কর্মবিরতি নিয়ে ঘরে বাইরে চাপের মুখে জুনিয়র ডাক্তাররা। জুনিয়রদের কর্মবিরতির জন্য অতিরিক্ত সময়ে কাজ করে সিনিয়ররা সমস্যা মেটানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করে চলেছেন। কিন্তু পুজোর মরশুমে ও রাজ্যজুড়ে বন্যা পরিস্থিতির জেরে রোগীর চাপ সামলানো মুশকিল হয়ে যাচ্ছে সিনিয়র চিকিৎসকদের পক্ষেও। তাই এবার সিনিয়রদের একাংশ চাইছেন, পূর্ণ কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুক জুনিয়র ডাক্তাররা। বৃহস্পতিবার আরজি করের অডিটোরিয়ামে জুনিয়র ও সিনিয়র চিকিৎসদের মধ্যে বৈঠকে এই নিয়েই আলোচনা হয়েছে।
আরজি কর মেডিক্যালে তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনার পর বিচারের দাবি সহ বেশ কয়েকটি দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। এরপর মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যসচিবের সঙ্গে আলোচনার পর পূর্ণ কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তাঁরা। তবে সম্প্রতি সাগর দত্তের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর হামলার প্রতিবাদে ১ অক্টোবর থেকে ১০ দফা দাবিতে ফের পূর্ণ কর্মবিরতি শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
তবে দ্বিতীয় বার পূর্ণ কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই প্রশ্ন উঠছিল বিভিন্ন মহলে। কর্মবিরতি নিয়ে আয়োজিত জিবি বৈঠকেও জুনিয়রদের কয়েকজন পূর্ণ কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছিলেন। পাশাপাশি সিনিয়র ডাক্তারদের অনেকে প্রকাশ্যেই আপত্তি জানিয়েছিলেন।
প্রথম থেকেই জুনিয়র ডাক্তারদের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছিলেন সিনিয়ররা। অতিরিক্ত সময় কাজ করে পুষিয়ে দিচ্ছিলেন তাঁরা। কিন্তু পুজোর মরশুনে রোগীর ভিড় সামলানো কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না। তাই এবার রোগীদের কথা মাথায় রেখে পূর্ণ কর্মবিরতি প্রত্যাহার করার পরামর্শ দিয়েছেন সিনিয়র ডাক্তারদের একাংশ। তবে কাজে ফিরলে প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন তাঁরা। কর্মবিরতি নয়, অন্য কোনও পথে আন্দোলন করতে হবে বলে অনুরোধ করেন সিনিয়র ডাক্তাররা।
সিনিয়রদের একাংশ এই পরামর্শ দিলেও কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হবে কি না তার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ জুনিয়রদের উপরই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এদিন সিনিয়র চিকিৎসক মৈত্রেয়ী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বলেন, ‘রোগী পরিষেবা যতটা সম্ভব সচল রাখার চেষ্টা করছেন সিনিয়রেরা। কিন্তু সরকারি হাসপাতালগুলিতে জুনিয়র ডাক্তারদের সাহায্য ছাড়া বিপুল রোগীর চাপ সামাল দিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সিনিয়র ডাক্তারদের।’
নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে জুনিয়রদের আন্দোলনে সিনিয়র চিকিৎসরা পাশে আছেন বলেই জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁরা চান, কর্মবিরতি না করে অন্য কোনও পথে আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হোক। এপ্রসঙ্গে এক সিনিয়র চিকিৎসক জানান, আন্দোলন কখনও বন্ধ হবে না। বিচার চাই আমরা। যতদিন পর্যন্ত না বিচার মিলছে, আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
বৈঠকের পরও যদি জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন তাহলে সিনিয়ররা আগের মতোই তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে আগের মতোই অতিরিক্ত পরিষেবা দেওয়ার কাজ চালিয়ে যাবেন সিনিয়ররা।
বৃহস্পতিবার জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজে ফেরার অনুরোধ জানিয়ে সাংসদ দেব বলেন, ‘গ্রামের গরিব মানুষরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যান। একটা ন্যায় পেতে গিয়ে আরেকটা যেন অন্যায় না হয়, সেটা ভাবা উচিত। আমাদের সমাজের আসল ভগবান ডাক্তাররা। আমি বললে কিছু হবে না। বিবেক যতক্ষণ নিজে থেকে না জাগছে, ততক্ষণ কিছু হবে না।’