কোচবিহারের রাসচক্রের নির্মাতা আলতাফ মিয়াঁ প্রয়াত। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তবে দীর্ঘ দিন শারীরিক অসুস্থতার কারণে কর্মক্ষমতা হারিয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে তিনি রাসচক্র বানিয়ে আসছিলেন। কোচবিহারের সম্প্রীতির প্রতীক মহারাজাদের কুলদেবতা মদনমোহন দেবের রাসচক্র। বংশপরম্পরায় সেই দায়িত্বই পালন করছেন আলতাফ মিয়াঁরা। আলতাফের ছেলে আমিনুর হোসেন বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরেই বাবা অসুস্থ ছিলেন। প্রায় ১০ দিন এমজেএন মেডিক্যালে ভর্তি থাকার পর শনিবার রাতে মারা গিয়েছেন।
কোচবিহারের হরিণচওড়ার বাসিন্দা ছিলেন আলতাফ মিয়াঁ। অসুস্থতার জন্য গত দু’বছর তাঁর তত্ত্বাবধানে থেকে ছেলে আমিনুর রাসচক্রটি বানান।রা সমেলার সময় বিভিন্ন মহলে মাতামাতি হলেও আলতাফ সারাবছর প্রচারের বাইরেই থাকতেন। তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন মহকুমাশাসক কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন বয়সজনিত রোগে ভুগছিলেন। দিন কয়েক ধরে মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীনও ছিলেন। তবে চিকিৎসায় সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। রবিবার তাঁর দেহ কবর দেওয়া হবে। আমরা পরিবারের পাশে থাকব।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, কোচবিহারের বিখ্যাত রাস মেলার রাসচক্রের প্রস্তুতকারক আলতাফ মিয়াঁ – এর প্রয়াণে আমি মর্মাহত। আমি তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি। বাংলার যে ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্য তার অন্যতম ধারক-বাহক ছিলেন তিনি। তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারকে আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাই। আমি জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি শেষকৃত্যে পরিবারকে সবধরনের সাহায্য করার জন্য।
কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের সভাপতি তথা জেলাশাসক অরবিন্দকুমার মিনা বলেন, আলতাফ মিয়াঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সহ যাবতীয় কাজ ট্রাস্ট বোর্ডের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে। আমরা ওঁনার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। পাশে আছি। বোর্ডের সচিব কৃষ্ণগোপাল ধারার কথায়, সত্যিই খুব খারাপ লাগছে। আলতাফ মিয়াঁর প্রয়াণ আমাদের কাছে অনেক বেদনার।
১৮১২ সালে কোচবিহারের ভেটাগুড়িতে প্রথম রাসমেলার আয়োজন হয়। হিন্দু, মুসলিম ও বৌদ্ধ সংস্কৃতির সংমিশ্রণে তৈরি করা হয় রাসচক্র। এক সময় রাসচক্র ঘুরিয়ে রাজারা রাসমেলার সূচনা করতেন। এখন রাজার পরিবর্তে মন্দিরের ট্রাস্টি এবং জেলাশাসক রাসচক্র ঘুরিয়ে মেলার সূচনা করেন। প্রথমে রাজাদের তরফে এই রাসচক্র তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় কোচবিহারের হরিণচওড়া এলাকার বাসিন্দা মামুদ মিয়াঁকে। তারপর আজিস, আলতাফ হয়ে এখন রাসচক্র সামলাচ্ছেন আমিনুর হোসেন।