বগটুইয়ের নৃশংসতা শিউরে ওঠার মতো। জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মরতে হয়েছে আটজনকে। এর মধ্যে শিশু ও মহিলারাও রয়েছেন ভাদু শেখের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁদের কোনও ভূমিকা ছিল না শুধু আগুনে পুড়িয়ে মারাই নয়, তার আগে রীতিমতো কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে পেট্রোল ঢেলে তারপর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল নিষ্পাপ শিশুদের শরীরে।
তারা জানলই না, তাদের কী অপরাধ ছিল? কেনই বা তাদের পুড়িয়ে মারা হচ্ছে হাতজোড় করে প্রাণ বাঁচানোর জন্য কাকুতি-মিনতি করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু তাতেও কর্ণপাত করেনি দুষ্কৃতীরা।
কোনওক্রমে আগুনের লেলিহান শিখাকে টপকে প্রাণে বেঁচেছিল ১৪ বছরের এক কিশোর মৃত্যুকে এত সামনে থেকে আগে কখনও দেখেনি সে । প্রাণ বাঁচাতে সে শুধু নিজেকে সেই আগুনের ঘেরাটোপ থেকে কোনওক্রমে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিল।
বরাত জোরে বেঁচে যাওয়া সেই কিশোর নিজেও অগ্নিদগ্ধ। হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হলে পালিয়ে আসে সে পরে হাসপাতাল হয়ে তার এখন আশ্রয় আত্মীয়ের বাড়ি, যা বিভীষিকার বগটুই থেকে অনেকটা দূরে। কিছুতেই চোখের পাতা এক করতে তার।
কারণ যাঁদের সঙ্গে কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত সে গল্প করেছে, সেই প্রিয়জনরা আর এই পৃথিবীতে নেই। পারছে না সে। কথা বলতে গিয়ে হাত-পা কাঁপছে এবার দেখে নেওয়া যাক, বগটুইয়ে সেদিন রাতে কী হয়েছিল? চোখের সামনে কী দেখেছিল ১৪ বছরের কিশোর।
বরাত জোরে পালিয়ে বাঁচে সে রামপুরহাটের এই অভিশপ্ত গ্রাম থেকে বহুদূরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকা কিয়াম শেখের হাত, পা, কোমরের অনেকটাই পুড়ে গিয়েছে। অকপট কিশোর তুলে ধরল সেই রাতের ভয়াবহ ছবিটা।
ওই কিশোরের কথায়, ‘আমরা নমাজ পড়ে এসে শুনি ভাদু শেখ খুন হয়েছে । শুনেই সবাই কাকিমার বাড়িতে চলে যাই । এরপরই রাতে শুরু হয় বোমাবাজি । হঠাৎই পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সব জ্বালিয়ে ছাড়খাড় করে দেয় ওরা।
আমার কাকা, কাকার মেয়েরা, কাকিমা মারা গিয়েছে। আমি সেদিন ওই আগুন টপকেই পালিয়েছিলাম। আল্লাহর অশেষ কৃপা যে বেঁচে গিয়েছি।’
ওই কিশোর জানায়, ‘সেই রাতে আমরা চিৎকার করছিলাম বাঁচার জন্য। কিন্তু কেউ আসেনি। তার জন্য আমরা ওই দেওয়াল টপকে আগুন পার করেই পালাতে থাকি। যারা বেরোতে পারল না তারা পুড়ে শেষ। আমার কাকার দুই মেয়ে, ঠাকুমা কাকিমা, পুড়ে শেষ।
আমিও আটকে গেলে হয়তো শেষ হয়ে যেতাম। আমরা ৮-৯ জন পালিয়ে যাই বলে বেঁচে গেলাম। তবে ঘর তখন জ্বলছে। তাতেই কিছুটা পুড়ে যায় আমার শরীর।’ আগুন ধরানোর আগে বাড়ির লোকদের বীভৎসভাবে কুড়ুল দিয়ে কোপানো হয় বলেও দাবি করে ওই কিশোর।
তার কথায়, কুপিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তার কথায়, পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল ওরা বোমা মারলি পর পর। আমরা তো ভাবছিলাম বাঁচবই না আর।
আল্লাহ্ হেফাজত করেছেন। কিন্তু এখনও ভয় লাগে। মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে সে। তাদের ঘরও পুড়েছে। সঙ্গে বইয়ের পাতাগুলোও ছাই।
ওই কিশোরের কথায়, ‘প্রথমে আমার ছোট মা কাকিমাকে কুড়ুল দিয়ে কোপানো হয় তারপর পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। সকলে হাত জোর করে বলেছে, তাও শোনেনি ওরা।’