পেটে ব্যথায় বিল ৫ লক্ষ, চড়া সুদে ঋণের জুলুম নার্সিং হোমের

স্টেটসম্যান ওয়েব ডেস্ক: শহরের নামজাদা হাসপাতালের তুঘলকি কান্ডকারখানার অভিযোগ! নড়েচড়ে বসল স্বাস্থ্য কমিশন। হাসপাতালের অস্বাভাবিক বিল মেটানোর জন্য কর্পোরেট সংস্থার থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে বাধ্য করা হল রোগীর পরিবারকে। অবশেষে স্বাস্থ্য কমিশনের তৎপরতায় ঋণমুক্তি ঘটতে চলেছে ওই রোগীর। কলকাতার আলিপুর এলাকার নামী ওই হাসপাতালকে নিয়ে অভিযোগের বিস্তারিত তদন্ত শুরু করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন।

জানা গিয়েছে, পেট ব্যথা, বমি আর চারদিন স্টুল পরিষ্কার না হওয়া ফৈয়জ হোসেন ভর্তি হন একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে তাঁর আট দিনের চিকিৎসার বিল গড়ায় ৪ লক্ষ ৯০ হাজার টাকায়। যার মধ্যে ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে শুধু ওষুধ ও সরঞ্জামের দাম। ওষুধেই ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটি ওষুধের ২০টির দাম ধরা হয়েছে ৮৪ হাজার টাকা। যা চলতি বাজারমূল্য থেকে ৫৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ বাজারে যে ওষুধের দাম ১৫০০ টাকা, সেরকম একটি নির্দিষ্ট ইঞ্জেকশনের প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৬৪ টাকা করে। যার ফলে এরকম ২০টি ওষুধের সর্বমোট দাম ধরা হয়েছে ৮৪ হাজার টাকা। কমিশন খোঁজ নিয়ে জেনেছে, ওই ওষুধটি ১৫০০ টাকাতেও পাওয়া যায়।

শুধু তাই নয়, বিলের অস্বাভাবিকতা শুধু ওষুধেই নয়, চিকিৎসা পরিষেবার জন্যও ধরা হয়েছে মোটা বিল। দু’জন ডাক্তারের অধীনে চিকিৎসা হয়েছে। কিন্তু ফৈয়জ হোসেনকে দেখেছেন চারজন চিকিৎসক! অথচ বাকি দুই ডাক্তারের কোনও পরামর্শ তাঁর রিপোর্টে উল্লেখ নেই। আর এই চিকিৎসকদের পরিষেবা বাবদ বরাদ্দ হয়েছে মোটা ফিজ। তাঁদের জন্য ১৭ হাজার ৮০০ টাকা ‘পেমেন্ট’ও দেখানো হয়েছে। অথচ কোনও মেডিক্যাল অ্যাডভাইস সেখানে নেই।


আর এই পাহাড়প্রমাণ বিল মেটানোর জন্য ওই রোগীর পরিবারকে একটি বেসরকারি লগ্নি সংস্থার থেকে ঋণ নিতে বাধ্য করা হয়েছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সূত্রের খবর, মোট বিল ৪ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা হলেও রোগীর পরিবার ও আত্মীয়স্বজন কোনওক্রমে ৩ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা জোগাড় করতে পেরেছিলেন। বাকি দেড় লক্ষ টাকা একটি বেসরকারি লগ্নি সংস্থা থেকে ঋণ নিতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ। হাসপাতালে বসেই ঋণ নিতে বাধ্য করা হয় তাঁদের। এরপরই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান ওই রোগী।

আশ্চর্যের বিষয়, ফৈয়জ হোসেনের জন্য আলাদা কোনও মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়নি। এমনকি তাঁকে একবারের জন্যও অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যেতে হয়নি। এই ঘটনায় প্রচন্ড ক্ষুব্ধ রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন (ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন)। কমিশন প্রথমে ওই রোগীকে ঋণমুক্ত করার জন্য হাসপাতালকে নির্দেশ দেয়। এরপর পদক্ষেপ শুরু হয়। কমিশনের চেয়ারপার্সন অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘গোটা ঘটনাটা পুলিসকে দেখতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যদপ্তর ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। পাশাপাশি ওই হাসপাতালকে বিল নতুন করে তৈরি করতে বলা হয়েছে। কমিশনের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে হাসপাতালকে ব্যবস্থা নিতে হবে। তারপর বিস্তারিত রিপোর্ট দাখিল করতে হবে। পাশাপাশি পুলিস ও স্বাস্থ্যদপ্তরের তদন্তও চলবে।’

এদিকে ওই হাসপাতালের এক কর্তা জানিয়েছেন, ‘আমাদের মতো নামজাদা হাসপাতাল কখনওই মধ্যস্থতাকারী হয়ে লোন নেওয়ার জন্য সংস্থা ধরে আনবে না। কেউ ব্যক্তিগতভাবে এই ধরনের ঋণ দিতে বা নিতেই পারে। তবুও ঘটনার তদন্ত করতে বলেছি।’