আসানসোলে হুঁশিয়ারি অগ্নিমিত্রার, বালিগঞ্জে বচসায় কেয়া ঘোষ

বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল (ছবি: ফেসবুক | @agnimitra.in)

রাজ্যের দুই কেন্দ্রে উপনির্বাচনে বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর মিলছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে ভোট হলেও এড়ানো গেল না বিশৃঙ্খলা। বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের দুটি বুথে কলকাতা পুলিশ কেন? এই প্রশ্ন তুলে দিনের শুরুতেই সরব হন বিজেপি প্রার্থী কেয়া ঘোষ।

অন্যদিকে, আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পল দিনের শুরুতেই ভোটে দিয়েছেন। ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে সেই চিহ্ন দেখিয়ে কার্যত হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, যাঁরা আমাকে বহিরাগত বলে কটাক্ষ করেছিল, তাঁদের দেখিয়ে দিলাম।

নানা জায়গায় ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে। অশান্তি হলে পালটা অশান্তির মুখে পড়তে হবে। মারের বদলে পালটা মার হবে। তাঁরা দুজনই নির্বাচন কমিশনে নিজেদের অভিযোগ জানিয়েছেন। কমিশনও পালটা রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে বলে খবর।


অর্থাৎ উপনির্বাচনের সকাল থেকেই দুই কেন্দ্রে বিজেপির দুই মহিলা প্রার্থীর অতি সক্রিয়তা নজরে পড়ছে মঙ্গলবারের উপনির্বাচন চলছে সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তাবলয়ের মাঝে। তা সত্ত্বেও দিনের শুরু থেকেই বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর মিলছে।

বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট কেমন চলছে, তা দেখতে সকাল থেকেই বেরিয়ে পড়েছেন বিজেপি প্রার্থী কেয়া ঘোষ। তাঁর নজরে পড়ে অশোক হল এবং মডার্ন হাই স্কুলের বুথে রয়েছে কলকাতা পুলিশ। তিনি সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের কাছে জানতে চান, তাঁরা থাকা সত্ত্বেও কেন বুথে কলকাতা পুলিশ?

ওই পুলিশকর্মীদেরও প্রশ্ন করেন। তখনই তাঁর সঙ্গে বাদানুবাদ হয় পুলিশের। এছাড়া কেয়ার অভিযোগ, কিছু কিছু জায়গায় মেশিন খারাপ। ভোটাররা ফিরে যাচ্ছে। একবার মেশিন পালটানোর পর ফের একই বিষয়। বুঝতে পারছি না। কী হচ্ছে?

বালিগঞ্জের পাঠভবন ও মর্ডান হাই স্কুলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় তাঁর। কেয়া ঘোষের অভিযোগ কলকাতা পুলিশ বুথে রয়েছে। অথচ তাঁদের ১০০ মিটারের মধ্যে থাকার কথা নয়। আমার এজেন্টকে বুথে বসতে দিচ্ছে না ওঁরা তো ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য বুথে ঢুকেছেন।

আমি স্পষ্ট জানিয়েছি, বুথে যেন পুলিশকে ঢুকতে না দেওয়া হয়। এজেন্টকে বাধা দেওয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনে জানিয়েছি। অন্যদিকে, আসানসোলের বিভিন্ন বুথে সকাল থেকে ঘুরছেন বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পল। তিনিও একাধিক অভিযোগ তুলেছেন।

পাণ্ডবেশ্বরের বিভিন্ন বুথে বিজেপি এজেন্টদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বারাবনির আসানবনি গ্রামে রাজ্য পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ান বিজেপি প্রার্থী। কয়েকজনের ভোটার কার্ডও কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগে কমিশনের দ্বারস্থ হন তিনি।

পালটা তৃণমূলের অভিযোগ, সশস্ত্র বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে বুথে ঢুকেছেন, যা নির্বাচনী বিধি বহির্ভূত। কমিশন সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখছে। এবারের বালিগঞ্জ উপনির্বাচনের ভোটের মেজাজটাই ছিল একদম আলাদা।

বিকেল চারটে পর্যন্ত দুই-একটি বিক্ষিপ্ত অশান্তি ছাড়া বালিগঞ্জ উপনির্বাচন একেবারে শান্তিপূর্ণ। প্রচন্ড গরমের মধ্যেও দুপুর তিনটে পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৩৪.৪০ শতাংশ। যদিও দিনভর বিভিন্ন বুথে ঘুরতে দেখা গিয়েছে সিপিএম পার্টি সায়রা শাহ হালিমকে।

এবার সায়রা শাহ হালিমের ভোটের সময় পাখির চোখ ছিল সংখ্যালঘু এলাকার ভোট। কিন্তু সায়রা যখন ঘুরে ঘুরে বুথ সামলাচ্ছেন, তখনও বাবুল সুপ্রিয় পাক সার্কাস, মল্লিক বাজার, বেক বাগান এলাকায় আসেননি।

সকালে তিনি দেবশিস কুমারের অফিসে চা সিঙ্গারা খেয়েছেন মার্সেটিজ চালিয়েছেন। তারপর আবার বুলেটে স্টার্ট দিয়েছেন। পরে একটা নাগাদ হাওড়ার বাড়িতে চলে গিয়েছেন। একইরকমভাবে খুব একটা ছোটাছুটি করতে দেখা যায়নি বিজেপির কেয়া ঘোষকেও।

মঙ্গলবার কাজের দিন থাকায় সকাল সকাল ভোট দিতে চলে এসেছিলেন মানুষজন। আওয়ার লেডি কুইন অফ দ্য মিশন স্কুল, লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালযয়ের বুথগুলোতেই বেশি করে নজর দিয়েছেন বামপন্থী সায়রা।

তিনি এদিন একাধিকবার এইসব বুথগুলোতে গিয়েছেন। অন্যদিকে বাবুলকে বেশি দেখা গিয়েছে হিন্দু প্রধান ও অভিজাত এলাকার বুথগুলিতে। এমনকি ম্যানুয়াল গার্ডেন্সের সাউথ পয়েন্ট স্কুলের ভর্তি হতে গেলে তাকে বাধা দেয়া হয় বলে অভিযোগ।

এরপর লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ এসে তিনি মান্নাদের গাওয়া গান শুনিয়ে যান। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় এরই মধ্যে একবারের জন্যও দেখা যায়নি বিজেপি প্রার্থী কেয়াকে। সিপিএমের তরফে জানানো যেহেতু রমজান মাস তাই বিকেলের আগেই এইসব এলাকায় ভোট শেষ হয়ে যাবার কথা।

ভোটের দিন বিভিন্ন বুথে গিয়ে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পেয়েছেন বলে সায়রা জানিয়েছেন। কিন্তু বিশপ কলেজ ও লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ এর কয়েকটি বুথে তিনি রিডিংয়ের অভিযোগ আনেন।

অভিযোগ এদিন এক সন্দেহভাজন মহিলাকে বারবার যাতায়াত করতে দেখা যায়। সায়রা বিষয়টি সিআরপিএফ জওয়ানদের জানান। এরপর ওই মহিলাকে তিনি নিজেই জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করেন।

তার পরেই দেখা যায় ওই মহিলা সেখান থেকে ছুটে পালাচ্ছেন। তবে ১৫ টি বুথে সিপিএম পোলিং এজেন্ট দিতে পারেনি বলে অভিযোগ। সেখানে তৃণমূলের বিরুদ্ধে রিগিংয়ের অভিযোগ তোলা হয়েছে সিপিএমের তরফ থেকে।

তা সত্ত্বেও সিপিএম মনে করছে বালিগঞ্জে তারা দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসতে পারে এদিন প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে সিপিএম কর্মীরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানালেন, প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সংখ্যালঘু মানুষজনের ভালো সম্পর্ক ছিল।

সেই জায়গা কেউ নিতে পারবে না এই পরিস্থিতিতে সেই ভোট তাদের দিকে আসবে বলেই মনে করছে সিপিএম। বামপন্থীরা এও মনে করছে পাক সার্কাস এলাকার ভোট তৃণমূল প্রার্থী টানতে পারবে না।

কারণ তার পেছনে এখনও অনেকেই গেরুয়া রং দেখছেন। আর এই সমস্ত এলাকাগুলিতেই টানা প্রচার সেরেছেন বাম প্রার্থী সায়রা। তাই এই সমস্ত এলাকার ভোট সম্বন্ধে অনেকটাই নিশ্চিন্ত দেখালো সায়রাকে।