• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

দুর্নীতির দায়ে অ্যালকেমিস্ট কর্তা কেডি সিং গ্রেফতার

অ্যালকেমিস্ট চিটফান্ড মামলায় গ্রেফতার কওয়ারদীপ সিংহ। আসমুদ্রহিমাচল যাঁকে চেনে ‘কেডি' নামে।আলকেমিস্টের বিরুদ্ধে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা তছরুপের মামলা।

অ্যালকেমিস্ট কর্তা কেডি সিং (ছবি: SNS Web)

অ্যালকেমিস্ট চিটফান্ড মামলায় গ্রেফতার প্রাক্তন সাংসদ কওয়ারদীপ সিংহ। আসমুদ্রহিমাচল যাঁকে চেনে ‘কেডি’ নামে। তার সংস্থা আলকেমিস্টের বিরুদ্ধে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা তছরুপের মামলা করেছে এনফোর্সমেট ডিরেক্টরেট। সেই তদন্তে অসহযােগিতার অভিযােগে বুধবার তৃণমূলের রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদকে গ্রেফতার করে ইডি।

এ দিন তাকে আদালতে তোলার পর আগামী শনিবার পর্যন্ত ইডি বা হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও দল থেকে তাকে আগেই বহিস্কার করা হয়েছিল। প্রসঙ্গত, কেডি সিং-এর সংস্থা আলকেমিস্টের বিরুদ্ধে বাজার থেকে বেআইনিভাবে কোটি- কোটি টাকা তােলার অভিযােগ রয়েছে। সেই টাকা একাধিক ‘প্রভাবশালীর’ কাছে গিয়েছে বলে অভিযােগ কেন্দ্রীয় তদন্তকরী সংস্থার।

এমনকী, সেই টাকা বিদেশেও পাচার হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইডি কর্তারা। এই মামলার তদন্তে নেমে সংস্থার একাধিক কর্মী-আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করছিল ইডি। জেরা করা হচ্ছিল অ্যালকেমিস্ট কর্তা কেডি সিং-কেও। সেই তদন্তে অসহযােগিতার অভিযােগে এ দিন তাঁকে গ্রেফতার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।

উল্লেখ্য, ইভির খাতার প্রায় কোটি কোটি টাকা প্রতারণায় অভিযুক্ত প্রাক্তন রাজসভা সাংসদ কেডির বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযােগ কিন্তু বেশ কয়েক বছরের পুরনাে।

ইডি সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদকে প্রায় ছ’ঘণ্টা জেরা করেন তদন্তকারীরা। সেই সময় একাধিক প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়েছিলেন কেডি। এরপরে এ দিন সকালেও তাঁকে দিল্লির ইড়ি অফিসে বসিয়ে জেরা করেন কর্তারা। সেই সময়ও তিনি একাধিক প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন না বলে অভিযােগ। তারপরই তাকে গ্রেফতার করে ইডি। কেভি সিংলের বিরুদ্ধে প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং ধারায় বা পিএমএএ ধরায় মামলা করেছে তদন্তকারী সংস্থা।

প্রসঙ্গত, রাজ্যসভার নথি জানাচ্ছে, ১৯৬১ সালের ২১ আগস্ট পাঞ্জাবের ফতেগড় সহিবে তার জন্ম। পাটিয়ালার পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাবিভাগের স্নাতক ডিগ্রির পাশাপাশি আপাতত ৫৯ বছরের কেডি- র বুলিতে রয়েছে ব্রিটেনের অ্যাংগলিয়া রাস্কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস আডমিনিস্ট্রেশনের ডক্টরেট ডিগ্রিও।

কেডি-র স্থায়ী ঠিকানা চণ্ডীগড়ের অভিজাত এলাকা সেক্টর ৯-বি। ২০১০ সালের জুলাই মাসে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মাের্চার টিকিটে প্রথম বার রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছিলেন কেডি। অবশ্য তার আগেই  দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের জমানায় কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা ‘ন্যূনতম পারিশ্রমিক সংক্রান্ত পরিষদ’- এর চেয়ারম্যান হয়েছিলেন তিনি।

২০১৪ সালে জিতে দ্বিতীয় বার রাজ্যসভার সাংসদ হন। সে বার তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে। সংসদে তৃণমূলের প্রতিনিধি হিসেবে পবিহণ, পর্যটন ও অসামরিক বিমান পরিবহণ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন কেডি। কিন্তু নারদ গােপন ক্যামেরা অভিযানের পরে ২০১৬ সালে তৃণমুলের তরফে লােকসভার স্পিকার এবং রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে চিঠি লিখে তাকে ওই দায়িত্ব থেকে সরানাে হয়েছিল।

বস্তুত, কেডি ‘তহেলকা’ নামক সংবাদমাধ্যমের অন্যতম মালিক ছিলেন বলে বিভিন্ন সময়ে ‘খবর’ সামনে এসেছে। নারদ গোপন ক্যামেরা অভিযান (স্টিং অপারেশন) তাঁর নির্দেশেই হয়েছিল বলে প্রকাশেই নিয়েছিলেন সংস্থার প্রাক্তন সিইও ম্যাথু স্যামুয়েল।

নারদ-কান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে ম্যাথু দাবি করেন, ওই গােপন ক্যামেরা অভিযানের জন্য কেডি তাঁকে ৮০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। সে অর্থে ম্যাথু ছিলেন মাগনলালের ‘অর্জুন’। যিনি ১৩ নম্বর বাক্স থেকে বার করা ছুরির খেলা দেখিয়ে সামনের তক্তায় পিঠ দিয়ে দাঁড়ানাে প্রতিপক্ষকে বিবশ করে দিতে পারেন। কেডি অবশ্য বিষয়টি অস্বীকার করেন। যদিও তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই ২০১৯ সালে নারদ-কাণ্ড নিয়ে জেরা করেছিল কেডি-কে।

প্রসঙ্গক্রমে, যে আলকেমিস্ট গ্রুপের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ নয়ছয়ের কারণে কেডি-কে গ্রেফতার করল ইডি, তার সূত্রপাত ১৯৮৮ সালে। সেই বছরে টুব্রো ইন্ডাস্ট্রি কোম্পানি খুলেছিলেন কেডি। তারপর ২০০৪ সালে ওই কোম্পানিরই নাম রাখেন অ্যালকেমিস্ট গ্রুপ। খেলাধুলাের জগতেও কেডি প্রশাসনিক পদচিহ্ন পড়েছে।

দীর্ঘদিন তিনি যুক্ত ছিলেন ভারতীয় হকি ফেডারেশনের সঙ্গে। স্বাস্থ্যক্ষেত্র, আবাসন শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চা শিল্প- সহনানা ক্ষেত্রে দেশে এবং বিদেশে বিনিয়ােগ রয়েছে কেডির। ‘কেএফসি’র প্রতিদ্বন্ধী হিসাবে ‘রিপাবলিক চিকেন’ বাজারে এনেছিলেন কেডি। কেডি-র সংস্থা আলকেমিস্ট ইনফ্রা রিয়েলিটি গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযােগ উঠেছে পশ্চিমবঙ্গ সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সেবি-র নিয়ম লঙঘন করে বাজার থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা ‘কালেক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট ডিম’- এর মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে তােলার। ২০১৩ সালে বিষয়টি সামনে আসে।

পাশাপাশি, আর্থিক তছরূপ এবং নানা অভিযোগে সেবি, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এবং ইডির কাছে নির্দিষ্ট অভিযােগও জমা পড়ে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের অধীন ফিনানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (এফআইইউ) একটি রিপাের্টের ভিত্তিতে কেডি এবং তার সংস্থার বিরুদ্ধে শুরু হয় তদন্ত। নিয়ম ও বিদেশে ১০ কোটি ডলার পাচারের অভিযােগে ২০১৮ সালের আগস্টে সেবি-এ আবেদনের প্রেক্ষিতে ‘অ্যালকেমিস্ট’ এর যাবতীয় স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি কেনাবেচার উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট।

উল্লেখ্য, কেডি সিং-এর সংস্থার বিরুদ্ধে শুধু এ রাজ্যে নয়, পড়শি রাজ্য ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডে ও মামলা চলছে। তদন্ত করছে সিবিআই। এবার তাকে হেফাজতে নিয়ে আলকেমিস্টের তােলা টাকা কারা পেয়েছেন, বিদেশে কোন মাধ্যমে পাচার হয়েছে, কারা তার সুবিধা পেয়েছে এ সব জানার চেষ্টা চালাবে ইডি।