আরসালানের বিরুদ্ধে ৪৮টি ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ

প্রতীকী ছবি (Photo: iStock)

পথ নিরাপত্তার বিধিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে চলছে রাতের শহরে বেপরােয়া গাড়ি চালনা। কলকাতা পুলিশের জারি করা এসওপি সহ একগুচ্ছ নির্দেশিকা সত্ত্বেও রাতের শহরে বেপরােয়া যুবকদের দাপট অব্যাহত।

সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে শহরের অন্যতম নামী রেস্তোরার যুবা মালিক আরসালান পরভেজের নাম। তার বেপরােয়া গতির বলি হয়েছে দুই বাংলাদেশের নাগরিক, আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আরও দুই। রবিবার আরসালান পারভেজকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তােলা হয়। বিচারপতি আরসালানকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।

বিলেত ফেরত আরসালানের ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের ট্রেক রেকর্ড বরাবরই খতরনাক। এর আগেও আরসালানের বিরুদ্ধে মাত্র ১ বছরের মধ্যে ৪৮ টি অভিযােগ রয়েছে বলে জানা গেছে। বিলিতি কেতে বিদেশি গাড়ি নিয়ে ওই যুবকের বেপরােয় গাড়ি চালানাের নজির দেখে তাজ্জব বনে গেছেন গােয়েন্দারাও।


আরসালানের বিরুদ্ধে বেপরােয়া গাড়ি চালনা, সম্পত্তির ক্ষতি, অনিচ্ছাকৃত খুন সহ একাধিক কঠিন ধারা যােগ করা হয়েছে। সেদিন রাতে গােটা রাস্তাই প্রচন্ড গতিতে গাড়ি চালিয়ে ছিল সে। একের পর এক ৭ টি সিগনাল ভেঙে শেষে শেক্সপিয়র সরণীর কাছে জাগুয়ারটি একটি মারসিডিজকে সজোরে ধাক্কা মারে। গােটা রাস্তাতেই গাড়ির গতি ছিল ১০০ কিলােমিটারের ওপরে বলে জাগুয়ারটি পরীক্ষা করে জানা গেছে।

মারসিডিজের মধ্যে থাকা দু’জন গুরুতর আহত হন। মারসিডিজের দুই যাত্রী একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এবং সেখানে পথচারি দুই বাংলাদেশি নাগরিক কাজি মহম্মদ মইনুল আলম এবং তানিয়াও আহত হন। আশঙ্কাজনকভাবে তাদের এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। দুই বাংলাদেশি নাগরিককে মৃত বলে ঘােষণা করেন চিকিৎসকরা বলে আদালতে জানান সরকারি পক্ষের আইনজীবী।

তবে এখানেই শেষ নয়, আরসালান এমন একটি ঘটনা ঘটিয়ে অবলীলায় সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়া নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। সে কি গাঢাকা দেওয়ার চেষ্টায় ছিল? এর পাশপাশি তার পালিয়ে যাওয়ার কারণেই সেদিন রাতেই তার ডাক্তারি পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। জানা যায়নি আরসালান মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিল কিনা।

মারসিডিজের দুই যাত্রীর বয়ান রেকর্ড করেছেন তদন্তকারী আধিকারিক। তাদের বয়ানের ভিত্তিতেই ওই যুবকের বিরুদ্ধে আরও দুটি কঠোর ধারা যােগ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট এবং অনিচ্ছাকৃত খুনের চেষ্টার জন্য ভারতী দণ্ডবিধির ৩০৮ ধারা এবং পিডিপিপি আইন যুক্ত করা হয়েছে।

এছাড়া আরসালানের গাড়ির গতি এতটাই বেশি ছিল যে দাড়িয়ে থাকা মারসিডিজ বেঞ্চটি প্রায় ২০ ফুট দুরে ছিটকে গিয়ে দুই পথচারিকে ধাক্কা মারে। আরসালানের বয়ান, দুই আহত যাত্রী এবং সেদিন। রাতের সিসিটিভি ফুটেজ সহ একাধিক তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই ফের একবার পুননির্মান করা হতে পারে গােটা ঘটনা। এছাড়া সেদিন রাতে কার সাথে কোথায় সময় কাটায় ওই যুবক জানাতে জেরা করা হচ্ছে আরসালানকে।

জানার চেষ্টা করা হচ্ছে সেদিন কোনও ভাবে মদ্যপান করে গাড়ি চালাচ্ছিলেন কিনা। তবে আরসালানের বয়ানে অসংগতি রয়েছে বলে তদন্তকারী সূত্রের খবর। তথ্য গােপন করছে বলেও অনুমান পুলিশের। আর তাই এবার ডাকা হতে পারে আরসালানের বন্ধুবান্ধবদেরকে।

তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, দুর্ঘটনার রাতে ইস্টার্ণ মেট্রোপলিটান বাইপাস এলাকায় বেশ কিছু সময় কাটান। কিছু বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করেন। আরসালান এবং তার সঙ্গে থাকা বন্ধুদের ফোনের টাওয়ার লােকেশন পরীক্ষা করে দেখা হবে। একই সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে বিদেশি গাড়ির মধ্যে থাকা আধুনিক প্রযুক্তির ডেটা রেকর্ডগুলি।