৩ জনকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনায় অভিযুক্ত মহিলার জামিন নাকচ, ঘটনাস্থলে ফরেন্সিক টিম

তিনজনকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার নারকীয় ঘটনা

খায়রুল আনাম: ঘরের মধ্যে রাতের অন্ধকারে আগুন ধরিয়ে দিয়ে তিনজনকে নারকীয়ভাবে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনার পরে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও, এখনও উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে বীরভূমের রজতপুর এলাকার নতুন গীতগ্রাম এলাকা। এই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত স্থানীয় সুপুর গ্রামের হাতুড়ে চিকিৎসক শেখ সফিকুল ইসলাম ওরফে চন্দনকে শনিবার ৬ জুলাই রাত্রে বোলপুর থানার পুলিশ গ্রেফতার করার পর থেকেই এলাকার পরিস্থিতি নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রবিবার ৭ জুলাই সকাল থেকেই সুপুর গ্রামে পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শনিবার রাতেই পুলিশ মৃত শেখ আব্দুল আলিম ওরফে তোতার সেজ ভাই শেখ রতনের স্ত্রী নাজনিন নাহারকে গ্রেফতার করে। পুলিশ রবিবার ৮ জুলাই স্মৃতি বিবিকে বোলপুরের বিশেষ আদালতে হাজির করে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজত চাইলে বিচারক মহম্মদ আমিরুদ্দিন আলি ৭ দিনের পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর করেন। সরকারি আইনজীবী উদয়কুমার গড়াই জানান, নাজনিন নাহার ওরফে স্মৃতি বিবির বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩২৬ জি, ১১৮ (২), ১০৯ ও ১০৩ (১) ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। ধৃত নাজনিন নাহার ওরফে স্মৃতি বিবি ঘরের মধ্যে আগুন ধরিয়ে তিনজনকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার কথা পুলিশি জেরায় স্বীকার করেছেন। এই মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে পুলিশ অফিসার পার্থসারথি মণ্ডলকে। পুলিশ এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত হাতুড়ে চিকিৎসক শেখ সফিকুল ইসলাম ওরফে চন্দনকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।

নতুন গীতগ্রামের শেখ আব্দুল আলিম ওরফে তোতা (৩৮) তাঁর স্ত্রী কেরিমা বিবি ওরফে রূপা (৩০) ও ৪ বছরের শিশুপুত্র শেখ আয়ানকে নিয়ে শুক্রবার ৫ জুলাই রাত্রে একতলা ঘরে শুয়ে থাকার সময় খোলা জানালা দিয়ে কেরোসিন ঢেলে লাঠির ডগায় আগুন ধরিয়ে তা ঘরের মধ্যে ছুড়ে দিলে সেই আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। তাঁদের বড় ছেলে ১৯ বছরের শেখ ওয়াসিম আখতার ওরফে রাজা শুয়ে ছিলেন অন্য ঘরে। তাঁর চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে সকলকে উদ্ধার করে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে, সেখান থেকে তাঁদের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। তাঁদের বর্ধমান নিয়ে যাওয়ার সময় পথেই মারা যান শেখ আয়ান ও কেরিমা বিবি ওরফে রূপা। আব্দুল আলিম ওরফে তোতাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে শনিবার ৬ জুলাই তিনিও মারা যান। বর্তমানে একমাত্র জীবিত রয়েছে তাঁদের ১৯ বছরের স্কুল পড়ুয়া ছেলে শেখ ওয়াসিম আখতার ওরফে রাজা। নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সময় থেকেই এর পিছনে পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়টি সামনে আসে।


প্রাথমিক তদন্তে মৃতের ছেলের কাছ থেকেও পুলিশ জানতে পারে যে, শেখ আব্দুল আলিমের সেজ ভাই শেখ রতনের স্ত্রী নাজনিন নাহার ওরফে স্মৃতি বিবির সঙ্গে হাতুড়ে চিকিৎসক শেখ সফিকুল ইসলাম ওরফে চন্দনের অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক রয়েছে বলে শেখ আব্দুল আলিম ও তাঁর স্ত্রী কেরিমা বিবি জানতে পারেন। এই সম্পর্কের কথা তাঁরা প্রকাশ করে দিতে পারে, এই আতঙ্কেই স্মৃতি বিবি ও চন্দন তাঁদের চিরতরে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতেই এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটায়। চন্দন হাতুড়ে চিকিৎসক হওয়ায় সেই-ই খোলা জানালা দিয়ে ঘরের মধ্যে ক্লোরফর্ম ছড়িয়ে দিয়ে আগুন ধরিয়ে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে জানা গিয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে তাঁর সঙ্গে আরও কেউ ছিল কিনা তাও জানার চেষ্টা চলছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে পরিবারের সকলকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়া মৃত শেখ আব্দুল আলিমের একমাত্র জীবিত ছেলে শেখ ওয়াসিম আক্তার সাবালক হলে তাঁকে গ্রুপ-ডি পদে সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে নগদ পাঁচ লক্ষ টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর থেকেই ওই বাড়িটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। রবিবার ৭ জুলাই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল এসে ওই বাড়িতে প্রবেশ করে। যে ঘরে আগুন ধরিয়ে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে, সেখান থেকে বিভিন্ন নমুনা পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করে নিয়ে যান ফরেনসিক দলের বিশেষজ্ঞরা ।