• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

ময়নাগুড়িতে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনায় মৃত ৬

ময়নাগুড়িতে লাইনচ্যুত হল পাটনা থেকে গুয়াহাটিগামী ১৫৬৩৩ আপ বিকানের গুয়াহাটি এক্সপ্রেস বৃহস্পতিবার ময়নাগুড়ির দোমোহনি এলাকায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে।

ময়নাগুড়িতে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা (Photo: SNS

ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা ঘটল এ রাজ্যের জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়িতে লাইনচ্যুত হল পাটনা থেকে গুয়াহাটিগামী ১৫৬৩৩ আপ বিকানের গুয়াহাটি এক্সপ্রেস বৃহস্পতিবার ময়নাগুড়ির দোমোহনি এলাকায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে।

ট্রেনটির বেশ কয়েকটি কামরা লাইনচ্যুত হয়ে যায় এই দুর্ঘটনার জেরে অনেক যাত্রীর প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আহত অবস্থায় ইতিমধ্যেই ১৬ জনকে ময়নাগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তাদের মধ্যে ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু জানিয়েছেন তার কাছে তিন জনের মৃত্যুর খবর রয়েছে। যদিও এই খবর লেখা পর্যন্ত ৬ জন যাত্রীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।

ট্রেনটিতে ৭০০-র মতো যাত্রী ছিল বলে জানা গেছে। করোনা আবহের কারণে ট্রেনটিতে যাত্রী কম ছিল। তা না হলে আরও বেশি প্রাণহানির সম্ভাবনা বাড়ত। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকার্য শুরু হয়েছে।

রেল দুর্ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেল দুর্ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দিয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।

এদিন প্রধানমন্ত্রী ট্যুইটে লেখেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে ট্রেন দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। ঘটনায় আহত এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি, এই দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন তিনি।

এই দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের জন্য ৫ লাখ টাকা, গুরুতর আহতদের ১ লাখ ও অপেক্ষাকৃত কম আহতদের জন্য ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছে ভারতীয় রেল। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ট্যুইট করে এই রেল দুর্ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে এই দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে আলিপুরদুয়ারের ডিআরএম দিলীপ সিংহ বলেন, ‘লাইনচ্যুত হয়েছে বিকানের এক্সপ্রেসে। আমি ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। আগে উদ্ধার কাজ। পরে অন্য কিছু। চারটে কামরা উল্টেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি।

দুর্ঘটনার সময় রেললাইনের কী অবস্থা ছিল, দুর্ঘটনার জেরে কামরাগুলিতে কী প্রভাব পড়েছে এবং সেগুলি কতটা দূরে ছিটকে পড়েছে তা প্রাথমিকভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত কমিটি তৈরির প্রাথমিক কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে রেল সূত্রে খবর।

সিগন্যাল ব্যবস্থা ঠিক ছিল বলেই প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। রেলের আধিকারিকদের প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, লাইনে ফাটল থেকেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আহত যাত্রীদের প্রাথমিকভাবে ময়নাগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

তবে সেখানকার পরিকাঠামো উপযুক্ত না হওয়ায় সেখান থেকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে আহতদের স্থানান্তরিত করা হয়। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজকেও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

জলপাইগুড়ির বিভিন্ন ব্লক হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক এবং নার্সদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, ৫০ টিরও বেশি অ্যাম্বুলেন্স রওনা দিয়েছে দুর্ঘটনাস্থলের উদ্দেশে জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু জানিয়েছেন, আপাতত তিন জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে।

১০-১২ জন আহত যাত্রীকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অন্ধকার নেমে যাওয়ায় উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় আলো এবং জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

মেডিকেল কলেজের দলও ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার পাটনা থেকে ওয়াহাটিগামী ওই ট্রেনটি বিকেল পাঁচটা নাগাদ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। দুর্ঘটনার পর ট্রেনটির ৪-৫টি কামরা একেবারে দুমড়েমুচড়ে গিয়েছে।

একটি কামরার উপরে উঠে যায় আর একটি কামরা। একটি কামরা জলেও পড়ে যায়। হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দুর্ঘটনার সময় ট্রেনটির গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার ছিল বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে।

ট্রেনটির ইঞ্জিনের পর থেকে ১২টি কামরা দুর্ঘটনার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে সাতটি কামরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, ওই ট্রেনটি ছাড়ার সময় তাতে প্রায় ৭০০ যাত্রী ছিলেন। পরে বিভিন্ন স্টেশন থেকে যাত্রীরা ওঠা নামা করেন।

দুর্ঘটনার পরে রেললাইনের দু’পাশে ছড়িয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় যাত্রীদের। অনেকে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া কামরায় আটকেও পড়েন। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে।

গ্যাস কাটার নিয়ে এসে কামরা কেটে যাত্রীদের বার করার চেষ্টা চলছে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আলিপুরদুয়ার থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় উদ্ধারকারী দল। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটি থেকে অনেকেই নিজেরা বার হয়ে এসেছেন।

বাকিদের উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে রেলের উদ্ধারকারী দলও। ইতিমধ্যেই আশপাশের সদর হাসপাতাল এবং অন্যান্য হাসপাতালের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে।

এই রেল দুর্ঘটনার তদন্তে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখবে। পাটনা থেকে গুয়াহাটিগামী ওই ট্রেনটি বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আলিপুরদুয়ার থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় একটি উদ্ধারকারী দল। ট্রেনটির ৪-৫টি বগি দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে। তার জেরে হতাহতের বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দুর্ঘটনার সময় ট্রেনটির গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার ছিল বলে প্রাথমিক ভাবে খবর পাওয়া গিয়েছে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের জনসংযোগ আধিকারিক নীলাঞ্জন দেব বলেন, “বৃহস্পতিবার বিকেল ৫ টা নাগাদ গুয়াহাটি-বিকানের এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়েছে।

আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের নিউ ময়নাগুড়ি এবং নিউ দোমোহনি সেকশনে এই ঘটনা ঘটেছে। রিলিফ ভ্যান যাচ্ছে। ডিআরএমরাও যাচ্ছেন। বাকি তথ্য এখনও জানতে পারিনি। জানলেই জানাব।”

পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী বলেন, ‘রেলের আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন। এখন আমাদের একমাত্র লক্ষ্য উদ্ধারকাজ। ময়নাগুড়িতে লাইনচ্যুত হয়ে বড়সড় দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে বিকানের গুয়াহাটি এক্সপ্রেস। তারই জেরে বহু যাত্রীর প্রাণহানির আশঙ্কা বাড়ছে।

ইতিমধ্যে উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে। সন্ধ্যা নেমে আসায় উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে উদ্ধার কাজ চালানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা।

ইতিমধ্যে প্রায় ৫১ টি অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল থেকেই ৩০টি অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।

জেলা প্রশাসনের তরফে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক-নার্সদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রস্তুতির।