• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

অন্ন চাইছেন স্বয়ং অন্নপূর্ণা, পরিযায়ী উমার ত্রাণের আকুতি শােনা যাবে বড়িশা’র মণ্ডপে

উপচে পড়া নৈবদ্যের ডালি সেখানে অতীত। অন্নপূর্ণা সেখানে হাত পেতে চাইছে দু'মুঠো খাবার। এ যেন উৎসবের মােড়কে বাস্তবের এক আয়না। 

বড়িশা ক্লাবের পরিযায়ী উমা। (Photo: Twitter | @amitavasomu)

মর্ত্যের কঠিন বাস্তবে যদি সহযাত্রীদের সঙ্গে পা মেলাতেন উমা! কেমন হত সেই যাত্রাপথ! এই যদি-কে সম্বল করে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার ছবি চলতি বছর পুজোয় ধরেছে বড়িশা ক্লাব।

উমা সেখানে দশভুজা নন, ঘরের মেয়ে। যখন বাড়ি ফেরা অদম্য ইচ্ছা নিয়ে রক্তাক্ত পায়ে হেঁটে চলেছে বহু মানুষ, তখন দেবীরূপে নয়, পরিযায়ী শ্রমিকদের একজন হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন দুর্গা। অলঙ্কারের ছিটেফোঁটাও নেই তাঁর শরীরে। কার্তিককে কোলে নিয়ে হেঁটে চলেছেন তিনি। সঙ্গে রয়েছেন লক্ষ্মী, গণেশ, সরস্বতী। খুঁজছেন অন্ন-ত্রাণ। 

থিম-এর প্রত্যেকটি পরতে পরতে শিহরণ জাগিয়েছে শিল্পীর অনবদ্য শব্দশিল্প। মণ্ডপে ঢােকার মুখে শােনা যাচ্ছিল– মায়ের কাছে যাচ্ছি, ত্রাণ নিতে, ত্রাণ দেবে গাে এই শব্দ। একই সুরে ত্রাণ চাইতে শােনা যাচ্ছিল লক্ষ্মী-সরস্বতী-কেও। 

উপচে পড়া নৈবদ্যের ডালি সেখানে অতীত। অন্নপূর্ণা সেখানে হাত পেতে চাইছে দু’মুঠো খাবার। এ যেন উৎসবের মােড়কে বাস্তবের এক আয়না। 

নিজের ভাবনায় মণ্ডপটি সাজিয়েছেন শিল্পী রিন্টু দাস। তিনি বলেন, লকডাউনের সময় দেশজুড়ে এই হাহাকারের ছবি সামনে এসেছিল। ছেলেকে কোলে নিয়েই মাইলের পর মাইল হেঁটেছেন বহু উমা। সেই দৃশ্যই মণ্ডপে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছেন তিনি। 

মণ্ডপে চোখের সামনে ভেসে ওঠা ছবিকে মনের মধ্যে ফুটিয়ে তুলতে থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শব্দের ব্যবহার করেছেন শিল্পী। শােনা যাচ্ছিল ত্রাণ নিয়ে হাঁকডাক- ভিড় করবেন না। লাইনে দাঁড়ান। একে একে এগিয়ে আসুন।

নিরাপত্তারক্ষীদের গলায় সামান্য বিরক্তির সুর। তারা উমার থেকে জানতে চাইছেন, কোথায় যাচ্ছেন? কি প্রকার? আর এই কথা শুনেই থমকে দাঁড়িয়েছে উমা। 

শিল্পী রিন্টু জানান, তাঁর তত্ত্বাবধানে কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্পী পল্লব ভৌমিক উমার মূর্তি বানিয়েছেন নিজের বাড়ির মেয়ের মত করে। উমার পরনের শাড়িতে কোনও রং দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র রয়েছে মাটির গন্ধ, মাটির ছোঁয়া। নিতান্তই সাধারণ ঘরের মেয়ের মত। 

শিল্পীর কথায়, সাধারণ মানুষকে বাস্তবের মুখােমুখি দাঁড় করিয়ে চিন্তা করানাের জন্যই এই থিম বেছে নিয়েছেন তিনি।

এদিকে করােনা পরিস্থিতিতে আদৌ এবছর পুজো হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে ছিল বড়িশা ক্লাব। শিল্পীকে তারা স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, চলতি বছরের সামগ্রিক পরিস্থিতির জন্য অতিরিক্ত খরচ করা কোনওভাবেই সম্ভব নয়। কারণ সে সময় গরিব মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ২৫ হাজার কিলাে চাল পরিযায়ী শ্রমিকদের বিতরণ করেছিল সংশ্লিষ্ট ক্লাব। ফলে ক্লাবের ভাঁড়ার প্রায় শুন্য ছিল।

তখন শিল্পী জানান, পরিযায়ী শ্রমিকদের বিতরণ করা চাল যে বস্তাগুলিতে রাখা হয়েছিল সেগুলি দিলেই তিনি তাঁর মত করে সাজিয়ে নেবেন মন্ডপ। এই কথায় চমকে উঠেছিলেন ক্লাবের কর্তারা। 

শিল্পী জানান, গত কয়েক বছর ধরে ক্লাবের তরফে তাঁকে পারিশ্রমিক দেওয়া হয়েছিল মণ্ডপ তৈরি জন্য। কিন্তু এবছর তার পালা ছিল ক্লাবকে কিছু ফেরত দেওয়ার। বড়িশা ক্লাবের পক্ষ থেকে সুদীপ পােল্লে জানান, শিল্পীকে তারা ৫০০০ খালি বস্তা দিয়েছিলেন। অত্যন্ত কম বাজেটে তিনি এই মন্ডপ তুলে ধরেছেন। চলতি বছর পুজোয় বহু মানুষকে ত্রাণ বিতরণ করার পরিকল্পনা আছে ক্লাবের, জানান তিনি।