বীরভূমে স্পিড বোট উল্টে নদীতে জেলাশাসক, সাংসদ ও বিধায়ক সহ ১২, নিখোঁজ ১

বীরভূমে বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়ে বিপদে পড়লেন জেলাশাসক। তাঁর সঙ্গেই জলে পড়ে গেলেন দুইজন তৃণমূল সাংসদ ও বিধায়ক সহ মোট ১২ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। দুর্ঘটনার সময় ওই স্পিড বোটে জেলাশাসক ছাড়াও ছিলেন জেলার একাধিক প্রশাসনিক আধিকারিক। বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় তাঁদের উদ্ধার করা সম্ভব হলেও এখনও একজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে সূত্রের খবর। যা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে জেলার প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে জেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে। তাঁকে উদ্ধারে ঘটনাস্থলে গিয়েছেন বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা।

জানা গিয়েছে, বুধবার বন্যা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন প্রশাসনিক কর্তারা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন সাংসদ ও বিধায়করা। সব মিলিয়ে মোট ১৩ জন। বীরভূমের লাভপুরের ১৫ টি গ্রাম ইতিমধ্যে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। তাঁর মধ্যে ছয়-সাতটি গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। এখানে কুয়ে নদীর জল ঢুকছে দ্রুত গতিতে।বহু মানুষ জলবন্দি হয়ে আছেন। এদিন একটি স্পিডবোটে করে এইসব এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন জেলা ও ব্লকের প্রশাসনিক কর্তারা। বোটে তখন ছিলেন জেলাশাসক বিধান রায়, জেলা পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায়, সাংসদ অসিত মাল, সামিরুল ইসলাম এবং লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ সহ অন্যান্য প্রশাসনিক আধিকারিকরা।

যেসব গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়েছে, সেইসব গ্রামের মানুষের সঙ্গে দেখা যোগাযোগ করতে গিয়েই ঘটে বিপত্তি। আচমকা প্রবল জলের স্রোতে নিয়ন্ত্রণ হারায় স্পিড বোট। সেটি উল্টে কুয়ে নদীতে পড়ে যান পুলিশ সুপার বাদে বাকি সকলে। দ্রুত স্থানীয় মানুষজন ওই প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উদ্ধারে জলে নেমে পড়েন। খবর দেওয়া হয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকেও। ঘটনায় একজন নিখোঁজ থাকলেও বাকিদের উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁরা এখন সুস্থ আছেন বলে জানা গিয়েছে।


প্রসঙ্গত গত প্রায় তিনদিনে বীরভূমে প্লাবিত একাধিক এলাকা। কোপাই নদী ছাপিয়ে ডুবে গিয়েছে গোয়ালপাড়া ব্রিজ। ফলে বোলপুর ও সিউড়ির মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। এই কোপাই নদীই লাভপুরে ঢোকার আগে কুয়ে নদী নামে পরিচিত। এখন সেই নদী প্রবল জলের চাপে ফুঁসছে। ডুবে গিয়েছে সতীপীঠ কঙ্কালীতলা মন্দির প্রাঙ্গণ। সেখানে এখন প্রায় চার-পাঁচ ফুট জল জমে আছে। ফলে মন্দিরে পুজোপাঠও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

এদিকে দ্বারকা নদী ছাপিয়ে তারাপীঠের মন্দিরের আশেপাশের লজগুলির নিচের তলায় জল ঢুকে গিয়েছে। জলমগ্ন হয়েছে তারাপীঠ মহা শ্মশান সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। শ্মশানের ইলেকট্রিক চুল্লির ট্রান্সফরমার জলের তলায় ডুবে গিয়েছে। বন্ধ হয়েছে শব দাহ প্রক্রিয়া। পাশাপাশি এখানকার বিস্তীর্ণ এলাকায় কৃষিজমি জলমগ্ন হয়েছে। বহু কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।সমস্যায় পড়েছেন পর্যটক ও পুণ্যার্থীরা। ইতিমধ্যে জেলার ৯৯৫ জন বন্যা দুর্গত মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।