• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

প্রতি পুরসভায় পর্যবেক্ষক নিয়োগ, জনপ্রতিনিধিরা ঠিকমত কাজ করছেন না: মুখ্যমন্ত্রী

বুধবার মধ্যমগ্রাম পুরসভার নজরুল শতবার্ষিকী সদনে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে জেলার বেশ কয়েকটি পুরসভার কাজের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (File Photo: SNS)

পুরসভায় কাজ তদারকি করতে পর্যবেক্ষক বসানোর সিদ্ধান্ত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার মধ্যমগ্রাম পুরসভার নজরুল শতবার্ষিকী সদনে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে জেলার বেশ কয়েকটি পুরসভার কাজের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধিরা ঠিক কাজ পরিদর্শন করছেন না। কথা বলছেন না মানুষের সঙ্গেও। ফোন বাজলেও ফোন ধরেন না। অনেক সময় মোবাইল বন্ধও থাকে। এইগুলো করা যাবে না। তাই মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য পুরসভা মানুষের জন্য ঠিকমত কাজ মঞ্চে করছে কিনা তা তদারকি করতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হবে।

এদিন বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী, রাজ চক্রবর্তী, তাপস চ্যাটার্জি, হাজী নুরুল ইসলাম, রফিকুর রহমান, অদিতি মুন্সী সহ জেলার বিধায়করা তাদের এলাকার সমস্যার কথা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রীর সামনে।

আমডাঙ্গা হাসপাতালে গাইনোকলোজিস্ট চিকিৎসক না থাকার কথা জানার সাথে সাথে চিকিৎসকের ব্যবস্থা করেন তিনি। জেলা পরিষদের সভাধিপতি বীনা মন্ডল স্বরূপনগরের বাস চলাচল নিয়ে একটি সমস্যার কথা তুলে ধরেন। প্রত্যেকটি বিষয়ই গুরুত্ব দিয়ে শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।

এদিন মুখ্যমন্ত্রীর ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, চার মন্ত্রী রথীন ঘোষ, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, সুজিত বোস, ব্রাত্য বসু, সাংসদ ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার, সৌগত রায়, নুসরাত জাহান। এদিন দুপুর একটায় মুখ্যমন্ত্রী সভামঞ্চে ঢুকে বিডিও ও আইসিদের না দেখতে পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন জেলায় জেলায় ঘুরে প্রশাসনিক সভা করছেন, তাই যে জেলায় তিনি যাবেন সেখানকার বিডিও আইসি সহ প্রশাসনিক কর্তাদের ভার্চুয়ালি নয় সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন চিংড়িঘাটার দুর্ঘটনা কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না।

বিধাননগর পুলিশ কমিদনারেট ও কলকাতা পুলিশের টানা পোড়েনের জন্য দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না চিংড়িঘাটা এলাকায়। দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। বাদুরিয়া ব্রিজের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামীকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

এদিন মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক বলেন বীজপুরে চুরি ডাকাতি বাড়ছে। দ্রুত এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এদিন মুখ্যমন্ত্রী বারাকপুর পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা ও বীজপুরের আইসিকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন। উত্তর দমদম পুরসভার জল সরবরাহ প্রকল্প জেলার বিভিন্ন ব্লকের ৭৬ টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র এদিন শিল্যান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী।

একইসঙ্গে গাইঘাটার হরিচাঁদ গুরুচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর বিভাগের ও উদ্বোধন করেন তিনি। উদ্বোধন করেন ভাটপাড়া পুরসভার জল প্রকল্প সহ জেলার বহু উন্নয়ন মূলক প্রকল্প। প্রায় দুঘন্টা এদিন মধ্যমগ্রামে প্রশাসনিক বৈঠকে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পুর ভোট কড়া নাড়ছে দরজায়। ফলে বিষয়টি হালকাভাবে নিচ্ছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

একথা মাথায় রেখে উত্তর ২৪ পরগনায় প্রশাসনিক বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই বৈঠকে পুরসভার কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন তিনি। বুধবার মধ্যমগ্রামের নজরুল শতবার্ষিকী সদনের বৈঠকে পুরসভার নাম বলে বলে প্রশাসকদের এদিন তুলোধনা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

সাফ জানান ‘যিনি ভালো কাজ করবেন না, আগামী দিনে তাঁর কথা ভাবতে হবে। সেই সঙ্গে তাঁর নির্দেশ, প্রতি পুরসভায় একজন করে পর্যবেক্ষক নিয়োগের পর্যবেক্ষকরা পুর এলাকায় ঘুরে ঘুরে কাজের খতিয়ান সংগ্রহ করবেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন। নজর রাখবেন কোন কাউন্সিলর কেমন কাজ করছেন।

সেই রিপোর্ট যাবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। মানুষের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াতে হবে। এমন অনেক অভিযোগ আছে যে মানুষের প্রয়োজনে রাজনৈতিক লোকদের পাওয়া যায় না ফোন বন্ধ থাকে বা ফোন ধরেন না। এরকম চলবে না।

রাজনীতির লোকদের সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মানুষের পাশে থাকতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আলো, জল ও রাস্তা ঠিক রাখাই অগ্রাধিকার। কাজ ফেলে রাখা যাবে না। বারাকপুর, টিটাগড়, কামারহাটি, নোয়াপাড়া, উত্তর দমদম সহ জেলার একাধিক পুরসভার কাজে যে মুখ্যমন্ত্রী খুশি নন তা এদিন তার কথাতেই স্পষ্ট।

এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পুরসভা এলাকায় অনেক সমস্যা আছে। আপনারা এলাকা ঘুরে দেখছেন না কোথায় কী সমস্যা আছে। কেন এলাকার কাজে গুরুত্ব দিচ্ছেন না? তারপরই প্রতিটি পুরসভায় একজন করে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। পর্যবেক্ষকরা কাউন্সিলরদের কাজের উপর নজরদারি করবেন।

কোথায় কী সমস্যা জানতে এলাকায় ঘুরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন। তারপর কাজের খতিয়ান নিয়ে রিপোর্ট দেবেন। পাশাপাশি, এলাকার বিধায়ক ও সাংসদদের সঙ্গেও পুর প্রশাসকদের সম্পর্ক ভালো রাখার বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘রাজনীতির লোকদের ফোনে পাওয়া যায় না, এ রকম অভিযোগ পেয়েছি। কেন মানুষ আপনাদের ফোনে পাবে না? এতদিন অনেক নিয়েছেন। এবার মানুষকে পরিষেবা দিন।’ জানুয়ারির ১ তারিখে রাজ্যে পালিত হবে ছাত্র দিস। ১২ জানুয়ারি মেধাবী পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হবে স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ।

মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী ২ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত দুয়ারে সরকার ক্যাম্প বসবে, তারপর মকর সংক্রান্তির পর ২০ জানুয়ারি থেকে আবার ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত ক্যাম্প চলবে। ২০ নভেম্বর ঋণ মেলার মাধ্যমে ১০ জন পড়ুয়ার হাতে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড তুলে দেওয়া হবে।

এদিন বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসকে কাজের গতিপ্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন করেন। তারপরই জানতে চান, ‘বিশ্বজিৎ তোর মধ্যপ্রদেশ বাড়ছে কেন?” বিশ্বজিৎ জবাব দেন, ‘দিদি খেলা ছেড়ে দিয়েছি তাই।’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “খেলা ছেড়ে দিলি কেন, খেলাধুলো ছাড়া যাবে না।’ হাবড়ার বিধায়ক তথা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে জন্মদিনের শুভেচ্ছাও জানান মুখ্যমন্ত্রী।