি কী চলছে। সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা বইমেলার পবিত্রতা, নিরাপত্তা এবং অন্য কোনও স্তর যাতে বিপদগ্রস্ত না হয় সেই জন্যই আমরা এবারে বাংলাদেশকে রাখতে পারছি না। যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। সাহিত্যের কোনও সীমান্ত হয় না। কাঁটাতারের বেড়া হয় না। বাংলাদেশ থেকে যাঁরা আসতে চেয়েছিলেন আমরা তাঁদের বলেছি আপনারা ভারত সরকারের মাধ্যমে আসুন।’


উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালে জার্মানির ফ্র্যাঙ্কফুট শহরের বইমেলা থেকে অনু্প্রাণিত হয়ে কলকাতা বইমেলার যাত্রাপথ শুরু হয়েছিল। আগামী ২৮ জানুয়ারি কলকাতা বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। ২৯ জানুয়ারি থিম কান্ট্রি জার্মানি দিবস, ২ ফেব্রুয়ারি শিশু দিবস এবং ৪ ফেব্রুয়ারি সিনিয়র সিটিজেন দিবস পালিত হবে বইমেলাতে। মেলা চলবে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মেলার উদ্বোধন করবেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই গিল্ডের তরফ থেকে ২ লক্ষ টাকা অর্থমূল্যের বিশেষ সাহিত্য সম্মান পুরস্কারে সম্মানিত করা হবে বর্ষীয়ান সাহিত্যিক আবুল বাশারকে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তাঁর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেবেন। এদিন ম্যাক্সমুলার ভবনের সাংবাদিক বৈঠকে গিল্ডের তরফে ত্রিদিব ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে। গ্যেটে ইন্সটিটিউটের দক্ষিণ এশিয়ার ডিরেক্টর ড. মারলা স্টুকেনবার্গ, কলকাতার গথ ইন্সটিটিউটের ডিরেক্টর অ্যাস্টিড ওয়েজ উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।