শেষ বেলায় উপচে পড়া ভিড়। কারওর হাতে হুমায়ুন, কেউ বা সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন ‘স্বর্গের নীচে মহা বিশৃঙ্খলা’। বইপ্রেমিক, পরিবেশ সচেতন মানুষ, আপাদমস্তক পাঠ্য পরিবেশে রাজনীতি খোজা বিশিষ্টজন, মােটের ওপর হরেক রকম স্মৃতি নিয়েই রবিবার শেষ হয়েছে ৪৪ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা। শেষ বেলায় শােনা গেছে অন্যভাবে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতিও। আসছে বছরের বইমেলা উৎসর্গিত বঙ্গবন্ধুর নামে।
বই প্রেমিদের একসঙ্গে খুঁজে পাওয়া নাকি দুষ্কর। বইপাড়ার অলিগলিতে নতুন পুরানাে বইয়ের পাশে বসে প্রিয় লেখককে খোঁজেন তারা, এমনই ধারণা প্রচলিত। কিন্তু বিশ্বজুড়ে সমস্ত বইপ্রেমী বছরে একবার একজায়গায় একত্রিত করার জন্য রাজ্য সরকারের উদ্যোগে আয়ােজিত হয় কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা। এই মেলা বইপ্রেমীদের কাছে উৎসব।
চলতি বছর বইমেলার থিম দেশ ছিল রাশিয়া। আগামী কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় থিম দেশ হবে বাংলাদেশ, রবিবার মেলার শেষ দিনে এমনটাই জানান বইমেলার উদ্যোক্তা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়। এদিন ‘জন্মশতবর্যে বঙ্গবন্ধু ও সােনার বাংলার স্বপ্নের বাস্তবায়ন’ শীর্ষক সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু, বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার তৌহিদ হাসান সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
এদিনের মঞ্চ থেকেই জানানাে হয়, ২০২১ সালের কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নামে উৎসর্গ করা হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানা গেছে।
এদিকে রবিবার, বইমেলার শেষ দিনে মেলাপ্রাঙ্গণে ভিড় ছিল উপচে পড়া। বন্ধুদের সঙ্গে বইমেলাতে এসেছিলেন কলেজ পড়ুয়া ত্রিধা। তিনি জানান, শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায় তার অন্যতম প্রিয় লেখক। লেখকের পুরানাে লেখাগুলি একত্রে পাওয়া যায় কিনা সেজন্যই নির্বাচিত স্টলগুলি খুঁজে দেখছেন তিনি। ত্রিধার কথায়, বইমেলা আসলে শুধু বইপ্রেমীদের জন্য নয়, নতুন পাঠকদের আগ্রহ তৈরি করার ক্ষেত্রেও খুব বড় ভূমিকা পালন করে।
কিছুটা একই সুর শােনা গেল গৃহবধূ নিশা মণ্ডলের গলায়। তিনি জানান, ছেলে হওয়ার পর চাকরি ছেড়ে আপাতত তিনি সংসারের হাল ধরেছেন। সমস্ত দিন সংসার সামলে বই পড়ার নেশাটাকে বাঁচিয়ে রাখা একটা চ্যালেঞ্জ বলেও জানান তিনি। নিশাদেবী আরও বলেন, বেশ কিছু নতুন লেখকের বই কিনেছেন তিনি। যদি তাদের লেখা ভাল লাগে তাহলে কলেজ স্ট্রিটে গিয়ে হয়ত একই লেখকের অন্য বইয়ের খোঁজ করবেন শীঘ্রই।
চলতি বছরের বইমেলাতে পরিবেশের দিকে দেওয়া হয়েছিল বিশেষ নজর। মেলা প্রাঙ্গনের সামনে সাইকেল স্ট্যান্ড করতে বিশেষ আগ্রহী হয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু এত প্রয়াস সত্ত্বেও সম্পূর্ণ প্লাস্টিকমুক্ত করা যায়নি মেলাপ্রাঙ্গণকে। স্বাভাবিকভাবেই পরবর্তী বইমেলা সম্পূর্ণভাবে প্লাস্টিক মুক্ত হবে, শেষ দিনে এমনটাই আশাবাদী মেলায় আশা বইপ্রেমিকরা। শুধু প্লাস্টিক নয়, রাজনীতিও থাকুক মেলাপ্রাঙ্গণের বাইরে, এমনই সুর শােনা গেল বেশির ভাগের কণ্ঠে।