কেহ নাহি জানে কার আহ্বানে , কত মানুষের ধারা
দুর্বার স্রোতে এলো কোথা হতে, সমুদ্রে হল হারা
এভাবেই কবিগুরুর ভাষায় বর্ণনা করা যেতে পারে মঙ্গলবারের জুনিয়র চিকিৎসক, সিনিয়র চিকিৎসক, রিক্লেইম দ্য নাইট সংগঠন থেকে শুরু করে ফুটবলপ্রেমী মানুষ, যৌনকর্মী, আপামর জনতার মিছিলকে।মঙ্গলবার বিকেলে কলেজ স্কোয়ার থেকে রবীন্দ্র সদন পর্যন্ত মিছিল ছিল জুনিয়র এবং সিনিয়র ডাক্তারদের সংগঠনের। তাঁদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছেন ‘রাত দখল’-এর ডাক দেওয়া মেয়েদের সংগঠন ‘রিক্লেম দ্য নাইট, রিক্লেম দ্য রাইট’। জনস্রোতে মিশেছেন হাজার হাজার মানুষ, পিছিয়ে থাকেননি যৌনকর্মী এবং রূপান্তরকামীরা।মিছিলে একইসঙ্গে হাতে হাত রেখে বিচার চেয়েছেন মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মহমেডান সমর্থকেরা।
রাজ্যের ২৩টি মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসকদের মিলিত মঞ্চ নতুন করে পূর্ণ কর্মবিরতি শুরু করেছে। সরকারের কাছে তুলে ধরা হয়েছে ১০ দফা দাবি। তাঁরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, সঠিক পদক্ষেপ না করা পর্যন্ত রাজ্যের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে কর্মবিরতি চলবে। সেই আবহেই নির্যাতিতা চিকিৎসকের জন্য বিচার চেয়ে মঙ্গলবার বিকেলে কলেজ স্কোয়্যার থেকে রবীন্দ্র সদন পর্যন্ত মিছিল ছিল জুনিয়র এবং সিনিয়র চিকিৎসকদের সংগঠনের। মিছিলে সামিল হলেন হাজার হাজার মানুষ, জনসমুদ্রের জোয়ারে ভাসল নগরীর রাজপথ।
গত রবিবার ধর্মতলার রাস্তায় মশাল হাতে নেমেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা চিকিৎসকেরা । তাঁরা জানিয়েছিলেন, নিহত চিকিৎসক বিচার না পেলে তাঁরা উৎসবে ফিরবেন না। রাস্তায় থেকেই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তাঁদের পাশে থেকে আগের মতো একইভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে নাগরিক সমাজ। শহর থেকে জেলা যেন অঙ্গীকারবদ্ধ পথে নেমে দেবীপক্ষের সূচনা দেখতে।
পিতৃপক্ষ শেষ হয়ে দেবীপক্ষের সূচনা – মহালয়ার ভোর। এখানেও কি সেই পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি ? গত ১৪ আগস্ট মেয়েদের নিরাপত্তার দাবিতে ‘রাত দখল’-এর ডাকে রাজ্যজুড়ে সামিল হয়েছিলেন হাজার হাজার জনতা। মঙ্গলবার ‘অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস’ চত্বরে আরও এক বার ‘রাত দখল’-এর কর্মসূচি মেয়েদের। রাত সাড়ে ১১টা থেকে ভোর সাড়ে ৪টে পর্যন্ত চলবে কর্মসূচি। কর্মসূচির এক আয়োজক জানালেন, তাঁদের কাছে পিতৃপক্ষ কিংবা দেবীপক্ষ একই, সেই ‘পিতৃতান্ত্রিক’ ধ্যানধারণা বহন করে চলা। অ্যাকাডেমি চত্বরে বসে সেই ‘পিতৃতান্ত্রিক’ ধ্যানধারণাকে ভেঙে দিতে চান তাঁরা। নিজেদের অনুষ্ঠানে তুলে ধরা নিজেদেরই কথা। রাত ১টা থেকে ৩টে পর্যন্ত চলবে ‘রাতের বৈঠক’। সেখানে উঠে আসবে নানা সমস্যার কথা। নিজের নিজের চৌহদ্দিতে একটি মেয়েকে কী কী সমস্যার মুখে পড়তে হয় সেই কথা উঠে আসবে বৈঠকে। তাঁদের কথায় , ‘লড়াইটা তাঁদের নিজেদেরই লড়তে হবে।’ মেয়েদের দাবি, একটা পক্ষ ধরে নয়, এই আন্দোলন চলুক বছরভর। সারা বছর ধরে মেয়েরা যাতে নিজেদের কথা বলতে পারেন, সেই সুযোগ আনার লড়াই চালিয়ে যেতে চান তাঁরা।
মহালয়াতেও জুনিয়র চিকিৎসকদের একটি কর্মসূচি রয়েছে। কলেজ স্ক্যোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে তাঁদের, যার ঘোষণা করা হয়েছিল আগেই। সেখানে আগের প্রতিবাদ আন্দোলনগুলির মতোই জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশাপাশি পা মেলাবেন শহর ও শহরতলির অসংখ্য মানুষ। মিছিল শেষে ধর্মতলায় একটি সভা রয়েছে জুনিয়র চিকিৎসকদের ।
তবে এর পরের দিনগুলিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি কিভাবে কোন পথে এগোবে তা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেননি জুনিয়র চিকিৎসকেরা। মঙ্গলবারের সাংবাদিক বৈঠকে জুনিয়র চিকিৎসকদের অন্যতম অনিকেত মাহাতো বলেন, ‘পুজোর দিনগুলিতে কী হবে না হবে সেই বিষয়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস’ ফ্রন্টের তরফে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’