শহরে ‘গোলি মারো’ স্লোগানে গ্রেফতার ৩, চিহ্নিত আরও ২৫

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে বিজেপি পতাকা হাতে উত্তেজক "গোলি মারো" স্লোগান দিচ্ছে এক ব্যক্তি। (Photo: Screengrab from Twitter/@geetv79)

দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত ব্যবস্থা নিল কলকাতা পুলিশ। রাতভর অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযােগ- ‘দেশ কে গদ্দারাে কো গােলি মারাে’ স্লোগান দিয়েছিল তারা। শহিদ মিনারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র সভায় মিছিলে আসার সময় তাদের এই উত্তেজক স্লোগান দিতে শােনা গিয়েছে। যা নিয়ে সরব হয়েছে রাজ্যের বিরােধী দলের রাজনীতিক থেকে শুরু করে আম বাঞ্জলি।

এক বাক্যে সকলের একটাই মত, বাংলার সংস্কৃতিতে তাে এমনটা আগে হতে দেখা যায়নি। এই স্লোগানের কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়ে সরব হয়েছিল বাম-কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। প্ররােচণামূলক স্লোগান দিতে দিতে কিভাবে অমিত শাহের সভায় যাওয়ার ছাড়পত্র পেল? পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায় বলে কলকাতা পুলিশকে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি কংগ্রেসের অধীর রঞ্জন চৌধুরি থেকে শুরু করে বামফ্রন্টের মহম্মদ সেলিম।

তবে শেষমেশ এই ঘটনায় নিউ মার্কেট থানায় একটি অভিযােগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সােমবার দলের এক বিশেষ কর্মসূচি থেকে তৃণমূল সুপ্রিমাে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই স্লোগানের কড়া ভাষায় বিরােধিতা করেন। বাংলার সংস্কৃতিতে এমন ভাষাকে যে কোনও ভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে না তাও এদিন জানিয়ে দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।


কলকাতা পুলিশ সুত্রের খবর, কলকাতার জওহরলাল নেহেরু রােডের বাসিন্দা পেশায় হকার ইন্দ্রজিৎ কুমার মাল অভিযােগ দায়ের করেন। ‘দেশকে গদ্দারাে কো গােলি মারাে’-এর মতাে প্ররােচনামূলক স্লোগান দেওয়ায় নিউমার্কেট থানায় অভিযােগ দায়ের করেন তিনি। অজ্ঞাত পরিচয়ের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩-এ, ৫০৫, ৫০৬ এবং ৩৪ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।

তদন্তে নেমে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং কলকাতা পুলিশের নিজস্ব ব্যাগ প্যাকের ফুটেজ খতিয়ে দেখে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা হয়। রাতভর অভিযান চালিয়ে সেন্ট্রাল এভিনিউ এলাকা থেকেই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে রয়েছে পঙ্কজ প্রসাদ, ধ্রুব বাসু ও সুরেন্দ্র কুমার তিওয়ারি।

এই কাণ্ডে বার্ধক্য ও অসুস্থতার কারণে ধ্রুব বসু জামিন পেলেও বাকি দুজনের জামিনের আবেদন খারিজ করেন বিচারপতি। সুরেন্দ্র ও পঙ্কজের ৪ মার্চ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারপতি। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, মিছিলে গােলি মারাে স্লোগান দিয়েছিল ২০ থেকে ২৫ জন। তাদেরকেও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে।

এই কাণ্ডে কলকাতা পুলিশের নগরপাল অনুজ শর্মা একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, রবিবার একটি রাজনৈতিক দলের র‍্যালিতে অংশগ্রহণ করতে যাওয়ার সময় মিছিল থেকে কিছু প্ররােচনামূলক স্লোগান দিতে শােনা গিয়েছে। এই ঘটনায় নিউ মার্কেট থানায় সুনির্দিষ্ট অভিযােগ দায়ের করে তদন্ত করা হচ্ছে।

মিছিলের ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখে ইতিমধ্যেই রবিবার রাতেই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতের নির্দেশে যার মধ্যে দু’জনের পুলিশ হেফাজত হলেও একজন জামিনে ছাড়া পেয়েছে। সম্প্রতিক অতীতে কলকাতায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং অন্যান্য সংগঠের বেশ কিছু র‍্যালি এবং মিছিল, মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রত্যেকেই নিজের মতামত ব্যক্ত করেছে। কলকাতা শহরে পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে। শহরের সবকটি থানার ওসি’দের নিজের এলাকায় যে কোনও প্রকারে প্ররােচনা এবং উষ্কানিমূলক আচরনে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শহরে আইন শৃঙ্খলার পরিবেশ অটুট রাখার সমস্ত রকম ব্যবস্থা গ্রহণ কড়া হচ্ছে।

রবিবার দিল্লির মতাে কলকাতার রাজপথেও শােনা গিয়েছিল ‘গােলি মারাে’ স্লোগান। কিন্তু এই ঘটনা ‘তুচ্ছ’ এমনটাই মতামত দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়।

রবিবার শহিদ মিনার ময়দানে সভা ছিল অমিত শাহের। এদিন ধর্মতলা চত্বরে ‘দেশ কে গদ্দারাে কো, গােলি মার সালাে কো’ স্লোগান দিতে শােনা যায় একটি দলকে। ইতিমধ্যেই ৩ জন স্লোগানদাতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদিকে এই স্লোগান ‘তুচ্ছ ঘটনা’, সােমবার এমনটাই মন্তব্য করেন রাজ্যপাল।

এদিন ভিক্টোরিয়া মেমােরিয়ালে ‘জালিয়ানওয়ালাবাগ’ প্রদর্শনী উদ্বোধনে এসেছিলেন তিনি। রাজ্যপাল জানান, হাজার জনের মধ্যে একজন কি বলল তাতে কিছু যায় আসে না। এমনকি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা ঘটনাটি সেনসেশনালাইজ করছেন।’

জগদীপ ধনকর জানান, এই স্লোগান এমন কিছু গুরুত্বপুর্ণ নয় বলে আমি মনে করি। আপনাদের কাছে এটা ১০০ শতাংশ সেনসেশনাল। ‘আমার কাছে এই ধরনের জিনিস ০.১ শতাংশ গুরুত্বপুর্ণ’, মন্তব্য রাজ্যপালের।