মালদহে ফের আক্রান্ত তৃণমূল। এবার মানিকচকের তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের উপর হামলার চেষ্টার অভিযোগ উঠল। বিধায়কের গাড়িতে ধাক্কা মারার চেষ্টা করে অন্য একটি গাড়ি। শনিবার রাত ১০টা নাগাদ ধরমপুরের কাছে এই হামলার ঘটনা ঘটে। চালকের তৎপরতায় রক্ষা পান সাবিত্রী মিত্র। বিধায়কের অভিযোগ, ধাক্কা মারার পরও ইউটার্ন নিয়ে পিছু ধাওয়া করেছিল ওই সন্দেহজনক গাড়িটা। সাবিত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মানিকচকে এমএলএ কাপের ফাইনাল ম্যাচের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে শনিবার সন্ধ্যায় এনায়েতপুর এসেছিলেন বিধায়ক। সেখানে আয়োজকদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এরপর রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ মালদহ শহরের সদরঘাটের বাড়ির উদ্দেশে ফিরছিলেন। সেই সময় ধরমপুরের কাছে রাজ্য সড়কের উপর উল্টো দিক থেকে আসা একটি গাড়ি সাবিত্রীর গাড়িতে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
চালকের তৎপরতায় সেই ধাক্কা সামলে নিলেও কিছুক্ষণ পর ফের ঘুরে এসে বিধায়কের গাড়িকে ধাওয়া করতে শুরু করে সন্দেহভাজন গাড়িটি। আতঙ্কিত বিধায়ক একটি জনবহুল জায়গায় গাড়িটিকে দাঁড় করিয়ে মানিকচক থানায় খবর দেন। মিলকি পুলিশ ফাঁড়িতেও খবর দেওয়া হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, গাড়ির চালকের তৎপরতায় বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছেন সাবিত্রী মিত্র। চালক একটু অসচেতন হলেই বড় বিপদ হয়ে যেত।
তৃণমূল বিধায়ক বলেন, প্রথম বার ধাক্কা মারার পরে আবারও গাড়িটি আমার গাড়িকে লক্ষ্য করে এগিয়ে আসছিল, তাতে আমি নিশ্চিত যে আমাকে হত্যা করার জন্যই এ ভাবে হামলা করা হয়েছে। সাবিত্রীর অভিযোগ, হামলাকারীদের গাড়িটির পিছনের দিকে খুব ধুলো ছিল। সম্ভবত কেউ যাতে তাদের চিনতে না পারে, তাই এই কৌশল নেওয়া হয়। সন্দেহজনক গাড়িটির খোঁজে তল্লাশিও শুরু করেছে পুলিশ। গাড়িটি সম্ভবত মালদহের মোথাবাড়ির দিকে গিয়েছে বলে অনুমান পুলিশের।
এর আগে গত জানুয়ারিতে মালদহে দুই তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় দলেরই দুই স্থানীয় নেতা-সহ একাধিকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। উঠে এসেছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব। এক্ষেত্রে অবশ্য সেই সব নিয়ে কিছু বলতে চাননি সাবিত্রী। তাঁর সাফ কথা, কে বা কারা হামলার চেষ্টা করছে তা আমি বলতে পারব না। ঘটনার পর সাবিত্রী মিত্রর নিরাপত্তায় বাড়তি তৎপর জেলা পুলিশ। শাসকদলের তরফেও ঘটনার খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে।
শনিবার রাতেই হামলার কথা জানিয়ে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে শনিবার মোবাইল-বার্তা পাঠান মানিকচকের বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র। তিনি বলেন, বক্সীদা আমাদের অভিভাবক। তাই হামলার পরেই আমি সবার আগে তাঁকে ফোনে বার্তা পাঠিয়ে বিষয়টি জানিয়েছি। আমার মনে হয়েছে, জেলার শীর্ষ নেতাদের আগে রাজ্য তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বে যিনি আছেন তাঁকে বিষয়টি জানানো উচিত। তাই বক্সীদাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। হত্যার উদ্দেশ্যই এই হামলা, তা জানিয়েছি ওঁকে।
মালদহ জেলার রাজনীতিতে বেশ পরিচিত মুখ সাবিত্রী মিত্র। প্রয়াত কংগ্রেস নেতা বরকত গনিখান চৌধুরীর হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছিলেন তিনি। ২০১১ সালে অবশ্য তৃণমূলে যোগ দেন সাবিত্রী। সেবার বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে রাজ্যের মন্ত্রী হন তিনি। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অবশ্য জিততে পারেননি। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আবার মানিকচক থেকে বিধায়ক হিসেবে জয় পান।