• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের অধ্যক্ষকে অপসারণের দাবিতে সরব বিভাগীয় প্রধানরা

পার্থসারথি সরকার বলেন, 'এই দুর্নীতিগ্রস্ত এবং থ্রেট কালচারে অভিযুক্ত অধ্যক্ষের উপস্থিতিতে আমরা পরীক্ষা নেব না। নিলে আবার অনেক ভালো ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে পড়ে যাবে। স্বাস্থ্য ভবনকে পদক্ষেপ করতে হবে।'

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিৎ সাহাকে অপসারণের দাবিতে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকে চিঠি লিখলেন হাসপাতালের ১৭ জন বিভাগীয় প্রধান। দুর্নীতি মুক্ত ও স্বচ্ছ কলেজ গড়ার দাবিতে তাঁকে সরানোর আর্জি জানানো হয়েছে।  ১৭ জন বিভাগীয় প্রধান চিঠিতে জানিয়েছেন, অধ্যক্ষকে অপসারণ না করলে কলেজের আসন্ন পরীক্ষায় তাঁরা অংশগ্রহণ করবেন না। এর জেরে ফের হাসপাতালে অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আরজি কর মেডিক্যালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ–খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে থ্রেট কালচার ও দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে। এর জেরে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে হয়েছে আন্দোলন। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজও এর ব্যতিক্রম নয়। এই হাসপাতালে থ্রেট কালচার চালানো হয় বলে অভিযোগ উঠতেই জুনিয়র চিকিৎসক ও পড়ুয়ারা আন্দোলন শুরু করেন। জুনিয়র ডাক্তারদের পাশাপাশি আন্দোলনে শামিল হন পিজিটি, ইনটার্ন, হাউস স্টাফ থেকে শুরু করে সিনিয়র ডাক্তাররাও। এর আগে একাধিক অভিযোগে হাসপাতালের ডিন সন্দীপ সেনগুপ্ত, সহকারী ডিন সন্দীপ শীল ও আরএমও পদত্যাগ করেছিলেন। সেই সময় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও সেবিষয়ে তদন্ত না হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি পরীক্ষায় নম্বর বাড়ানোর চক্রে শামিল ছিলেন। কারচুপি করে বাছাই করা পড়ুয়াদের নম্বর বাড়ানো হত। এই অভিযোগ সহ আরও কয়েকটি অভিযোগে বাকিরা পদত্যাগ করলেও অধ্যক্ষ কেন পদত্যাগ করছেন না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সব কিছু ধামাচাপা দিতে এবং নিজেকে বাঁচাতে এই থ্রেট কালচারের অভিযোগের তদন্তের জন্য তিন জনের তদন্ত কমিটি গড়েছিলেন ইন্দ্রজিৎ। সেই কমিটি ১২ জন হাউস স্টাফ, পিজিটি, সিনিয়র ডাক্তারদের সাসপেন্ড করেছে। কিন্তু ইন্দ্রজিতের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর জেরে ডাক্তারি পড়ুয়া থেকে শুরু করে সিনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তদন্ত চেয়েছেন। এখনও পর্যন্ত স্বাস্থ্য ভবন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদেই এদিন সরব হন চিকিৎসকরা।

অর্থোপেডিক, সার্জারি, রেডিওলজি, ইএনটি, মেডিসিন, ফিজিওলজি, অ্যানাটমি, পেডিয়াট্রিক্স, প্রসূতি, নেফ্রোলজি সহ হাসপাতালের ১৭ টি বিভাগের প্রধান অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিৎ সাহার বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপ চেয়ে চিঠি লিখেছেন ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকে। চিঠিতে এই সকল প্রধানের স্বাক্ষর রয়েছে।

হাসপাতালের অধ্যক্ষও এবিষয়ে মুখ খোলেননি। অনেকে বলছেন, চিঠিতে স্বাক্ষর থাকা চিকিৎসকদের অনেকেই নিয়মিত হাসপাতালে আসেন না। তাই হাসপাতালের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁদের আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তাঁরা এই আন্দোলন করার জন্য ‘আদর্শ’ ব্যক্তি নন বলেও অনেকে দাবি করেছেন।

এই বিষয়ে অর্থোপেডিক্সের বিভাগীয় প্রধান পার্থসারথি সরকার বলেন, ‘এই দুর্নীতিগ্রস্ত এবং থ্রেট কালচারে অভিযুক্ত অধ্যক্ষের উপস্থিতিতে আমরা পরীক্ষা নেব না। নিলে আবার অনেক ভালো ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে পড়ে যাবে। স্বাস্থ্য ভবনকে পদক্ষেপ করতে হবে।’