শুক্রবার পরিবেশ দিবসে হরিশ পার্কে শহর কলকাতায় বৃক্ষরোপণ উদ্যোগের সূচনা করে নতুন করে সবুজ বাঁচানোর বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে এই মঞ্চেই তিনি অভিযোগ করেন, আম্ফান বিধ্বস্ত বাংলার কথা তেমনভাবে জাতীয় প্রচারমাধ্যমে আসেনি যতটা মহারাষ্ট্রের নিসর্গ নিয়ে প্রচার চালানো হয়েছে। এবং এই বৈমাত্রেয় আচরণের নেপথ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা। এমনটাই অভিমত মমতার।
শুক্রবার পরিবেশ দিবসে বৃক্ষরোপণ উদ্যোগের মঞ্চে মমতা বলেন, মহারাষ্ট্রে ঘন্টায় ৬০-৬৫ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের সংবাদ জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হল। কিন্তু বাংলায় যে ঘন্টায় ১৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় এল তা জাতীয় প্রচার মাধ্যমে গুরুত্ব পেল না। এর কারণ বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার মনোভাব।
মমতা বলেন, একদিকে কোভিডের দুভোর্গ, অন্যদিকে আম্ফানের দুর্যোগ। আমাদের দু’য়ের বিরুদ্ধেই লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত আম্ফানে বিপর্যক্ত ২৫ লক্ষ কৃষক, ৫ লক্ষ গৃহহীন, ৩০ হাজার মৎস্যজীবী, পানবরজের এক লক্ষ চাষীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। ১০ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিককে ফেরাতে ২০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে রাজ্যের কোষাগার থেকে। গত তিন মাসের রাজ্যের কোনও আয় নেই। তা সত্ত্বেও সামাজিক পেনশন, কর্মচারীদের বেতন, অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন সব দিয়ে আসছে রাজ্য সরকার।
আম্ফান পরবর্তী সময়ে রাজ্যে বিদ্যুৎ এবং পানীয় জলের পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় বিরোধীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। এই প্রসঙ্গেও এদিন বিরোধীদের তোপ দাগেন মমতা। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের বিষয় নিয়ে মুম্বই, চেন্নাই, ফণী পরবর্তী ওড়িশার প্রসঙ্গ টানেন। তিনি বলেন, ফণীর পর একমাস ওড়িশার বহু জায়গায় বিদ্যুৎ ছিল না। চেন্নাইতে বর্ষার সময়ে জল জমা তো প্রতিবছরের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বিরোধীদের উদ্দেশে বলেন, দুর্যোদের সময়ে রাজনীতি করনে না। আমরা তাো দুর্যোগের সময় মহারাষ্ট্র সরকাররে সহানুভূতি জানিয়েছি। কিন্তু বাংলাকে সবসময়ই আক্রমণকার জায়গায় থাকে বিরোধীরা।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুন্দরবন। সেখানকার ৪২০০ বর্গ কিলোমিটার জায়গার মধ্যে প্রায় ১৬০০ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল আম্ফানে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহর কলকাতায় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার গাছ পড়ে গিয়েছে। এইজন্য নতুন করে পরিবেশ দিবসে প্রায় ৫০ হাজার গাছ লাগানোর উদ্যোগের সূচনা করা হল বিশ্ব পরিবেশ দিবসে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বড় বড় গাছ লাগিয়ে ছোট ছোট গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া উচিত। যেগুলি ঝড়েও টিকে থাকবে। নিমের মতো অ্যান্টিসেপটিক গাছ লাগানোরও পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী। এই কাজে পাড়ার ক্লাব, স্কুল কলেজগুলিকে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানান।
মমতা বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভের। পরিবেশ দিবসে সেখানেও বৃক্ষরোপন করা হয়। আগামী ১৪ জুলাই বনদিবসেও সেখানে গাছ লাগানো হবে বলে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।