সোমবার ফের সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকুর আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি এবং বিচারপতি গৌরাঙ্গকান্তের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশনায় পর্যবেক্ষণ, ‘সিবিআই আদালত তাঁকে বার বার হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র সশরীরে কিংবা ভার্চুয়ালি হাজিরা দেননি। এরফলে আদালত মনে করছে, আইনগত দিক থেকে তিনি ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার আছেন। এরফলে তাঁর আগাম জামিনের বিষয় খতিয়ে দেখার প্রয়োজনই নেই। কারণ হাইকোর্ট মনে করে, কোনও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করার পর তাঁকে হাজির করার বা হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করা যেতেই পারে। সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে প্রেসিডেন্সি জেল সুপারের হাজির করা উচিত ছিল বলে মনে করে আদালত’।
সোমবার সুজয়কৃষ্ণের আইনজীবী বলেন,’প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট মানে কাস্টডি ওয়ারেন্ট নয়। প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জেলের সুপারকে দেওয়া হয়েছে। সুজয় কৃষ্ণকে তো দেওয়া হয়নি। এর মানে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র এখন গ্রেপ্তার নয়। ২০২৩ সালের ৩১ মে সুজয় কৃষ্ণকে গ্রেপ্তার করে ইডি। তারপর থেকে তাঁকে মোট ১৩ বার জিজ্ঞসাবাদ করা হয়েছে। প্রত্যেকবার তিনি সহযোগিতা করে গেছেন। ইতিমধ্যে ইডির মামলায় তাঁর জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে।’
এরপর সিবিআই-এর আইনজীবী জানান,’গত ২৬ নভেম্বর প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয় সুজয়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে। সেটি জেলের ওসিকে দেওয়া হয়। প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হলে জামিন বা আগাম জামিনের আবেদন করা যায় না’। একথা শুনে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি প্রশ্ন করেন,’আপনি একজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করলেন, তারপর তাঁকে প্রোডাকশন করছেন না। তাহলে কী হবে এই পরিস্থিতিতে?’। এর উত্তরে সিবিআই-এর আইনজীবী জানান, ‘জেল সুপার বার বার বলছে তিনি অসুস্থ। তাঁকে হাজির করা সম্ভব নয়। অসুস্থতার অজুহাত দিয়ে তিনি হাজিরা এড়িয়ে গেছেন।’
এরপর বিচারপতি বাগচি বলেন, ‘কিন্তু আপনি যদি সশরীরে বা ভার্চুয়ালি হাজির না করতে পারেন, তাহলে তাকে জেলে রাখা বেআইনি’। নিয়োগ দুর্নীতিতে ইডি-র মামলার পরিপ্রেক্ষিতে জামিন পেয়েছেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছিল সিবিআই। এই মর্মে নিম্ন আদালতে গিয়েছিল এই তদন্তকারী সংস্থা। সুজয়কৃষ্ণ অবশ্য অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ৫ বার নিম্ন আদালতে হাজিরার নির্দেশে সাড়া দেননি। সোমবার নিম্ন আদালতে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত ইডির মামলার শুনানি হয়েছে। সিবিআই-এর মামলায় আগে অসুস্থতার কারণে তিনি আদালতে উপস্থিত না থাকলেও, ইডির মামলায় ভার্চুয়ালি হাজিরা দেন সুজয়কৃষ্ণ।
সেক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে হাজির না দেওয়া আইন বিরুদ্ধ বলে মনে করছে কলকাতা হাইকোর্ট। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং গৌরাঙ্গকান্ত এই মামলার শুনানি চালায়। শুনানির সময়, ডিভিশন বেঞ্চ প্রশ্ন তুলেছিল, ‘কেন গত দেড় বছর ধরে অভিযুক্ত ইডি মামলায় আটকে থাকার সময় সিবিআই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি? আদালত সিবিআইকে নির্দেশ দেয়, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের বিরুদ্ধে নতুন কোনো তথ্য থাকলে তা আদালতে জমা দেওয়ার জন্য। আদালতের এই প্রশ্ন এবং নির্দেশ সত্ত্বেও, শেষমেশ ‘কালীঘাটের কাকু’ অর্থাৎ সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত গত মে মাসে, ২০২৩ সালে, নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে ইডি-র হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সুজয়কৃষ্ণ। ইডি-র মামলায় জামিন পাওয়ার পর, সিবিআই নতুন করে তাঁকে হেফাজতে নিতে চেয়েছিল, যাতে তাঁর বিরুদ্ধে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে পারে এবং আরও তদন্ত করতে পারে। কিন্তু সুজয়কৃষ্ণ অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে পাঁচ বার নিম্ন আদালতে হাজিরার নির্দেশ অমান্য করেন। এরপরেই সিবিআই তাঁর গ্রেপ্তার ঠেকানোর জন্য কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছিল। কিন্তু কালিঘাটের কাকুর আগাম জামিনের আবেদন না মঞ্জুর করে দেয় কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।