• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

মগরাহাট জোড়া খুনের মূল অভিযুক্ত জানে আলম টালিগঞ্জ থেকে গ্রেফতার

নৃশংসভাবে মগরাহাটের দুই যুবককে খুন করার মূল অভিযুক্ত জানে আলম চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই রবিবার দুপুরে টালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছে তাঁর নীল রঙের গাড়িটি সহ ধরা পড়ল।

প্রতীকী ছবি (File Photo: thestatesman.com)

নৃশংসভাবে মগরাহাটের দুই যুবককে শনিবার খুন করার মূল অভিযুক্ত জানে আলম চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই রবিবার দুপুরে টালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছে তাঁর নীল রঙের গাড়িটি সহ ধরা পড়ল। গাড়ি চালাচ্ছিল সে নিজেই। ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশের বিশেষ দল ও কলকাতা পুলিশের যৌথ অভিযানে ধরা পড়ে বহু সমাজবিরোধী কাজে যুক্ত কুখ্যাত জানে আলম মোল্লা।

ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলা সূত্রে জানা গেল, ধৃতকে সোমবার আদালতে তোলা হবে। পুলিশি হেফাজতে নিয়ে খুনের সময়কার ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হবে। জেরায় জানার চেষ্টা করা হবে, খুনের উদ্দেশ্য খুনের সময় আর কারা ছিল।

সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই জানে আলমকে প্রাথমিক জেরায় পুলিশ জেনেছে, মগরাহাট আমড়াতলার দুই যুবক সিভিক ভলান্টিয়ার বরুণ চক্রবর্তী ও বস্ত্র ব্যবসায়ী মলয় মাখালকে টাকা দেবার নাম করে জানে আলম তাঁর মগরাহাটের মাগুরপুকুর কারখানায় ডেকে এনে মাথায় গুলি করে তারপরও মৃত্যু নিশ্চিন্ত করতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করেছে।

শুধু তাই নয় পুলিশকে ধৃত জানে আলম আরো জানিয়েছে, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল দেহ দুটি টুকরো করে কেটে সরিয়ে দেওয়া।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়নি, গ্রামের মানুষ এসে যাওয়ায় ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলা সূত্রে জানা গেল খুনের পর জানে আলম মগরাহাট ছেড়ে পালিয়ে গেলেও তার গাড়ির নাম্বার ও মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার আটটি বিশেষ দল তাঁকে ধরতে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

কলকাতায় জানে আলম এর থাকার সম্ভাব্য জায়গাগুলিতে থাকে সাদা পোশাকের পুলিশ। ধরা পড়তে পারে বুঝতে পেরেই জানে আলম তাঁর গাড়িটি নিয়ে শনিবার সারাদিন রাত কলকাতা শহর বিধাননগর পূর্ব যাদবপুর অঞ্চল ঘুরে বেড়ায়। বড়ো মাছ ধরতে ছিপ খেলাতে হয়।

দক্ষ পুলিশ আধিকারিকগণ ওকে ঘোরার খানিকটা সুযোগ দেয়। নজর রাখে নিজেকে বাঁচানোর জন্য কোনও বড়ো নেতার কাছে যাচ্ছে কীনা। শেষ পর্যন্ত রবিবার দুপুর বারোটা নাগাদ টালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছ থেকে জালে তোলা হয় নৃশংস ভাবে দুই যুবককে খুন করার ঠান্ডা মাথার খুনি জানে আলমকে।

পুলিশ সূত্রে আরো জানা গেল, জানে আলম এর নামে চিটফান্ড কেলেঙ্কারি টাকা নিয়ে চাকরি না দেওয়া অসাধু ব্যবসার অভিযোগ থাকলেও খুনের অভিযোগ ছিল না তবে অত্যন্ত প্রভাবশালী বাম ছিলেন আমলেও। প্রচুর পয়সার মালিক।

কাদের কে হাতে রেখে অন্ধকার জগতের রাজা হওয়া যায় তা ভালো করে জানেন। ইদানিং মাদ্রাসার উন্নয়নে মাথা দিয়েছিলেন। বিভিন্ন পেশার কলকাতার বড়ো মাথারা তাঁর নিরাপত্তা উপদেষ্টা।

আগ্নেয়াস্ত্র সহ প্রয়োজনে বাউন্সার নিয়ে ঘোরা পাঁচিল ঘেরা বাগান বাড়িতে আসর বসানো তীক্ষ্ণ বুদ্ধির জানে আলম এর অদ্ভুত সমাজ সেবা সাহিত্য প্রেম। এ হেন ধুরন্ধর কুল ব্রেনের অপরাধী আরো কী কী কান্ডে যুক্ত তা পুলিশকেই খুঁজে বার করতে হবে। পুলিশ কেন এমন সাঙ্ঘাতিক অপরাধীর ওপর নজর রাখে নি প্রশ্ন উঠেছে মগরাহাটে।

বিষ মদ কান্ডের নায়ক মগরাহাটের খোঁড়া বাদশা আপাতত জেলে। আর একজন জনৈক সেলিম নন্দীগ্রামের ত্রাস এখনো মগরাহাটে ভোল বদলে কয়েক দিন আগে শাসকদলের আদি কর্মীদের দোকান পাট ভেঙেছে। ভীত মানুষ গুলোর অভিযোগ জানানোর জায়গা নেই।

জানে আলমকে সঠিক ভাবে জেরা করতে পারলে সেলিম সহ অনেক অন্ধকারের রাজার নাম উঠে আসবে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে নয়, ফণা হীন বিষধর কালাচ এর বাসা মিলবে ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার উস্তি মগরাহাট সংগ্রামপুর ফলতা অঞ্চলে।

গ্রামের সাধারণ মানুষ এসব কথা নিজেদের মধ্যেই রেখে দেয় প্রাণ বাঁচাতে এদিকে দুটি তরতাজা যুবকের প্রাণ গেলেও তা ফেরত দিতে না পারলেও সমবেদনা নিয়ে রবিবার সকালে মগরাহাটের আমড়াতলায় নিহতদের বাড়ি গেলেন জয়নগরের সাংসদ প্রতিমা মন্ডল মগরাহাট পূর্ব এর বিধায়ক নমিতা সাহা সহ শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের স্হানীয় নেতৃত্ব।

জানা গেল, এদিন স্বজন হারানো পরিবারের হাতে আড়াই লক্ষ টাকার চেক চাকরির প্রস্তাব ও পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে এসেছেন শাসকদলের প্রতিনিধিগণ।

কান্না বুকে চেপে ক্ষুব্ধ মগরাহাটের মানুষ আপাতত পুলিশের কাজে আস্হা ফিরে পাচ্ছে মূল অভিযুক্ত জানে আলম ধরা পড়ার খবরে। নৃশংস খুনি জানে আলম এর ফাঁসি চাইছেন নিহত দুই যুবকের ঘনিষ্ঠ জন।

পুলিশের প্রতি ভরসা কম ছিল কারণ খুনি জানে আলম এর ভাই মগরাহাট মোহনপুরের শাসকদলের পঞ্চায়েত প্রধান বলে। নিহত মগরাহাট থানার সিভিক ভলান্টিয়ার বরুণ চক্রবর্তী ও মলয় মাখালও তৃণমূল কংগ্রেস করতেন। মলয়ের মা প্রাক্তন উপ প্রধানও ছিলেন।

আবার নৃশংস খুনি জানে আলমও শাসকদলের সমর্থক। তাঁর ভাইরাস সক্রিয় কর্মী প্রধান আবার সব বড়ো বড়ো ব্যবসায়ী। হিসেব মতো সবাই তৃণমুল কংগ্রেস করেন। পুলিশ কোনও ঝুঁকি নেয়নি।

সেই অর্থে ওপর মহল থেকে অলিখিত চাপ আসেনি। বরং সরকারের বদনাম হচ্ছে। পুলিশের সম্মান তলানিতে। পলাতক জানে আলমকে ধরতেই হবে। স্বাধীনতা পেলে পুলিশ সব পারে। ধৃত জানে আলম সম্পর্কে আরো কী কী তথ্য মেলে শেষ পর্যন্ত তাঁর ফাঁসির সাজা হয় কীনা জানার অপেক্ষায় মগরাহাটের মানুষ।