• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

১৯ এপ্রিল থেকে ১৮তম লোকসভা নির্বাচন, দেশজুড়ে লাগু আদর্শ আচরণবিধি

দিল্লি, ১৬ মার্চ: সব প্রতীক্ষার অবসান! আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে দেশজুড়ে ১৮তম লোকসভা নির্বাচন। গণতন্ত্রের এই উৎসবকে কেন্দ্র করে আজ থেকে দেশজুড়ে জারি হল আদর্শ আচরণ বিধি। দেশজুড়ে মোট সাত দফায় এবারের লোকসভা ভোট হবে। সন্ত্রাস ও ভোটারদের নিরাপত্তার কথা ভেবে এক একটি রাজ্যে দফার সংখ্যা এক এক রকম। সবচেয়ে বেশি সাত দফায়

দিল্লি, ১৬ মার্চ: সব প্রতীক্ষার অবসান! আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে দেশজুড়ে ১৮তম লোকসভা নির্বাচন। গণতন্ত্রের এই উৎসবকে কেন্দ্র করে আজ থেকে দেশজুড়ে জারি হল আদর্শ আচরণ বিধি। দেশজুড়ে মোট সাত দফায় এবারের লোকসভা ভোট হবে। সন্ত্রাস ও ভোটারদের নিরাপত্তার কথা ভেবে এক একটি রাজ্যে দফার সংখ্যা এক এক রকম। সবচেয়ে বেশি সাত দফায় ভোট হবে বাংলা, বিহার ও উত্তরপ্রদেশে। মহারাষ্ট্র এবং জম্মু ও কাশ্মীরে ৫ দফায় ভোট। ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ ও ঝাড়খণ্ডে ৪ দফায় ভোট। ছত্তিশগড় ও অসমে ৩ দফায় ভোট। কর্ণাটক, রাজস্থান, ত্রিপুরা ও মণিপুরে ২ দফায় ভোট। এছাড়া বাকি ২২টি রাজ্যে এক দফাতেই ভোট হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে কমিশন। বাংলায় গতবারের মতো এবারেও সাত দফায় লোকসভা ভোট ঘোষণা করায় রাজনৈতিক জল্পনার পারদ বাড়তে শুরু করেছে।

উল্লেখ্য, আজ, শনিবার দিল্লিতে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সদর দপ্তরে পূর্ব ঘোষিত সময় অনুযায়ী, দুপুর তিনটে থেকে ভোটের নির্ঘন্ট ঘোষণা করা হয়। মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ আজ সাংবাদিক বৈঠক ডেকে এই ঘোষণা করে। কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এই মুহূর্তে সারা দেশে প্রায় ৯৭ কোটি ভোটার রয়েছে। অর্থাৎ এবারের নির্বাচনে ৯৬.৮ কোটি মোট ভোটার। যার মধ্যে ৪৯.৭ কোটি পুরুষ ও ৪৭.১ কোটি মহিলা ভোটার। আর নতুন ভোটার রয়েছেন ১.৮২ কোটি। বর্তমানে দেশে প্রায় ৫০ কোটি পুরুষ ভোটার রয়েছে। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এই মুহূর্তে দেশে মোট পুরুষ ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৪৯ কোটি ৭০ লক্ষ।

অন্যদিকে মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৪৭ কোটি ১০ লক্ষ। তবে দেশের ১২টি রাজ্যে মহিলা ভোটারের সংখ্যা পুরুষদের থেকে বেশি। দেশে নতুন ভোটারের সংখ্যা রয়েছে প্রায় ১ কোটি ৮২ লক্ষ। যার মধ্যে ৮৫ লক্ষের বেশি মহিলা ভোটার। পাশাপাশি, ৮৫ উর্দ্ধ ভোটারের সংখ্যা রয়েছে প্রায় ৮২ লক্ষ। সারাদেশে প্রায় সাড়ে ১০ লক্ষের বেশি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে এবারের সাধারণতন্ত্রের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই ভোটগ্রহণে ৫৫ লক্ষ ইভিএম ব্যবহৃত হবে। দেশে মোট ৫৪৩টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে।

জানা গিয়েছে, ১৬ জুন শেষ হচ্ছে চলতি লোকসভার মেয়াদ। আর তার আগেই লোকসভা নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কমিশন। ৪ জুনের মধ্যে ভোট গণনা শেষ করে যথা সময়ে নতুন সরকার গঠনের পথ প্রশস্ত করা হবে। সেজন্য ২ বছর ধরে ভোটের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা। ১৬ জুন ১৭তম লোকসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আমরা কীভাবে নিজেদের তৈরি করেছি, তা বলব। এবার আমাদের ৯৭ কোটি ভোটার রয়েছে। ১০.৫ লক্ষ ভোট কেন্দ্র রয়েছে। ৫৫ লক্ষ ইভিএম থাকছে।’’

এবার ৫৪৩টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের পাশাপাশি, দেশজুড়ে ২৬টি কেন্দ্রে উপনির্বাচন রয়েছে। পাশাপাশি, বিহার, গুজরাত, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র, ত্রিপুরা, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, তেলঙ্গানা, হিমাচল প্রদেশ, রাজস্থান, কর্নাটক, তামিলনাড়ুতে উপনির্বাচন লোকসভার সঙ্গেই হবে বলে রাজীব জানিয়েছেন। এই ২৬টি কেন্দ্রের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে দুটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন রয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার বরানগর ও মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলায় এই নির্বাচন রয়েছে। যার মধ্যে একটি তৃতীয় দফা এবং অন্যটি সপ্তম দফায় অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি, দেশের চারটি রাজ্যে এক দেশ এক নির্বাচনের নীতিতে এবারের লোকসভার সঙ্গে সঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে। সেই চারটি রাজ্য হল সিকিম, ওড়িশা, অরুণাচল প্রদেশ ও অন্ধ্রপ্রদেশ। অরুণাচল প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন- ১৯ এপ্রিল। সিকিমে বিধানসভা নির্বাচন- ১৯ এপ্রিল। অন্ধ্রপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন- ১৩ মে। ওড়িশায় বিধানসভা নির্বাচন হবে চার দফায়, যথাক্রমে— ১৩ মে, ২০ মে, ২৫ মে এবং ১ জুন। চার রাজ্যেই লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনেও ভোট গণনা ৪ জুন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এক দশক পরেও বিধানসভা নির্বাচন হচ্ছে না জম্মু ও কাশ্মীরে।

এবার ভোট ঘোষণার পাশাপাশি, দেশজুড়ে হিংসা বা সন্ত্রাস রোধে কঠোর পদক্ষেপের ঘোষণা করেছে কমিশন। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করায় কমিশনের একমাত্র লক্ষ্য। সেজন্য উপযুক্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, এবার ভোটে সন্ত্রাসের কোনও জায়গা থাকবে না। অভিযোগ পাওয়ার ১০০ মিনিটের মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে কমিশন ও নিরাপত্তায় থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনী। ১৯৫০-এ ফোন করলেই ১০০ মিনিটের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানাল কমিশন। ভোটের আগে এবং ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসে কঠোর পদক্ষেপ করবে। সন্ত্রাস মোকাবিলায় প্রতি জেলায় নির্বাচন কমিশনের কন্ট্রোল রুম খোলা হচ্ছে। সন্ত্রাস রুখতে প্রতিটি রাজ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। অভিযোগ এলেই কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কারও বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারা থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অর্থের অপব্যবহার রুখতেও বদ্ধপরিকর নির্বাচন কমিশন। ভোটে যথেচ্ছভাবে টাকা ব্যবহার করাও রদ করা হবে বলে জানালেন রাজীব কুমার। তিনি জানান, কয়েকটি রাজ্যে ভোটে টাকার ব্যবহার বেশি হয়। সেগুলির দিকে নজর রাখছে কমিশন। টাকার অপব্যবহার হতে দেওয়া যাবে না। এর জন্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। কোনও রকম উপঢৌকন যাতে না দেওয়া হয়, সে দিকে নজর দিতে বলা হয়েছে সংস্থাগুলিকে। সমস্ত বিমানবন্দরগুলির দিকেও নজর রাখা হচ্ছে। রাজ্যগুলিতে কোনও হেলিকপ্টার নামলে, তা অনুসন্ধান করে দেখা হবে।

কমিশন স্পষ্টভাবে এদিন জানিয়ে দিয়েছে, হিংসা হলে কড়া পদক্ষেপ করুক জেলা প্রশাসন। সন্ত্রাসমুক্ত ভোট করতে পদক্ষেপ করতে হবে ডিএম এবং এসপি-দের। ভোটের কাজে অস্থায়ী ও চুক্তি ভিত্তিক কর্মীদের ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি এক জায়গায় তিন বছর নিযুক্ত থাকলে সেই আধিকারিককে বদলি করা হবে। ভোটারদের অর্থের টোপ দিলেই কড়া ব্যবস্থা নেবে কমিশনের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট বিভাগ। ভোটে কোনওরকম উস্কানিমূলক ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করা যাবে না। অবাধ ও রক্তপাতহীন ভোট করাতে কড়া পদক্ষেপ নেবে কমিশন।

মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, ‘‘সুষ্ঠুভাবে ভোট পরিচালনা করতে বেশ কিছু বাধা পেরোতে হবে কমিশনকে। তার জন্য অনেক কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। যাঁরা ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটে হিংসা বা রক্তক্ষয় হতে দেওয়া যাবে না।’’

মুখ্য নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, ‘‘গত এক বছরের মধ্যে ১১টা নির্বাচন হয়েছে। সে ভাবে কোনও হিংসার ঘটনা ঘটেনি। যেখানে হত হিংসার ঘটনা, সেখানেও কমেছে। ভুয়ো খবর নিয়েও আমরা পদক্ষেপ করেছি।’’ মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সকলকে ভোট দিতে আসার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। তিনি জানান, লোকসভা ভোটের জন্য নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ‘নো ইওর ক্যান্ডিডেট’ নামে নতুন অ্যাপ চালু করা হচ্ছে, যেখানে প্রার্থীদের বিষয়ে বিশদ তথ্য জানা যাবে।

পাশাপাশি, এবারের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে দেশব্যাপী ভুয়ো খবরের সঙ্গেও লড়াই করবে কমিশন। এব্যাপারে রাজীব কুমার বলেন, কোনওরকম ভুয়ো খবর যাতে না ছড়ায়, তার দিকে নজর থাকবে। তার জন্য অনেক ব্যবস্থা থাকছে। নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। কী ভাবে ভুয়ো খবরের রমরমার সঙ্গে লড়াই করতে হবে, তা নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ভোট কর্মীদের। অভিযোগ পেলেই কড়া পদক্ষেপ করা হবে।