সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের সিঙ্গেল বেঞ্চে হাওড়ার আমতায় আনিস মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে মামলার শুনানি চলে। এদিন সিটের দাখিলকৃত ৮২ পাতার রিপোর্ট নিয়ে চরম অনাস্থা প্রকাশ করে নিহত আনিস খানের পরিবারের আইনজীবী। হাওড়ার আমতায় যুবনেতা আনিস খানের মৃত্যুর তদন্ত রিপোর্ট কে মিথ্যা বলে জানালো আনিসের পরিবার।
এদিন কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের এজলাসে এই মামলার শুনানি পর্বে নিহত আনিসের পরিবারের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, ‘রাজ্য আনিসের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলছে, ‘খুন’ বলছে না। আমরা তা মেনে নিতে পারছি না। সিটের এই রিপোর্টে অসংখ্য অসঙ্গতি রয়েছে‘।
এরপরই বিচারপতি কোথায় কোথায় অসঙ্গতি রয়েছে তা বিস্তারিত তথ্য দিয়ে হলফনামা পেশের নির্দেশ দেন মামলাকারীর আইনজীবীকে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি হাওড়ার আমতায় ছাত্রনেতা আনিসের রক্তাক্ত দেহ তাঁর বাড়ির সামনে থেকে উদ্ধার হয়।
এই যুবনেতার পরিবারের অভিযোগ, আনিসের মৃত্যুর আগে বাড়িতে এসেছিলেন কয়েক জন পুলিশকর্মী। তাঁরা আনিসের খোঁজে বাড়ির তিন তলাতেও যায়’। সেখান থেকেই আনিসকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করে থাকে পরিবার। সিবিআই তদন্তও দাবি করা হয় পরিবারের তরফে।
যদিও আদালত রাজ্য পুলিশকে (সিট) ঘটনাটির তদন্তভার দেয়। রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল আনিস খানের মৃত্যু মামলার তদন্ত শুরু করে। যার রিপোর্ট গত সপ্তাহে হাইকোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। আর তা নিয়েই চরম আপত্তি তুলেছে নিহত আনিসের পরিবার।
এদিন আইনজীবী মারফত নিহতের পরিবার জানিয়েছে, সিটের এই রিপোর্টে অনেক ভুল আছে’।
এদিন শুনানি পর্বে আনিসের পরিবারের অভিযোগের পরিপেক্ষিতে বিচারপতি রাজাশেখর মাহার আনিসের পরিবারকে নির্দেশ দেন, ‘তাঁদের আপত্তির কথা হলফনামা দিয়ে আদালতকে জানাতে। এক সপ্তাহের মধ্যেই ওই হলফনামা দিতে হবে। রাজ্যের রিপোর্টে কোথায় কোথায় আপত্তি রয়েছে, তা তাঁরা হলফনামায় উল্লেখ করবেন।
এই মামলায় গত ১৯ এপ্রিল হাইকোর্টে ৮২ পাতার তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে রাজ্য। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১২ মে। গত সপ্তাহে ৮২ পাতার রিপোর্ট মুখবন্ধ খামে জমা দিয়েছে সিট।
তবে এই রিপোর্ট নিয়ে চরম অনাস্থা প্রকাশ করলো আনিসের পরিবার। আনিসের পরিবারের দাবি, পরিকল্পিত খুনের ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে প্রমাণ করতে তৎপর সিট।
এদিন কলকাতা হাইকোর্টের তরফে আনিসের পরিবার থেকে এইরুপ অভিযোগ পেয়ে নির্দেশ দেয় আদালত। তদন্তে ঠিক কী আপত্তি রয়েছে? তা এক সপ্তাহের মধ্যে মামলাকারীদের হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে।
এদিন এই মামলার সওয়াল-জবাবে মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, ‘আসল ঘটনা নিয়ে কোনও তদন্তই হচ্ছে না। বারবার জোর দিয়ে দাবি করা হচ্ছে যে পড়ে গিয়েই আনিসের মৃত্যু হয়েছে, আত্মহত্যা বলে চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
তবে এটা একেবারেই সত্যি নয়। অপরাধীদের খোঁজার চেষ্টাও চলছে না। জিজ্ঞাসাবাদ হচ্ছে না। বরং বোঝানোর চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে যে এটি হত্যা নয়, আত্মহত্যা’।
এইরূপ অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাকারীকে হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আগামী ১২ মে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বলে জানা গেছে।
আনিস মামলায় বিচারপতির গড়হাজির নিয়ে প্রশ্ন তোলায় হাইকোর্টের কাছে আদালত অবমাননার জন্য লিখিতভাবে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল আনিসের বাবা সালেম খানকে।