পুলিশের ছদ্মবেশে ছাদ থেকে ঠেলে খুনের অভিযোগ, হাওড়ায় ছাত্রনেতা আনিশের মৃত্যু ঘিরে রহস্য বাড়ছে

এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে আনিশ ছিল সামনের সারিতে কলকাতার রাজপথে যে মিছিল হত সেই মিছিলে আনিশ ছিল পরিচিত মুখ।

আরও অনেককে জাগ্রত করতে আনিশের প্রতিবাদী কণ্ঠ অন্যদের অনুপ্রাণিত করত। সেই প্রতিবাদী যুবক আর্নিশের মৃত্যু ঘিরে তৈরি হল রহস্য।

আমিশের মৃত্যুর ঘটনায় গোটা এলাকায় শোকের ছায়া। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন আনিশের মৃত্যুতে প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে।


হাওড়ার আমতার এক ছাত্রনেতাকে তিনতলার ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে ঘুমের অভিযোগ ঘিরে উত্তপ্ত হতে চলেছে রাজ্য রাজনীতি।

নিহত ওই ছাত্রনেতার নাম আনিশ খান (২৮)। আনিশ আইএসএফ করতেন। বানান কলেজে পড়ার সময় থেকে তিনি সমর্থক ছিলেন।

এই ঘটনায় আমতা থানার পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার সকালে থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করতে যান আনিশের বাবা ও ভাই।

এই ঘটনার খবর পাওয়ার পর আইএমএফ বিধায়ক নৌদান সিদ্দিকি মান আনিশের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে। এদিকে ছেলের মৃত্যু প্রসঙ্গে আনিশের বাবা সালাম খান অভিযোগ করেন।

শুক্রবার রাতে পুলিশ ও জনাতিনেক সিভিক পুলিশ আমাদের বাড়িতে আসেন। বাড়িতে এসে দরজা খুলতে বলেন। দরজা না খুললে গুলি করার ভয় দেখায়।

দরজা খুলে দেওয়ার পর তারা আমাকে ঠেলে দিয়ে বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ে আমার ছোটো ছেলে আনিশের নাম ধরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।

আমার ছেলেকে তিনতলা থেকে নিচে ফেলে দিয়ে দ্রুত ওই সিভিক পুলিশরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।

কিছু একটা পড়ে যাওয়ার শব্দে বাইরে থেকে বেরিয়ে দেখি রক্তাক্ত আনিশের দেহ বাড়ির বাইরে পড়ে আছে। আমার চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে আসে।

আমতা থানায় আনিশের মৃত্যুর খবর দেওয়া হলেও পুলিশ আসেনি। শনিবার সকালে পুলিশ আমাদের বাড়িতে আসে।

রাতে পুলিশ না আসায় এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়। পুলিশ আনিশের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে।

এদিকে আনিশের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে তাঁর বাড়িতে যান মানতার ভূমূল পাল। তিনি পরিবারের পাশে থাক দেন। আনিশ আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছে।

সে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস কমিউনিকেশন নিয়েও পড়াশুনা করছিল। আনিশ কলকাতাতেই থাকে। মাঝেমধ্যে বাড়ি যেত।

কলকাতা থেকে শুক্রবারই নিজের গ্রামের বাড়ি সারদাতে গিয়েছিল একটি জলসায় যোগ দেওয়ার জন্য। জলসা শুনে বাড়ি ফিরেছিল সে।

তার কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ আসে আনিশের বাড়িতে। প্রথমে পুলিশ বলে তারা বাগনান থানা থেকে এসেছে। আনিশের নামে একটি কেস রয়েছে বাগনান থানায়।

যদিও জানা যাচ্ছে বাগনান থানায় আনিশের নামে কোনও কেস নেই। তাহলে কে বা কারা রাতের অন্ধকারে আনিশের বাড়িতে পুলিশ পরিচয়ে গেল তা নিয়েই যা বাড়ছে।

এদিকে আনিশের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর বাড়িতে যান আইএসএফ নেতা নৌসান সিদ্দিকি। আর্নশের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে তিনি কথা বলেন।

তারপর এ প্রসঙ্গে নৌসাদ সিদ্দিকি এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তিনজন সিভিক ভলিন্টিয়ায় একজন পুলিশ অফিসার আনিশের বাড়িতে গিয়েছিল বলে জানতে পেরেছি

জোর করে ঘরে ঢুকে তারা বাড়ির তিনতলার থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে নিচে নেমে আসে। লোরে আওয়াজ শুনে বাড়ির লোকজন উপরে ছুটে যান। দেখেন ছেলে পড়ে রয়েছে। সেই আনিশ।

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সময় বেরিয়ে যাওয়ার সময় সিভিক ভলেন্টিয়াররা দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিককে বলে চলুন স্যার কাজ হয়ে গিয়েছে।

এই চারজন আমতা থানার পুলিশ ছিল নাকি পুলিশের ছদ্মবেশে অন্য কেউ ছিল তা নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে।

কারণ ভাঙড়ের বিধায়ক নৌসান সিদ্দিকি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন আমতা থানার বড়বাবু নাকি তাকে বলেছেন থানা থেকে কাউকে পাঠানো হয়নি তাহলে পুলিশের পোশাকে কারা আনিশের বাড়িতে গেল তা হওয়া জরুরি বলেও দাবি করেন নৌসাদ।

তবে এ প্রসঙ্গে ভাঙড়ের বিধায়কের আরও দাবি এমনও হতে পারে থানার অর্ডার ছাড়া কেউ দিয়েছে তাহলে কে গেলে করে অর্ডারে গেল তাও খতিয়ে দেখতে হবে পুলিশকে।

এই ঘটনা প্রসঙ্গে এসকথাই নেতা সুজন ভট্টাচার্য বলেন, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রহস্য বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে আন্দোলন চলছে। আশি তার সঙ্গে যুক্ত ছিল।

যে বা যার আনিশের হত্যাকান্ডের সঙ্গে যুক্ত তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিত সুর বলেন, ভয়ংকর ঘটনা।

এভাবে প্রতিবাদীদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে যা কখনও মানা না আমতার সারদা গ্রামে দক্ষিণ যন পাড়ায় তিনতলা বাড়ি মানিশদের আনিশরা তিন ভাই তিন বোন। আর্নিশ ছোট। আনিশের মৃত্যুতে রীতিমতো শোকে পাথর তার পরিবারের লোকেরা।

এদিন উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে আর্নিশের নেই নিতে হাজির হয়েছিল আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তাঁর সহপাঠীরাও। সেখানেই তারা নায়বিচারের দাবি তোলেন।

এরপর আর্নিশের দেহ নিয়ে তারা রওনা হয়ে যান সারদাতে। এই টায় অভিযোগের কাঠগড়ায় আমতা থানার পুলিশ।

যদিও এই প্রসঙ্গে হাওড়া গ্রামীণ জেলার পুলিশ সুপার সৌমা রায় বলেন, এক্ষেত্রে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে পরিবার।

সেকারণে একজন ডিএসপি পদমর্যাদার আধিকারিককে দিয়ে এই রে ঘটনার তদন্ত করা হবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সামনে এলে সবকিছু স্পর হবে।

এদিকে আনিশের মৃত্যুর ঘটন প্রতিবাদে তার সহপাঠীরা এবং বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পার্ক সার্কাসে মোমবাতি নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল সংগঠিত করা হয়। এর ফলে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এলাকায়। আনিশকে খুন করা হয়েছে এই অভিযোগ তুলে শনিবার সন্ধ্যায় পার্ক সার্কাসে বিক্ষোভ দেখার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা।

যার জেরে পার্ক সার্কাস চত্বর জুড়ে প্রস্তুমার কান্ড ঘটে। অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে সেভেন পয়েন্ট ক্রসিং। প্রথমে মোমবাতি নিয়ে শান্তিপূর্ণ মিছিল এবং প্রতিবাদ হলে মেমো রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়।

পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সস্তাবতি হয় মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের। সেভেন পয়েন্ট ক্রসিংয়ে মানববন্ধন করতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের।

রাস্তা অবরোধ করেও বিক্ষোভ চলে এরপর পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যেতে দেখা যায় পড়ুয়াদের বেনিয়াপুকুর থানার পুলিশ জানায় আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদ্মপুকুর মোড় পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ মিছিলের কথা ছিল কিন্তু আচমকাই পরিস্থিতি পাল্টে গিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আনিন্দের মৃত্যুর বিচার চেয়ে পড়ুয়াদের বিক্ষোভ রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়।

এদিকে ছাত্রনেতা আনিশ খানের হত্যাকারীদের শান্তির দাবিতে সব সব রাজনৈতিক দলই।

আজ রবিবার নিহত ছাত্রনেতার বাড়িতে থাকেন বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল তিনি সেভ ডেমোক্রেসি ফোরামের নেতারা।

সেই দলে থাকবেন প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান ও সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য।

এই হত্যাকান্ড সম্বন্ধে মান্নান বলেন এক সময় রিজওয়ানুর রহমানের মৃত্যুর পর বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী আন্দোলনে নেমেছিলেন। সেই সময় প্রান মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ব্রিজওয়ানের বাড়িতে তাদের পরিবারকে আশ্বস্ত করেছিলেন।

কিন্তু আনিশের মৃত্যুর ঘটনায় কোনও প্রতিক্রিয়া মুখ্যমন্ত্রী দেননি যা দেখে আমরা সত্যিই হতবক। রিজওয়ানুর হত্যায় যে পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল তিনি পুরস্কৃত হয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে কলকাতার মেয়র তথা রাজামন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ফিরহাদ হাকিম বলেন, কে অপরাধ করেছে তা দেখতে হবে। আইন আইনের পথে চলবে।

পুলিশ প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। এমন দুঃসাহসিক কাজ যারা করে তাদের পেছনে কেউ আছে কিনা বা জন্য কোনও উদ্দেশ্য আছে কিনা তা দেখার পরে ঘটনা বাংলায় হয় না।

এমন নৃশংস ঘটনা উত্তরপ্রদেশেই হয়। এর পেছনে গভীর কোনও ষড়যন্ত্র আছে কিনা তা পুলিশকে দেখতে হবে। বাইরে থেকে কেউ এসে এ অজ করল কিনা তারও তদন্ত হওয়া উচিত।