ডিজি-র পর এবার রাজ্যের চার জেলা শাসকের বদলি

কলকাতা, ২১ মার্চ: ফের রাজ্য প্রশাসনে বড়সড় রদবদল করল নির্বাচন কমিশন। রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেলকে বদলির পর এবার নজর জেলা প্রশাসনের দিকে। আজ বৃহস্পতিবার রাজ্যের চার জেলার জেলা শাসককে বদলি করে সেই পদক্ষেপ শুরু করল। এই চার জেলার মধ্যে রয়েছে ঝাড়গ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান ও বীরভূম জেলা। এই চার জেলার জেলা শাসককে সরানোর নির্দেশ দিয়েছে ভারতের জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এই সিদ্ধান্তের পর রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ক্রমশ বাড়ছে।

প্রসঙ্গত পূর্ব মেদিনীপুর রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর গড় বলে পরিচিত। সেখানে জেলাশাসক বদলি হতেই অন্য গন্ধ পাচ্ছে রাজ্যের রাজনৈতিক সচেতন মানুষ। অনেকের ধারণা, বিরোধী দলনেতার ইশারায় বদলি হচ্ছেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা শাসক। যদিও কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই চার জেলার জেলাশাসক কেউই আইএএস ক্যাডারের অফিসার নন। তাঁরা ডব্লিউবিসিএস থেকে পদোন্নতি পেয়ে ডিএম হয়েছেন। সেজন্য তাঁদের জেলাশাসক পদ থেকে সরানো হয়েছে।

আজ, বৃহস্পতিবার কমিশনের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়, গুজরাত, পাঞ্জাব, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের আইএএস ও আইপিএস নয় এমন জেলাশাসক ও এসপি-কে দায়িত্ব থেকে সরাতে হবে। সেই নির্দেশের খাড়ায় পড়ে এরাজ্যের চার জেলা শাসক। কমিশনের তরফে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়, এরাজ্যের পূর্ব বর্ধমান, ঝাড়গ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুর ও বীরভূমের জেলাশাসককে অবিলম্বে সরাতে হবে।


জানা গিয়েছে, এই চার জেলাশাসক কেউই আইএএস ক্যাটেগরির অফিসার নন। মূলত তাঁরা রাজ্য সরকারের সিভিল সার্ভিস আধিকারিক। তাই তাঁদের ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। তবে এই নির্দেশের খাড়ায় শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, তালিকায় রয়েছে গুজরাটের ছোট উদয়পুর ও আমেদাবাদ গ্রামীণের এসপি, পাঞ্জাবের পাঠানকোট, ফাজলিকা, জলন্ধর গ্রামীণ ও মালেরকোটলার এসএসপি, ওড়িশার ঢেঙ্কানলের জেলাশাসক। দেওগড় ও কটক গ্রামীণের এসপি।

অন্যদিকে, পাঞ্জাবের ভাটিন্ডার সিনিয়র পুলিশ সুপার(এসএসপি) ও অসমের সোনিতপুরের এসপিকেও সরানোর নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই দুই পুলিস আধিকারিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সখ্যতার সর্ম্পক রয়েছে। সেজন্য এমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত এই নির্দেশ কার্যকর করতে বলেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন।

উল্লেখ্য, গত ১৬ মার্চ শনিবার জাতীয় নির্বাচন কমিশন দেশের ১৮তম লোকসভা ভোটের নির্ঘন্ট ঘোষণা করে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার দিল্লির জাতীয় নির্বাচন সদনের সদর দপ্তরে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করেন। সেখানে তিনি স্পষ্ট বার্তা দেন, সম্পূর্ণ হিংসা মুক্ত ভোট করতে হবে। সেই ঘোষণা মতো ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য পুলিশের ডিজিপি রাজীব কুমারকে বদলি করা হয়। সেই পদে প্রথমে বিবেক সহায়কে ভারপ্রাপ্ত ডিজি করা হয়। এরপর তার ঠিক ২৪ ঘন্টার মধ্যে একজন স্থায়ী ডিজি হিসেবে সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়কে নিয়োগ করা হয়।

পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি অন্যান্য বেশ কয়েকটি রাজ্যেও প্রশাসনিক রদবদল করা হয়। এবার সেই রেশ কাটতে না কাটতেই ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ফের বাংলার চার জেলা শাসককে বদলি করা হল। তবে অধিকারী পরিবারের আধিপত্য থাকা পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক বদলি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে যথেষ্ট জল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের ধারণা, রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি-র অভিযোগের ভিত্তিতেও এই বদলির করা হয়ে থাকতে পারে।