• facebook
  • twitter
Monday, 13 January, 2025

এখনই সাগরে হাজির ৪২ লক্ষ

এবার সাগর মেলায় পুণ্য কালের শুভ আরম্ভ হবে মঙ্গলবার সকাল ছটা ৫৮ মিনিটে। এবং চলবে বুধবার সকাল ৬ টা ৫৮ মিনিট পর্যন্ত।

ফাইল ছবি

রাজ্য সরকারের দাবি, এখন এই পর্যন্ত ৪২ লক্ষ লোক এসেছে গঙ্গাসাগরে। রাজ্যের মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাসের দাবি, ১ জানুয়ারি থেকে আজ ১২ তারিখ পর্যন্ত ৪২ লক্ষ লোক এসেছে গঙ্গাসাগর মেলায়। ৯ জানুয়ারি কলকাতার বাবুঘাট থেকে ভার্চুয়ালি গঙ্গাসাগর মেলার উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এবার সাগর মেলায় পুণ্য কালের শুভ আরম্ভ হবে মঙ্গলবার সকাল ছটা ৫৮ মিনিটে। এবং চলবে বুধবার সকাল ৬ টা ৫৮ মিনিট পর্যন্ত। এবারমেলায় অন্যতম বিশেষ আকর্ষণ ‘বন্ধন’। সাগর সঙ্গমে পূর্ণ স্নানের স্মৃতি অক্ষয় রাখতে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে নিজের ছবি সম্বলিত শংসাপত্র পেয়ে যাচ্ছেন ‘বন্ধন’ নামে ফটোবুথে। ‘ই- অনুসন্ধান’ নামে বিশেষ ডিজিটাল পদ্ধতিতে কিউ আর কোডের মাধ্যমে মেলা সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য এখন তীর্থ-যাত্রীদের হাটের মুঠোয়। পানীয় জল, শৌচালয়, এটিএম পরিষেবা, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, সন্ধান কেন্দ্র, বাস, লঞ্চ, এবং অন্যান্য সময় সরণি, পার্কিং সংক্রান্ত যাবতীয় সব তথ্য এবং পথ নির্দেশিকা পাওয়া যাচ্ছে এই ব্যবস্থার মাধ্যমে।

হয়েছে ‘ই -পরিচয়’। এটি একটি কিউ আর কোড ‘রিস্ট ব্যান্ড’। যা বয়স্ক ও শিশুটিদের দেওয়া হচ্ছে। এটি যে কেউ হারিয়ে গেলে খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। সাগরের পুণ্যতটে এবারও তিন দিনব্যাপী মহাসাগর আরতির আয়োজন করা হয়েছে। ১১ই জানুয়ারি সাগর সঙ্গমে ঢাকের বোলে, শঙ্খের পবিত্র ধ্বনিতে এবং পুরোহিতদের পবিত্র মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যে দিয়ে এই মহাসাগর আরতি শুভ সূচনা হয়। এই অপরূপ দৃশ্য ওয়েব টেলিকাস্টের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে দেশে বিদেশে। এই মেলার আধ্যাত্মিক আলোচনার জন্য আয়োজিত হয়েছে ১১ জানুয়ারি থেকে ১৩ জনের এ পর্যন্ত ‘সাগর প্রবচন’। গত ১১ জানুয়ারি এর শুভ সূচনা হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন সম্মিলিতভাবে গঙ্গাসাগরের এই মঞ্চ আধ্যাত্মিক ও শান্তির বার্তা প্রচারের মঞ্চে পরিণত করেছে।

এবারের মেলায় পূর্ণার্থীদের বরাবরের জন্য ২১টি জেটি ব্যবহার করা হচ্ছে। তৃতীয় চলাচলের স্বার্থে ২২৫০টি সরকারি বাস ও ২৫০টি বেসরকারি বাস, ৯ টা বার্জ, ৩২টি ভেসেল ও ১০০টি লঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ১৩ হাজারেরও বেশি পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। ৪৪টি ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে অ্যাডভান্স টিম, ১৮টি অ্যান্টি ক্রাইম পেট্রোলিং টিম,৫০ টি ফুট পেট্রোলিং টীম, ১৮টি মিসিং পার্সেন্ট স্কোয়ার্ড, দুটি স্নিফার ডগ, ২৮টি রিভার পেট্রোলিং টীম, ২৩টি কো-অর্ডিনেশন টিম দিবারাত্রি মেলায় নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত আছে। তীর্থযাত্রীরা যাতে নিরাপদে পূর্ণস্থান করতে পারেন তার জন্য ৬১৭টি ড্রপ গেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্যারিকেড পুলিশ ক্যাম্প ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে।

কথা হচ্ছিল জেলাশাসক সুমিত গুপ্তার সঙ্গে। কথায় কথায় বললেন, মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও মেলা সম্পর্কিত যাবতীয় বিবরণ পূর্ণ্যার্থীদের কাছে তুলে ধরার জন্য বসানো হয়েছে ৬২টি জায়েন্ট স্ক্রিন। আটটি এলইডি ভ্যান। এছাড়াও সাতটি ওয়াইফাই জোন, বিনামূল্যে ওয়াইফাই কলিং বুথ, স্যাটেলাইট ফোনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ।

এত বড় গঙ্গাসাগর মেলা হবে আর অপরাধের ঘটনা ঘটবে না, তা তো হতে পারে না। এখন পর্যন্ত ২২ টি পকেটমারীর ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে ১৮টি ক্ষেত্রে চুরি যাওয়া বস্তু উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ১৫ জনকে। সাগর মেলায় গত বছর থেকেই অপরাধমূলক ঘটনা বাড়ছে বলে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসন কিভাবে কাজ করবে তা সাংবাদিকদের বলে করবে না। গঙ্গাসাগর মেলাকে ‘জাতীয় মেলা’ ঘোষণা করার দাবি জানান তিনি।

ইতিমধ্যেই আগত পুণ্যার্থীদের একজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তবে, সেই মৃত্যু স্বাভাবিক। আজ সোমবার উত্তরপ্রদেশের ৫৯ বছর বয়সী অবদেশ তিওয়ারির মৃত্যু হয়েছে। এখনো পর্যন্ত দুজন অসুস্থ তীর্থযাত্রীকে এয়ার লিফটের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে কলকাতার এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আরো একজন অসুস্থ মানুষকে ক্যালকাটা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন বিশেষ ভাবে গঙ্গাসাগরের তট ভূমিকে রক্ষা করতে উদ্যোগী হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এই ডট ভূমি-তে ম্যানগ্রোভ রোপন কর্মসূচি নেওয়া হয়। ১ এক নম্বর সমুদ্র তট সহ গঙ্গাসাগরের এই ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল তৈরি করবেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। সুন্দরী, হেতাল, গরাণ, গাছের তৈরি এই ম্যানগ্রোভ অরণ্য উপকূলবর্তী এলাকার ভাঙ্গন প্রতিরোধ করতে ‘বায়ো-সিল্ভ’- এর কাজ করবে।

মেলার দায়িত্বে থাকা অরূপ বিশ্বাসের ক্ষোভ, কেন্দ্রীয় সরকার গঙ্গাসাগর মেলা দিকে নজর দিচ্ছে না। তাঁর কথায়, চাইলে চিনি, যোগান চিন্তামণি। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই মূল স্থল ভাগের সঙ্গে সাগরদ্বীপের যোগাযোগের জন্য মুড়িগঙ্গা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাজ্য সরকারের তহবিল থেকে ১৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতুটি নির্মাণের কাজ শুরু হবে খুব শিগগিরি। চার লেন বিশিষ্ট এবং পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এই সেতু নির্মাণের জন্য পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট কাজ সম্পত্তি শেষ হয়েছে। সেতুরির নামকরণ করা হবে, ‘গঙ্গাসাগর সেতু’।