সন্দীপ ঘোষ-সহ ৪ জনের জেল হেফাজত, চাঁটির পর এবার জুতো ছোড়া হল সন্দীপকে লক্ষ্য করে
SNS
আরজি কর হাসপাতালের দুর্নীতির অভিযোগের মামলায় ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সন্দীপ ঘোষ-সহ ৪ জনকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দিল আলিপুর আদালত। সিবিআই নিজেদের হেফাজতে চাইলই না আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষকে। সন্দীপ ঘোষ ছাড়াও সুমন হাজরা, বিপ্লব সিংহ এবং আফসর আলিকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। বিচারকের নির্দেশে মঙ্গলবার আলিপুর আদালতে সশরীরে হাজির করানো হয় সন্দীপ ঘোষ-সহ চার জনকেই।এদিন শুনানির সময় বিচারকের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় তদন্তকারী সংস্থাকে। আপাতত প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে রাখা হবে তাঁদের।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আর্থিক দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে সন্দীপ ঘোষ-সহ মোট চার জনকে গ্রেপ্তার করে সিবিআই। মঙ্গলবার তাঁর হেফাজত শেষ হওয়ার পর এদিন আলিপুর আদালতে পেশ করা হয় সন্দীপ ঘোষ, বিপ্লব সিং, সুমন হাজরা এবং আফসার আলিকে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে সন্দীপের আইনজীবী এদিনও তাঁর জামিন চাননি। আবার সিবিআইয়ের আইনজীবীরাও তাঁদের হেফাজতে নেওয়ার দাবি জানাননি। তাঁদের দাবি, পরে ৬ দিনের জন্য ফের সন্দীপকে হেফাজতে নিতে পারে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
এদিন আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবীর তরফে জানানো হয়, পরে প্রয়োজন হলে সন্দীপ ঘোষকে হেফাজতে চাওয়ার আবেদন করবে তারা। একথা শোনার পরই আদালতকক্ষে সিবিআইয়ের আইনজীবীকে তিরস্কার করেন বিচারক। তিনি বলেন, ‘ ভবিষ্যতের রায় কী হবে , তা এখন থেকেই ঠিক করতে চাইছেন ? ‘এরপরই ৪ জনকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবীদের যুক্তি, আরও কিছু তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেই তথ্যপ্রমাণ পেলে তাঁকে আবার হেফাজতে নেওয়া হবে। যদিও আদালত সাফ জানিয়েছে, তখন সিবিআই হেফাজত দেওয়া হবে কি না তা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে।
মঙ্গলবার আলিপুর আদালতে এজলাস থেকে বিচারক বেরিয়ে যেতেই স্লোগান শুরু হয়। বিচারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন অনেকেই । মূলত মহিলা আইনজীবীরাই সন্দীপের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। সন্দীপকে ‘ধর্ষক’ বলেও সম্বোধন করেন কেউ কেউ। আদালত কক্ষে তাঁর ফাঁসির দাবিও ওঠে। এরই মধ্যে একজন বলেন, ‘‘সন্দীপ ঘোষকে জুতো মার।’’ হৈ হট্টগোলের মধ্যে আদালতকক্ষে ফিরে আসেন বিচারক। হাত জোড় করে সবাইকে চুপ করার অনুরোধ করেন।তিনি আরও বলেন, শারীরিক ভাবে কাউকে হেনস্থা করা যাবে না। বিক্ষোভকারী আইনজীবীরা তখন বলেন, ‘‘আমরা গায়ে হাত দেব না। কিন্তু বাইরে কেউ কিছু হলে জানি না।’’
পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তায় সন্দীপ ঘোষকে আদালত থেকে বের করে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। বাইরে তখন বিক্ষোভ চলছে, উঠেছে ‘হায় হায়’ ধ্বনি। ঠিক সেই সময় সন্দীপ ঘোষের উদ্দেশে জুতো ছোঁড়েন এক ব্যক্তি। জুতো হাতে প্রিজন ভ্যানেই মারতে দেখা যায় তাঁকে। আদালত চত্ত্বর থেকে প্রিজন ভ্যান বেরিয়ে যাওয়ার সময়ও ওই ব্যক্তিকে পিছনে ছুটতে দেখা যায়।
গত ২ সেপ্টেম্বর আরজি করে দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় সন্দীপ ঘোষকে। ৩ সেপ্টেম্বর আলিপুর আদালতে বিশেষ সিবিআই আদালতে সন্দীপ ঘোষকে পেশ করা হয়। সন্দীপকে আদালত থেকে বার করার সময় শুরু হয় বিক্ষোভ, ‘চোর চোর’ চিৎকার করে একদল মানুষ সন্দীপের দিকে এগিয়ে যায়। সেই সময় সন্দীপের মাথায় পিছন থেকে চাঁটি মারেন এক ব্যক্তি।
সেই দিনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই ভার্চুয়াল শুনানির আবেদন করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তবে সেই আবেদন খারিজ করে দেয় আলিপুর আদালত। মঙ্গলবার সশরীরে আদালতে হাজির করানো হয় সন্দীপ-সহ ৪ জনকে। শুনানি শেষে আদালত চত্বরে আবার সেই একই পরিস্থিতি তৈরি হয়। জুতো ছোড়া থেকে শুরু করে মানুষকে এদিনও ‘চোর চোর’ স্লোগান দিতে দেখা যায়।