• facebook
  • twitter
Wednesday, 19 March, 2025

শান্তিনিকেতনের ‘বাহা’ উৎসবে অন্য অনুভূতি

নতুন শাল ফুল ও শাল পাতা এবং জল দিয়ে আমরা এই বাহা পরব উদযাপিত করি। এই উৎসবের পরেই আমরা প্রকৃতির নতুন ফুল ফল পাতা নিজের জীবনে গ্রহণ করি।

নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিনিধি— রবি ঠাকুরের শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরির জঙ্গলে যখন তিল ধারণের ঠাঁই নাই, তখনই শান্তিনিকেতনের অদূরে প্রকৃতিকে ভালোবেসে “অন্যরকম” বসন্ত উৎসব ও বর্ষবরণ পালনের সাক্ষী থাকলো মানুষ।

বসন্ত পূর্ণিমার দিন, সকাল থেকেই রবীন্দ্রনাথের গান আর মাদলের তালে, বোলপুরের মুলুকে স্বাধীন ক্যাম্পাসে, নেচে উঠলো গোটা এলাকা। সামিল হলেন গ্রামীণ আদিবাসী থেকে কলকাতার নাগরিক জীবনে অভ্যস্থ সকলে।

সৌজন্যে, শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং পজিটিভ বার্তার যৌথ উদ্যোগে, স্বাধীন ট্রাস্ট, ওয়েস্ট বেঙ্গল মিডিয়া ফোরাম, অল বেঙ্গল প্রাইভেট নার্সিং হোমস এন্ড হসপিটালস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় আয়োজিত বাহা উৎসব (ফুলের উৎসব) ও বসন্ত বরণের মাধ্যমে বর্ষবরণ উৎসব।

ঋতুরাজ বসন্ত তার রূপের ডালি উজাড় করে প্রকৃতিকে সাজিয়ে তোলে। রঙে, রসে, গন্ধে ভরে ওঠে— সেজে ওঠে প্রকৃতি। বসন্ত পূর্ণিমার অবকাশে সারা দেশ মেতে ওঠে বসন্ত বন্দনায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেখানে থাকে ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠান। যদিও শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসবে বসন্তকে স্বাগত জানানো হয়।

আদিবাসী পরম্পরা অনুসারে এই বাহা পরবে তাঁরা শাল ফুল নতুন শালপাতায় রেখে নিবেদন করেন তাঁদের দেবতার কাছে। প্রকৃতির কাছে ঋণ স্বীকার করেন তাঁরা। এই বাহা পরবের পরেই প্রকৃতির নতুন ফুল, ফল এবং পাতাকে নিজেদের জীবনে গ্রহণ করে থাকে আদিবাসী সমাজ।
এই উৎসব শুধু রঙের ও সৌন্দর্যের নয়; এটি প্রকৃতির সঙ্গে আদিবাসীদের নিবিড় যোগের প্রতীক। বাহা উৎসব উদযাপনের মাধ্যমে তাঁরা যেমন প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সেভাবেই তাঁরা আদিবাসী সমাজের ঐতিহ্য ও ধর্মীয় আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। বাহা উৎসবের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো আদিবাসী সমাজ যেন তাদের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে বিচ্যুত না হয়, সে বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা।

প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী রথীন কিস্কু জানান, “নতুন শাল ফুল ও শাল পাতা এবং জল দিয়ে আমরা এই বাহা পরব উদযাপিত করি। এই উৎসবের পরেই আমরা প্রকৃতির নতুন ফুল ফল পাতা নিজের জীবনে গ্রহণ করি। এই উৎসবে আমরা প্রকৃতির কাছে আমাদের ঋণ স্বীকার করি। আমরা সেটাই সর্বজনীনভাবে উদযাপন করার উদ্যোগে সকলে এক সাথে আজ আনন্দে মেতে উঠেছি।”

বাহা উৎসব উপলক্ষ্যে আদিবাসী সমাজের ধর্মীয় প্রতিনিধি সহ বহু বিশিষ্টজনকে সম্মাননা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা অধ্যাপক ডা. সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডিন ডা. অয়ন গোস্বামী, ওয়েস্ট বেঙ্গল মিডিয়া ফোরামের নির্জন নন্দী, শঙ্কর মণ্ডল সহ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ কানন হাঁসদা সহ আর অনেকে উপস্থিত ছিলেন। বাহা উৎসব (ফুলের উৎসব) ও বসন্ত বরণ এর মাধ্যমে বর্ষবরণ উৎসব উপলক্ষ্যে সারা দিন ধরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ করা হয়।