হাউস স্টাফ নিয়োগে কাটমানি নিতেন আশিস, দাবি সিবিআইয়ের

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে আর্থিক দুর্নীতির মামলায় ধৃত টিএমসিপি নেতা আশিস পাণ্ডেকে শুক্রবার পেশ করা হল আদালতে। তাঁকে ৩ দিনের সিবিআই হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। আদালতে আশিসের বিরুদ্ধে কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ করেছে সিবিআই। অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে হাউস স্টাফ হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। শুধুমাত্র সন্দীপ ঘোষের ক্ষমতার জোরেই এই কাজ করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন তদন্তকারী অফিসাররা।  পাশাপাশি সিবিআইয়ের অভিযোগ, হাউস স্টাফ নিয়োগ করার সময় কাটমানি নিতেন আশিস।

আরজি কর মেডিক্যালে থ্রেট কালচার চালানোর অভিযোগ রয়েছে আশিসের বিরুদ্ধে। চিকিৎসক ও ছাত্রদের হুমকি দিতেন তিনি। উল্লেখ্য, তিনি হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত। সন্দীপ–ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তাঁর এত বাড়বাড়ন্ত বলে দাবি করেছেন তদন্তকারীরা।  এর আগে সিবিআইয়ের দপ্তরে আশিসকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
এদিন আদালতে সিবিআই দাবি করেছে, আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ সরাসরি ঘুষের টাকা নিতেন না। এই কাজ করতেন আশিস পাণ্ডে। তিনি বেশ ক্ষমতাশালী ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁর কথা না শুনলে সিনিয়র চিকিৎসকদেরও বদলি করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখতেন আশিস।

সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, তদন্তে বিভ্রান্তি তৈরি ও দুর্নীতির অভিযোগে আশিসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন তদন্ত প্রক্রিয়াকে অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি তিনি আরজি করের দুর্নীতিতেও জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এরপর আশিসের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ জোগাড় করে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। আরজি করে কোনও টেন্ডার হলে অথবা পড়ুয়া ভর্তির বিষয়ে আশিসের প্রভাব ছিল বেশ লক্ষ্যণীয়।

আশিসকে গ্রেপ্তার করার সময় তাঁর মোবাইল সহ সাতটি জিনিস বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আশিসের এই জিনিসগুলিকেই তথ্য প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে সিবিআই। সিবিআই সূত্রে খবর, তাঁর ফোন থেকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নথি পাওয়া গিয়েছে।


গত ৯ আগস্ট আরজি কর মেডিক্যালের সেমিনার রুমে এক তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল। হাইকোর্টের নির্দেশে এই ঘটনার তদন্তভার হাতে নিয়েছিল সিবিআই। এই একই হাসপাতালে বিভিন্ন আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে এনেছিলেন হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি। তদন্তের সুবিধার্থে আর্থিক দুর্নীতির মামলাটিও সিবিআইকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। তাই আরজি কর মেডিক্যালের ধর্ষণ–খুনের মামলার পাশাপাশি আর্থিক দুর্নীতির মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। ইতিমধ্যেই এই মামলায় একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন মোট পাঁচ জন।

৯ আগস্ট সেমিনার রুমে দেহ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলের একটি ভিডিও (যার সত্যতা যাচাই করেনি দৈনিক স্টেটসম্যান) ভাইরাল হয়। সেই ভাইরাল ভিডিওতে হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ সহ আরও অনেককে দেখা গিয়েছিল। আশিসকেও এই ভিডিওতে দেখা গিয়েছি‍ল বলে অভিযোগ রয়েছে। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ৯ আগস্ট সল্টলেকে একটি রুম বুক করেছিলেন আশিস। পরের দিনই তিনি সেই রুম ছেড়েও দেন। এই ঘটনার সঙ্গে আরজি কর কাণ্ডের কোনও যোগ রয়েছে কি না সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখছে সিবিআই। তবে বৃহস্পতিবার আশিসকে আরজি কর মেডিক্যালে আর্থিক দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।