মৃত্যুর পরে  রাজ্য শ্রম দফতরের পেনশন অনুমোদন

রাজ্যের পাঁচজন সিলিকোসিস আক্রান্তের মধ্যে তিনজন বীরভূমের

খায়রুল  আনাম:  বিশ্বের প্রাচীনতম শিল্পগুলির অন্যতম হলো পাথর শিল্প। খনি শিল্পের অনুরূপ পাথর শিল্পে গ্রানাইট,  মার্বেল, শ্লেট এবং বেলে পাথর সর্বাপেক্ষা পরিচিত এবং মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশে পাথরের ভূমিকা অনস্বীকার্য।    আর এই পাথর শিল্পের সাথে সভ্যতার ক্রমবিকাশে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়লেও এখনও পর্যন্ত পাথর শিল্পের সঙ্গে মানুষের কায়িক শ্রম অনিবার্য  হয়ে জড়িয়ে রয়েছে। এরাজ্যে যে পাথর শিল্পাঞ্চল রয়েছে তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য জায়গায় রয়েছে বীরভূম জেলা। এজেলার একটা অংশ পাথর বলয় হিসেবে চিহ্নিত। স্বাস্থ্য  দফতর এজেলাকে বীরভূম ও রামপুরহাট স্বাস্থ্য  জেলা হিসেবে দু’টি অংশে ভাগ করে স্বাস্থ্য  পরিষেবা দিয়ে থাকে। এরমধ্যে রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলাতে রয়েছে বিরাট পাথর বলয় এবং পাথর শিল্প।  এই এলাকায় প্রাকৃতিক সম্পদের যে সব পাথর খাদান রয়েছে, সেখান থেকে পাথর উত্তোলন থেকে শুরু করে পাথর ভাঙা কল বা ক্র্যাশারে এখনও কায়িক শ্রমের প্রচলন সর্বাধিক। আর এই পাথর ভাঙা কল বা ক্র্যাশারে যে সব শ্রমিকরা কাজ করে থাকেন, তাঁদের একটা অংশ সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। পাথরের গুঁড়ো এবং এথেকে যে দূষণ শ্রমিকদের নিঃশ্বাস এবং মুখের মধ্যে দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে থাকে, তা থেকেই এই সিলিকোসিস রোগ তাঁদের শরীরে বাসা বেঁধে  তাঁদের কায়িক শ্রমের  ক্ষমতা একটু একটু করে  নষ্ট করে দিয়ে তাঁদের মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে যায়। রাজ্য  শ্রম দফতর  অধীন ডিরেক্টরেট অব  ফাক্টারিজ-এর  অধিকর্তা  সিলিকোসিস রিলিফ রিহাবিলিটেচন অ্যাণ্ড ট্রিটমেন্ট পলিসির আওতায় রাজ্যে যে পাঁচজনের নাম সিলিকোসিস আক্রান্ত বলে জানিয়েছে, তাঁদের মধ্যে তিনজন  বীরভূমের রামপুরহাট স্বাস্থ্য  জেলার। বাকী দু’জন  দক্ষিণ  ২৪ পরগণার বাসিন্দা। এঁদের রাজ্য শ্রম দফতর মাসিক চার হাজার টাকা করে পেনশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত  নিয়েছে।  কিন্তু দেখা যাচ্ছে,  বীরভূম জেলার যে তিনজনকে এই মাসিক পেনশন দেওয়া হবে বলে রাজ্য শ্রম দফতর জানিয়েছে, তাঁদের মধ্যে একজন ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছেন।
রামপুরহাট স্বাস্থ্য  জেলার যে তিনজন  সিলিকোসিসের মতো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত বলে জানানো হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রামপুরহাট থানার  তেঁতুলবান্দির শেখ  জাবিফ। যিনি চলতি বছরের মার্চ মাসে মারা গিয়েছেন।  তিনি  বড়পাহাড়ি পাথর শিল্পাঞ্চলে কাজ করতেন।  গত বছর  রামপুরহাট স্বাস্থ্য  জেলার স্বাস্থ্য  আধিকারিকরা  শেখ জারিফের  সিলিকোসিস রোগ চিহ্নিত করেছিলেন। সেই সময় তিনি কর্মক্ষমতা হারিয়ে শয্যাগত ছিলেন।   তাঁর ছেলে  শেখ আসারুল জানিয়েছেন, বাবা কর্মক্ষমতা হারিয়ে শয্যাগত থাকার সময়  শ্রম দফতর থেকে দু’লক্ষ টাকা দেওয়া হবে বলে জানানো হলেও সেই টাকা দেওয়া হয়নি। বাবার মৃত্যুর পরে আরও দু’লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে বলে শ্রম দফতর থেকে জানানো হলেও, সেই টাকা পাওয়া যায়নি। এখন আবার বাবার মৃত্যুর পরে মাসিক  চার হাজার টাকা করে পেনশন দেওয়া হবে বলে  জানানো হয়েছে। মৃত ব্যক্তি কী ভাবে পেনশন পাবেন, তা তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না। অপর যে  দু’জন পাথর শিল্পাঞ্চলের শ্রমিক সিলিকোসিস আক্রান্ত  হয়ে পেনশন পাবেন বলে জানানো হয়েছে  তাঁরা হলেন  নলহাটি থানার  মধুরা বাগানপাড়ার শেখ  আজফারুল ও  মুরারই থানার  গোপালপুর গ্রামের  ধীরেন মাল। যিনি ইতিমধ্যেই কর্মক্ষমতা হারিয়ে বাড়িতে  কোনক্রমে জীবনধারণ  করছেন স্ত্রীর সহমর্মিতায়। তিনি ইতিমধ্যেই শ্রম দফতর থেকে এককালীন সাহায্য বাবদ দু’লক্ষ টাকা পেয়েছেন। এবার মাসিক চার হাজার টাকা করে পেনশন পাওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে তিনি  সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। শেখ আজফারুলও ইতিমধ্যে এককালীন দু’লক্ষ  টাকা পেয়েছেন।   এবার থেকে মাসিক চার হাজার টাকা করে পেনশনও পাবেন। কিন্তু তাঁর পরিবারে রোজগারের বিকল্প কেউ না থাকায় এখনও নিয়মিত পাথর শিল্পাঞ্চলে কাজ করে চলেছেন সিলিকোসিস আক্রান্ত শেখ আজফারুল।