বিগ জিরাে, অশ্বডিম্ব বলে তীব্র কটাক্ষ মমতার

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (File Photo: IANS)

কেন্দ্রের কুড়ি লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ আসলে অশ্বডিম্ব। কেন্দ্রের ঘােষণা আসলে বিগ জিরাে এই ভাষাতেই বুধবার মােদি সরকারকে তীব্রভাবে আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের ভাষণের পরেই নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী যে ঘােষণা করেছিলেন, তাতে দেশবাসীর মনে আশা জেগেছিল। ভেবেছিলাম রাজ্যগুলাে হয়তাে কিছু পাবে। কিন্তু কিছু নেই। জানিনা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে অর্থমন্ত্রী ‘মিসলিডিং’ করেছেন কিনা। সেটা আগামীদিনে দেশ বুঝবে। কিন্তু এই দুর্দিনেও মানুষকে ধোঁকা দেওয়া হল। কোভিড মােকাবিলার কিছুই দেওয়া হল না। কেন্দ্রের প্যাকেজ স্রেফ ‘আইওয়াশ’।

মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে পরিসংখ্যানগত উপস্থাপিত করেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। এদিন তাকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে আসা হয়েছিল। অমিত মিত্র বলেন, মঙ্গলবার যে কুড়ি লক্ষ কোটি টাকার কথা ঘােষণা করা হয়েছিল তার মধ্যে দশ লক্ষ কোটি তাে আগেই দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ৮ লক্ষ কোটি টাকা দিয়েছিল। লিকুইডিটির মাধ্যমে এই টাকা ব্যাঙ্কগুলি ঘুরে রাজ্যের হাতে আসতেও সময় লাগবে।

এছাড়া কোভিডের জন্য এর আগে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ১.৭ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘােষণা করেছিলেন । অর্থাৎ দশ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ আগেরবারেই ঘােষণা করা হয়েছে। বাকি ১০ লক্ষ কোটি টাকার মধ্যেও রাজ্য সরকারগুলির ঋণ নেওয়ার ঊর্দ্ধসীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ৪.২ কোটি টাকা। এই টাকাটাই রাজ্য সরকারের কাছে আসবে। যা আসলে জিডিপি’র ২ দুই শতাংশ মাত্র। অমিত মিত্র বলেন, কুড়ি লক্ষ কোটির হিসেব দিয়ে জিডিপির ১০ শতাংশ বলে বিভ্রান্তি তৈরি করা হচ্ছে।


অমিত মিত্রের বক্তব্যের পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আসলে কেন্দ্রের এই প্যাকেজ টোটাল জিরাে। সামাজিক প্রকল্পে খরচ বাড়ানাে, কোভিড মােকাবিলায় রাজ্যকে প্যাকেজ দেওয়া, টাকা ট্রান্সফার কিছুই বলা হল না। বরং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামােকে ধ্বংস করে রাজ্যের অধিকার কেড়ে নেওয়া হল। গণতন্ত্রকে থমকে দেওয়া হল। লকডাউনের নামে রাজ্যগুলােকে লকআউট করার এই প্রবণতাকে ধিক্কার জানাই।

মমতা এদিন রাজ্যকে বঞ্চিত এবং সাধারণ মানুষকে প্রবঞ্চনা করার বিষয়গুলিকে একের পর এক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এফআরবিএম-এর উদ্ধসীমা জিএসডিপি’র তিন শতাংশের বদলে পাঁচ শতাংশ করার সুযােগ থাকল না। রাজ্যকে মােরাটোরিয়াম দেওয়া হল না। বাংলার যে ৫২ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে, তা মিটিয়ে দেওয়ার কোনও আশ্বাস নেই। কোভিডের জন্য রাজ্যকে কোনও স্পেশাল প্যাকেজ দেওয়া হল না। কর্মসংস্থানের কোনও নতুন ক্ষেত্র তৈরি হল না। কৃষকদের ঋণ মুকুব করা হল না। যা একসময় মনমােহন সিংহ সরকার করেছিল।

নির্মলার ঘােষণা অনুযায়ী ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে তিন লক্ষ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার বিষয়ে মমতার যুক্তি আমরাই তাে ৯০ হাজার কোটি টাকা দিই রাজ্যের তরফে। ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পকে কার্যত ধ্বংস করে দিতে চাইছে কেন্দ্র। আগামীদিনে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের কী হবে তা কেউ জানে না। আর ইপিএফ এবং আয়কর দেওয়ার সময়সীমা বৃদ্ধি করার বিষয় তাে প্রত্যাশিতই ছিল এই মহামারি পরিস্থিতিতে।

মমতা বলেন, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর কথা শুনে মনে হয়েছে অর্থনীতি তলানিতে ঠেকেছে। রাজ্যগুলােকে অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংস করে দেশ কীভাবে দাঁড়াবে? রাজ্যগুলাে তাে দেশের এক একটা তম্ভ। কেন্দ্রীয় সকারের প্যাকেজ ঘােষণায় মমতার আক্ষেপ, একটা পয়সা দেওয়া হল না, রাজ্যগুলাে চলবে কী করে? শুন্যের থালি নিয়ে কী হবে মানুষের? তবে কেন্দ্রীয় সরকার শুন্য ভাণ্ডার দিয়ে ফিরিয়ে দিলেও রাজ্য সরকার যে সাধারণ মানুষকে ফেরাবে না, সেই আশ্বাস দেন মমতা।

একশ দিনের কাজের মাধ্যমে মহিলা স্বনির্ভর গােষ্ঠীকে কাজে লাগানাের কথা ঘােষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। যাতে আরও বেশি করে মানুষকে কর্মসংস্থানের সুযােগ করে দেওয়া যায় সেজন্য নানা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যখন বহুজাতিক কোম্পানিগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে, তখন এমএসএমই-কে কাজে লাগিয়েই চিকিৎসার সরঞ্জাম তৈরি করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা মুখে বলি না আত্মনির্ভর হওয়ার কথা, কাজে করে দেখাই। তাই রাজ্যে মাটির সৃষ্টি নামে নতুন প্রকল্প চালু করা হচ্ছে, যেখানে গ্রামের পঞ্চাশ হাজার একরের মতাে সরকারের খাস জমি ও সাধারণ মানুষের পতিত জমিকে কাজে লাগানাে হবে। দশ থেকে কুড়ি একর পতিত জমি ও সরকারি খাস জমি যুক্ত করে সমবায়ের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদন শুরু করা হবে।

বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমান এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে এই ছ’টি জেলায় এই প্রকল্প চালু হবে। জলসম্পদ দফতরেরর সঙ্গে উদ্যান পালন, প্রাণীসম্পদ এবং আরও অন্যান্য দফতরকে যুক্ত করে সমন্বয়ের মাধমে। এই মাটির সৃষ্টি প্রকল্পে মাইক্রো প্ল্যানিং-এর মাধ্যমে ছােট ছােট করে উৎপাদন করা হবে। যাতে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা করা যায়। এরজন্য গ্রামীণ সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাওয়া যাবে।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ভিনরাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকরা আসছে। লকডাউনও শিথিল করা হয়েছে। ফলে সামাজিক মেলামেশা বেড়ে করােনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে। ইতিমধ্যেই কয়েকটা গ্রিন জোন অরেঞ্জ হয়ে গিয়েছে। আমাদের অবশ্য চ্যালেঞ্জ থাকবে যাতে অরেঞ্জ জোনকে আবার গ্রিন করা যায়। আগামী দিনে মহামারী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সেপটিনেল সার্ভে করা হবে। যা একটি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত পদ্ধতি।