সকাল ১০টা নাগাদ মাদপুর হাইস্কুলে ভােট দেন জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অজিত মাইতি। সঙ্গে ছেলে অর্ক। তাপরই অজিতবাবুর মন্তব্য মেদিনীপুর শহরের ফেডারেল অফিস। সকাল ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটে মেদিনীপুর এবং ঘাটাল লােকসভা এলাকায় নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখতে অজিতের অস্ত্র ছিল হােয়াটসঅ্যাপ। এদিন প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে সাক্ষী থাকল ছেলে অর্ক। প্রতিটি ব্লকের শীর্ষ নেতাদের কাছে হােয়াটসঅ্যাপে পেীছে যায় অজিতের বার্তা। কি পরিস্থিতি তা জেনে নেওয়া। সেই অনুযায়ী কি করতে হবে তার নির্দেশ। কখনও নারায়ণগড়ের সূর্য অট্ট-মিহির চন্দ, কখনও কেশিয়াড়ির পবিত্র শিট, কখনও দাতনের বিক্রম প্রধান, মােহনপুরের প্রদীপ পাত্র আবার কখনও খড়গপুর গ্রামীণের বিধায়ক দীনেন রায়।
সকাল বেলাতেই জেলা শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে বার্তা পৌঁছে যায় কলকাতা থেকে, হাতে চুড়ি পরে বসে থাকা চলবে না। সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার ভাবনা শুরু। ফেডারেশন অফিসে পৌছে সেই কাজটি ছেলের সাহায্যে নিপুণভাবে করে গিয়েছেন অজিতবাবু। তিনি বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডল নয়। হাঁকডাকের রাজনীতি না করে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে লড়াইয়ের জন্যই পরিচিত। রবিবার মেদিনীপুর শহরে বসে জেলাজুড়ে নজরদারি চালাবার কাজটা সেভাবেই করে গিয়েছেন অতিবাবু।
বিরােধী বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘােষের তরফ থেকে প্রভোকেশন ছিল। কিন্তু দিলীপের ফাঁদে পা দিয়ে রাজনৈতিক লড়াইকে কঠিন করতে চাননি অজিত। বিকেলে ফেডারেশন অফিসে বসে মানস ভুইয়া বলেন, এদিন সকালেই তৃণমূলকে পাতলা করে দেবেন বলে উসকানিমূলক মন্তব্য করেন দিলীপ। কিন্তু অজিতবাবুর নির্দেশে আমাদের কর্মীরা সংযম দেখিয়েছেন। মােহনপুরে বুথে ঢুকে তৃণমূলের পােলিং এজেন্টকে চড় মেরে এলাকা অশান্ত করার চেষ্টা করেছিল বিজেপি। কিন্তু তৃণমূলকর্মীরা বুথে পড়ে থেকে বুথ আগলে রেখে ভােট করিয়েছেন। ভােট হয়েছে তাই মানসবাবুর প্রতিক্রিয়া, দিলীপবাবু সাতটি বিধানসভাতে এগিয়ে থেকে মেদিনীপুর লােকসভা জয়ের দিবা স্বপ্ন দেখছেন। উনি কল্পনার জগতে থাকুন। নিজের জয়ের সম্ভাবনা সম্পর্কে মানস সাবধানী, ২৩ তারিখ অব্দি অপেক্ষা করব। প্রত্যেক খেলােয়াড় জেতার জন্যই মাঠে নামে। স্মরণ করেছেন ছোটবেলায় বসন্তপুর ঝাড়েশ্বর বিদ্যাভবনের কথা। লেফট উইংয়ে খেলবেন। সবাই রােগা পাতলা ছেলেটাকে পাত্তা দিত না। মানস ঠিক বিপক্ষের জালে বল পাঠিয়ে দলকে জয়ী করত। অনেকটা সেভাবেই এবারের নির্বাচনে জয়ের পথে হাঁটতে চান মানস।
কিন্তু প্রচারের আলাে আজকে পশ্চিম মেদিনীপুরে শুষে নেন ভারতী ঘােষ। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে শিউলি সাহার জয়ের ব্যবধান ছিল ১ লক্ষ ১১ হাজার। ২০১৪-এর লােকসভা নির্বাচনে এই বিধানসভায় দেব এগিয়ে ছিল ১ লক্ষ ৭ হাজার ভােটের ব্যবধানে। এবারেরও দু-শতাধিক বুথে বিরােধীরা এজেন্ট বসাতে পারেনি। ভারতীকে কেশপুরেই আটকে রেখে অন্যত্র ভােট করিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তৃণমূলের। ভারতী তৃণমূলের পাতা সেই ফঁদে পা দেন। ভারতী জানান কেশপুরকে আটকে নিজের পরাজয়ের ব্যবধান কমানাের চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু ভারতীকেও কেশপুরে ফাঁকা মাঠ ছাড়তে রাজী ছিল না তৃণমূল। তাই তাকে আটকানাের চেষ্টা হয়। দিনের শেষে ফেডারেশন অফিস থেকেই ফোনে দেবকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মানস ভূঁইয়া বলেন, তুমি তিন থেকে সাড়ে তিন লক্ষ ভােটে জিতছ। মানস নিজে অতটা আত্মবিশ্বাসী হতে পারছেন না কেন? তার কারণ নারায়ণগড় দাঁতনে তৃণমূল ভােট ‘করাতে’ পারলেও মােটের ওপর সারা লােকসভা এলাকায় অশান্তির খবর খুবই সামান্য।
তৃণমূল দলীয় সূত্রের খবর, এ বছরও সামান্য বেশ কিছু বুথে বিজেপি পােলিং এজেন্ট বসাতে পারেনি। এই বুথ গুলিতে কি রকম ভােট হয়েছে তা নিয়ে তৃণমূলের সংশয় না থাকলেও অন্যত্র ভােটের চরিত্র নিয়ে কিছুটা হলেও সংশয় আছে। মানসবাবুর কথায় বামের ভােট রামে গিয়েছে। সিপিএম, বিজেপিকে মানুষ করেছে, দুধ খাইয়েছে, ডিম ভাত খাইয়েছে। যে মেদিনীপুর ১৯৭৭ সালের পর লাল দুর্গ হয়ে উঠেছিল সেখানেই এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরেও লাল পাতাকা খুঁজে বার করতে চোখে দূরবীন লাগাতে হয়েছে। দিলীপবাবুর সাতটি বিধানসভার সাতটিতে তিনি এগিয়ে থাকবেন, এই দাবি নিয়েও ধোঁয়াশা আছে। মানসবাবু মনে করেন, ২০১৬-র রাজনৈতিক দুর্ঘটনা ও ঢিলেমির সুযােগ নিয়ে দিলীপবাবু জিতেছিলেন। এবার বামেরা যতই আমসত্বের মতাে গলে যাক দিলীপের পরাজয় নিশ্চিত। মেদিনীপুর শহরে ফেডারেশন অফিসে বসে এই অঙ্ক কষে গিয়েছেন অজিতবাবুও। দলের শীর্ষ নেতৃত্বকেও বার্তা পাঠিয়েছেন। ক্লক স্তরের নেতাদের নির্দেশ পাঠিয়েছেন। ২৩ মে সব সংশয়, সব চিন্তা, সব জল্পনার অবসান হবে।