• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

সুপ্রিম-নির্দেশ মেনে ডাক্তারদের বাড়তি নিরাপত্তা রাজ্যের

'কাজে ফিরুন', ডাক্তারদের অনুরোধ স্বাস্থ্যসচিবের

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে এবার মান্যতা দিতে চলেছে রাজ্য। রাজ্যের রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় অতিরিক্ত গুরুত্ব দিতে এবার তৎপর হচ্ছে রাজ্য। বৃহস্পতিবারই আরজি কর মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকারকে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই স্বাস্থ্যভবন থেকে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। তিনি জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এবং রাজ্য সরকারের নতুন ‘রাত্তিরের সাথী’ নির্দেশিকা মেনে ইতিমধ্যেই ওই প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য গ্রহণ করা হয়েছে একাধিক ব্যবস্থা।

শুক্রবার ওই সাংবাদিক বৈঠক থেকে স্বাস্থ্যসচিব বলেন, “আমাদের রেসিডেন্ট চিকিৎসকেরা যাতে সম্পূর্ণ নিরাপদে কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী স্ট্যাটাস রিপোর্ট দিয়েছি। নতুন সরকারি গাইডলাইন বা নির্দেশিকা ‘রাত্তিরের সাথী’ অনুযায়ী কাজও শুরু করেছি।” তবে কী কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে চিকিৎসকদের নিরাপত্তায়, তাও সবিস্তারে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যসচিব। বেশি সংখ্যায় সিসি ক্যামেরা বসানো থেকে ক্যাম্পাস আলোকিত করা — এই সকল পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে রাজ্যের তরফ থেকে। এসবের মাঝে রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থার ঘোষণার পাশাপাশি তাঁদের কাজে ফেরার অনুরোধও করেছেন স্বাস্থ্যসচিব।

নারায়ণস্বরূপ নিগমের ভাষায়, “আমরা আরও বেশি সংখ্যায় সিসি ক্যামেরা বসাচ্ছি। রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের ঘরের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। তাঁদের জন্য আলাদা শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ক্যাম্পাসগুলির সমস্ত এলাকা আলোকিত করার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালগুলির ক্যাম্পাসে এবং হস্টেলে অতিরিক্ত নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হচ্ছে। যাঁদের মধ্যে থাকবেন মহিলা নিরাপত্তারক্ষীরাও।”

আন্দোলনরত চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্যসচিবের এদিন বিশেষ বার্তা, “আমরা আপনাদের দাবি মেনে নিয়েছি। গত ২১ অগস্ট আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। তাঁরা যে দাবি জানিয়েছিলেন, তার সবটাই মেনে নেওয়া হয়েছে। আরজি করের প্রিন্সিপাল এবং সুপারকে পরিবর্তন করা হয়েছে। আরজি করের বক্ষরোগের বিভাগীয় প্রধান এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরজি করে নতুন প্রিন্সিপাল এবং সুপার দায়িত্বে এসেছেন। আর্থিক দুর্নীতির তদন্তের জন্য তদন্তকারী দলও গঠন করা হয়েছে। তাই এবার তাঁরা কাজে ফিরুন।”

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের প্রতিনিধি দল বুধে স্বাস্থ্যভবনে বৈঠক শেষে জানিয়েছিল, তাঁরা ‘হতাশ’। আদেও আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের দাবি মেনে নেবে কিনা স্বাস্থ্য দফতর, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন আন্দোলনকারীরা।

তবে শুক্রে স্বাস্থ্যসচিব জানিয়ে দিলেন, “আন্দোলনকারী চিকিৎসকগণ যে দাবি জানিয়েছিলেন, তার সবটাই মেনে নেওয়া হয়েছে।” পাশাপাশি বৃহস্পতিবারই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় দেশের আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের কাজে ফেরার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে দিল্লি এবং কল্যাণীর এইমসের চিকিৎসকেরা কাজে ফিরেছেনও।

শুক্রবার স্বাস্থ্যসচিব তাঁদের উদাহরণ দিয়েই রাজ্যের আন্দোলনকারী বাকি চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, “রেসিডেন্ট চিকিৎসকেরা আমাদের স্বাস্থ্য পরিষেবার মেরুদণ্ড। তাঁদের অনুপস্থিতির ফলে স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে যে সমস্ত দরিদ্র মানুষ চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালের উপরেই নির্ভরশীল, তাঁরা এর ভুক্তভোগী হচ্ছেন। সিনিয়র ডাক্তারেরা এখন সর্বত্র পরিষেবা দিলেও রোগী অনুপাতে সেই পরিষেবা যথেষ্ট নয়।” এক কথায়, আন্দোলনরত চিকিৎসকদের আবেদনে সাড়া দিয়ে এবার তাঁদের কাজে ফেরানোর আর্জি জানালো রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।