আম্ফান মিটতেই করোনা আবহেই ফের জমে উঠল রাজনৈতিক তরজা। মঙ্গলবার দিল্লি থেকে বিজেপির ভার্চুয়াল সভায় তৃণমূলকে একাধিক ইস্যু নিয়ে তুলোধোনা করলেন অমিত শাহ। পাল্টা জবাব দিতে দেরি করেনি তৃণমূলও। অমিত শাহর ভার্চুয়াল জনসভার পাল্টা ভিডিও কনফারেন্সে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাল তৃণমূল। সূত্রধরের ভূমিকায় ছিলেন রাজ্যসভার সদস্য ডেরেক ও ব্রায়েন। এছাড়া ছিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী তথা শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র এবং রাজ্যসভার তৃণমূল সদস্য দীনেশ ত্রিবেদী।
তাঁরা সকলেই একযোগে প্রশ্ন তোলেন, করোনার সঙ্কটকালে রাজনীতি নিয়ে মাতামাতি কেন বিজেপির? তৃণমূল নেতা মন্ত্রীদের বক্তব্য, এদিনের ভার্চুয়াল জনসভায় অমিত শাহকে যে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তার উত্তর না দিয়ে অসত্য আর বিভ্রান্তিকর বিবৃতি দিয়ে গেলেন তিনি।
ডেরেক ও ব্রায়েন এদিন অমিত শাহকে কটাক্ষ করে বলেন, উনি ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে আছেন, তাই এড়িয়ে গেলেন রিয়েলিটির প্রশ্ন। বাংলা থেকে মমতা বিতাড়নের আগে দেশে ঘাঁটি গেড়ে বসা চিনকে কেন উৎখাত করতে পারছে না সেই প্রশ্নও তোলেন ডেরেক। শাহর করোনা এক্সপ্রেসে মমতা বিদায়ের কটাক্ষের উত্তরে তৃণমূল নেতাদের জবাব ছিল পরিযায়ী শ্রমিক নিয়ে ছেলেখেলা করছে কেন্দ্রীয় সরকার।
এদিন অমিত মিত্র বলেন, অমিত শাহ তাঁর ভার্চুয়াল জনসভায় যেসব বিবৃতি দিয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে নকলনবিশির প্রচেষ্টা, মিথ্যাচারণের অভ্যেস আর সত্যগোপনের প্রবণতা। অর্থমন্ত্রীর কথায়, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে মুখ্যমন্ত্রী যে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু করেছিল তার সুবিধে পান দেড় কোটি পরিবার তথা সাড়ে সাত কোটি মানুষ। প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিমার সুবিধে পান। সেই প্রকল্পেরই অনুকরণে বিজেপি চালু করে আয়ুষ্মন ভারত।
মঙ্গলবারের জনসভায় যে প্রকল্প এই রাজ্যে বাস্তবায়িত হতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন অমিত শাহ। কিন্তু রাজ্যে চালু থাকা স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে কোনও কথা বলেননি। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এদিন প্রশ্ন তোলেন পরিযায়ী শ্রমিকদের এক পয়সাও নগদ অর্থ সাহায্য করেছে কেন্দ্রীয় সরকার? ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে তিন লক্ষ কোটি ঋণ গ্রহণের সুযোগ ছাড়া কোনও আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কেন্দ্র? তাও বর্তমানে ব্যাঙ্কগুলি যেভাবে প্রায় ডেউলিয়া অবস্থায় পৌছচ্ছে, সেখানে তাদের ঋণদানের বিষয়টিও বাস্তবে কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে।
অমিত শাহ এদিন পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন উত্তরপ্রদেশে ১৭০০ টি, বিহারে ১৫০০ টি প্রবেশ করেছে। সেখানে বাংলায় এখনও পর্যন্ত পৌছেছে ২৩৭ টি ট্রেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলায় ফেরানো নিয়ে রাজ্য সরকারের অনীহা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন অমিত শাহ। এই বিষয়ে মিথ্যা তত্ত্ব খাড়া করছেন বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতা মন্ত্রীরা। তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীরা বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনার অভাবেই ভিন রাজ্যে আটকে থাকা শ্রমিকদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
অমিত মিত্র এদিন বলেন অমিত শাহের ভাষণ মিথ্যা বিবৃতিতে ভরা। অমিত শাহ বলেছেন কেন্দ্রের টাকায় রাজ্যে দশ কোটি শৌচালয় হয়েছে কিন্তু বাস্তবে হয়েছে মাত্র ১.৩৪ কোটি। রাজ্যের বেহাল বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিয়ে অমিত শাহের সমলোচনার উত্তরে অমিত মিত্র উদাহরণ দিয়ে বলেন, তৃণমূল আমলে বিদ্যুৎ উপভোক্তার সংখ্যা পঁচাত্তর লক্ষ থেকে বেড়ে দু’কোটি হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন প্রকল্প, জিএসটি ক্ষতিপূরণ, খাদ্যের ভর্তুকি ইত্যাদি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্যের বকেয়া রয়েছে প্রায় ৫৩ হাজার কোটি। এছাড়া আম্ফানে রাজ্যের প্রায় ১.০২ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেখানে এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে মাত্র ১০০০ কোটি টাকা পেয়েছে রাজ্য।
অমিত মিত্রের বক্তব্য, রাজ্যের বকেয়া অর্থ না দিয়ে আম্ফানের সামান্য টাকা দিয়ে অপপ্রচার চালাতে চাইছে কেন্দ্র। প্রাক্তন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদি অমিত শাহকে উদ্দেশ করে বলেন, গত কয়েক মাস ধরে আপনি যে টুইটার ফেসবুকে নানা মন্তব্যে পশ্চিমবঙ্গকে নিশানা করেছেন, তা যে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল, তা এদিনের ভার্চুয়াল র্যালিতে বোঝা গেল।
করোনায় ভিনরাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে ছেলেখেলা করে, রাজ্যের আর্থিক পাওনা নিয়ে রাজনৈতিক খেলা করে কেন্দ্রীয় সরকার এই দুঃসময়ে অবিবেচকের মতো কাজ করছে বলে মনে করছে তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীরা।