রবিউল, জসীমের তুলির টানেই প্রাণ পাবে ষোড়শভূজা দুর্গা

দেশের ঐক্য ও সংহতি রক্ষায় আবির্ভাব ঘটতে চলেছে ষােড়শভূজা দেবী দুর্গার। আর দেবী দুর্গার ষোলো হাত তৈরিতে দিন রাত শিল্পী শুভেন্দুর সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন রবিউল, জসীম, আবদুল্লাহ।

চলতি বছর হিন্দু ধর্ম থেকে বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের যাত্রাপথের কাহিনি উপস্থাপন করতে চলেছে গলফ গ্রিন শারদোৎসব কমিটি। পুজোর বাকি আর হাতে গােনা মাত্র কয়েকদিন। শেষ মুহূর্তে ব্যস্ততা তুঙ্গে। কে কোন কাজ করবেন, তা দীর্ঘদিন আগেই নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন শিল্পী। সেইমতাে তাঁর ‘সৈনিক’রা মণ্ডপ সজ্জার কাজে কোনও খামতি রাখছেন না। এই মুহূর্তে অবশ্য প্রায় শেষের মুখে গলফ গ্রীন শারদোৎসব কমিটির মণ্ডপসজ্জার কাজ।

থিম প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শিল্পী শুভেন্দু মণ্ডল জানান, প্রাচীন হিন্দু ধর্ম থেকেই বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের সূচনা হয়। আর ২০০ বছর আগের এই যাত্রাপথই থিমের মাধ্যমে তুলে ধরতে চাইছেন তিনি। তার কথায়, দেবীর দশভূজা রূপের কথাই সকলে জানে। কিন্তু দেবীর ষােড়শভূজারূপই এখানে প্রাধান্য পেয়েছে। আর ষোলো হাতের দুর্গা প্রতিমা বানাতে তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন শেখ রবিউল, জসীম, আব্দুল্লাহ।


এই পুজো কমিটির সভাপতি তপন দাশগুপ্ত জানান, শিল্প নির্মাণ শিল্পীর কাজ। ধর্ম প্রত্যেকের নিজের নিজের, কিন্তু উৎসব সকলের। শুভেন্দু জানান, তার দলে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছেন শেখ রবিউল, জসীমরা। রয়েছেন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী মুস্তাফা কামালও। প্রত্যেকেই অত্যন্ত দক্ষ শিল্পী, জানান তিনি। শুভেন্দু আরও বলেন, তুলির টানই যে কোনও শিল্পীর পরিচয়। আর এবারে তার থিমের মূল বার্তা ঐক্য ও সংহতি। রবিউলদের হাত ধরেই এই দুর্গাপুজোর মণ্ডপ গড়ে উঠছে, জানান এই শিল্পী।

দীর্ঘদিন থেকেই মূর্তি গড়ার কাজ করছেন, এমনটাই জানিয়েছেন শিল্পী জসীম। তার কথায়, ষোলো হাতের দুর্গা বানানাের কাজে তিনি দীর্ঘদিন বাড়ির বাইরে কাটাচ্ছেন। একেবারে দেবী দুর্গার মূর্তিতে তুলির শেষটানের পর নিজের বাড়ি নৈহাটিতে ফিরবেন তিনি। তাঁর কথায়, বহুদিন থেকে প্রতিমা গড়ার সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি। সাম্প্রদায়িক বিভেদকে কোনওদিনই প্রশ্রয় দেননি। তার পেশা ও শিল্পীসত্ত্বার সামনে ধর্ম কোনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। দেবী দুর্গার কাছে তিনিও ভক্তি সহকারে মাথা নত করেন, জানান জসীম।

পুজোর থিম প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শিল্পীরা জানান, দেবী দুর্গা অসুর সংহারে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন। ষােল হাতে সেই অস্ত্রগুলিই থাকছে। যেহেতু থিমের মধ্য দিয়ে ২০০ বছর আগেকার সময়কে তুলে ধরার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে, তাই থিমসঙ্গীতে কোনও আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার করা হয়নি। প্রায় শেষের মুখে মণ্ডপ তৈরির কাজ। ব্যস্তভাবে হাত চালাতে চালাতে শিল্পী জানালেন, ‘ঐক্য আমাদের মধ্যে রয়েছে। একই সঙ্গে সংহতির বার্তাও থাকছে আমাদের শিল্পে।’