আরও একটি বাড়ি ধসে পড়ল বউবাজারে

বউবাজারের স্থানীয় মানুষদের সাথে কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। (Photo: IANS)

পােস্তা ব্রিজ ভেঙে পড়া নিয়ে রাজনীতি করা হলেও মেট্রো রেলের কাজের জন্য বউবাজার দুর্ঘটনা নিয়ে কোনও রাজনীতি করার পথেই হাঁটলেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কারণেই বউবাজার  ঘটনার পর সেই অর্থে কেন্দ্রকে সরাসরি দোষারােপ করেননি তিনি। বরং বলেছেন, এটা প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলেও একটা দুর্ঘটনা। কাজেই সেখানে কাউকে দোষারােপ করা চলে না। তবে বউবাজার  বিপর্যয়ের পর গৃহহারা পরিবারগুলিকে আপৎকালীন সাহায্য দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষের ওপর।

মঙ্গলবার মেট্রো রেলের জেনারেল ম্যানেজার পি সি শর্মাকে নবানে বৈঠকে ডাকেন মমতা। সৈই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দুর্ঘটনাগ্রস্তদের মধ্যে পাঁচজন প্রতিনিধি, মেয়র ফিরহাদ হাকিম, পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা, সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী, আধিকারিক, সচিব, বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। বউবাজার  দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের কাছে দাবিদাওয়া রাখেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। মুখ্যমন্ত্রীর এহেন উদ্যোগে খুশি বউবাজারের গৃহহারা পরিবারগুলি। তাদের যা দাবি ছিল, সেগুলিই মুখ্যমন্ত্রী মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের কাছে রেখেছেন বলে সন্তোষ প্রকাশ করেছে নবান্নে আসা প্রতিনিধিরা।

মমতা বলেন, বউবাজার দুর্ঘটনায় ৫৫ টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধু তাদের বাড়িঘর নতুন করে গড়ে দেওয়াই নয়, এই দুর্ঘটনার ফলে যাঁরা রুজি রােজগার হারিয়েছেন, যতদিন না তারা জীবিকায় ফিরতে পারছেন, ততদিন পর্যন্ত তাদের আর্থিক দায়ও বহন করতে হবে মেট্রো কর্তৃপক্ষকে। সেই সঙ্গে যতক্ষণ না তাদের নতুন থাকার আস্তানা বাসযােগ্য হচ্ছে, মেট্রো সিনেমার কাছে তাদের থাকার বন্দোবস্ত করে দিতে হবে মেট্রো কর্তৃপক্ষকে। যেখানে পরিবারের সবাইকে নিয়ে এই বাসচতরা থাকতে পারে। যাঁদের দোকানঘর ভেঙে গিয়েছে, তাদেরও দোকানঘর নতুন করে দেওয়ার জন্য দাবি রাখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।


যেসব পরিবারের পরনের পােশাক, বাসনপত্র কিছুই সঙ্গে নিয়ে অস্থায়ীভাবে তাদের দৈনন্দিন জীবনধারণের জন্য অবিলম্বে ৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার জন্যও আবেদন রাখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজারকে বলেন, এটা আপনাদেরই দেখতে হবে। এই মানুষগুলাের কিছু করার নেই। বর্ধিষ্ণু পরিবারগুলি হঠাৎ করে সব হারিয়েছে মানবিক নিজস্ব কারণেই এই মানুষগুলির পাশে দাঁড়াতে।

মুখ্যমন্ত্রীর রাখা দাবিগুলির সবগুলিতে এখনই সম্মতি না দিলেও যাদের বাড়ি ভেঙে পড়েছে তাদের বাড়ি নতুন করে তৈরি করে দেওয়ার বিষয়টি অনুমােদন পেয়েছে মেট্রো কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। এদিন নবান্নের বৈঠকে মেট্রো কর্তৃপক্ষের তরফে পি সি শর্মা এই দুর্ঘটনার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে। যাদের বাড়ি ভেঙে পড়েছে, তাদেরকে পুনর্বাসন দেওয়া এবং বাড়ির পুনর্নির্মাণ করা বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেন মেট্রো। কর্তৃপক্ষের তরফে পি সি শর্মা।

প্রাথমিকভাবে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ত্রাণকার্য শুরু করা হবে। আশা করছি আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। ইতিমধ্যেই সিঙ্গাপুর থেকে বিশেষজ্ঞের দলকে আনা হয়েছে। এই দুর্ঘটনার মােকাবিলায় যথাসম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অতিপূরণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে মেট্রোর বাের্ড অফ ডিরেক্টরস। পি সি শর্মা বলেন, এটা আমার একার সিদ্ধান্ত নয়। বউবাজার দুর্ঘটনার পর রাজ্য সরকারও যথেষ্ট সহযােগিতার হাত বাড়িয়েছে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। বউবাজার বাড়ি ভাঙার ঘটনার পর একটা একটা কমিটি তৈরি করা হয়েছে। যে কমিটিতে থাকছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, স্থানীয় সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বলেন, বউবাজার দুর্ঘটনায় অনেকে বাড়ি ছেড়ে অন্য আশ্রয়ে এলেও তাদের জিনিসপত্র রয়ে গিয়েছে ওই বাড়িতেই।

মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ এবং বিপর্যয় মােকাবিলা দফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন সেইসব বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা সহযােগে নজরদারি চালাতে। যাতে তাদের কোনও জিনিসপত্র খােয়া না যায়। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, দুর্ঘটনাগ্রস্তদের জিনিসপত্র, দরকারি নথিপত্র নিরাপদে রাখার জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করা হবে। সেজন্য রাজ্য সরকার ঘটনাস্থলে একটা কন্ট্রোল রুম তৈরি করবে। যেখান থেকে খবরাখবর পাওয়া যাবে। মেট্রো কর্তৃপক্ষের কাজের সহযােগিতার জন্য থাকবে কলকাতা পুলিশ, বিপর্যয় মােকাবিলা দফতর, পরিবহন দফতর।